পুজো আসতে আর ঠিক মাসখানেক বাকি। হাতে সময় একেবারেই কম। প্রস্তুতি তুঙ্গে। পুজোর কেনাকাটা ইতিমধ্যেই শেষ করে ফেলেছেন কেউ কেউ। তবে কেবল ভাল পোশাক পরলেই তো আর হল না! ত্বকের জেল্লা না থাকলে যে সবই বৃথা। পুজোয় যতই মেকআপ করা হোক না কেন, ত্বক ভিতর থেকে সুস্থ না থাকলে জেল্লা কখনওই আসবে না, আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন রূপচর্চা সহায়ক ও রূপটানশিল্পী কেয়া শেঠ। তিনি বলেন, ‘‘পুজোয় সকলের নজর কাড়তে হলে প্রস্তুতি শুরু করে দিতে হবে এক মাস আগে থেকেই। পুজোর দু’দিন আগে সালোঁয় গিয়ে ফেসিয়াল করিয়ে, চুল কাটিয়ে, স্পা করিয়ে একেবারে নায়িকার মতো জেল্লাদার চুল ও ত্বক পেয়ে যাবেন, এই ধারণা ভুল। এখনও মাসখানেক দেরি আছে, বাড়িতে একটু সময় বার করে ত্বকের যত্ন নিলেই কিন্তু পাবেন ‘ন্যাচেরাল গ্লো’।’’
পুজোর এক মাস আগে থেকে কী ভাবে ত্বকের পরিচর্যা করবেন, তারই হদিস দিলেন কেয়া।
জেল্লা ফেরাবে ‘জাদু পানীয়’
ত্বক ভাল রাখতে গেলে বাইরে থেকে যতই প্রসাধনী মাখুন না কেন, শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি না থাকলে কোনও কাজই হবে না। ভিটামন সি আসলে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড। বিটা-ক্যারোটিনের পাশাপাশি ভিটামিন সি-ও ত্বকের কোলাজেন সিন্থেসিস প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যালের সমতা বজায় রাখতেও এই ভিটামিনের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে এবং ত্বককে টানটান রাখতেও ভিটামিন সি-র প্রয়োজন। কেয়া বলেন, ‘‘শরীরে ভিটামিন সি-এর ঘাটতি মেটাতে রোজ সকালে লেবু-জল খেতে হবে। তবে খুব বেশি গরম জলে লেবু মেশালে তার গুণ নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ঈষদুষ্ণ জল ব্যবহার করুন।’’
ট্যানের সমস্যা মোকাবিলায়
পুজোর আগে মুখের কালচে দাগছোপ দূর করতে নামিদামী সংস্থার প্রসাধনী ব্যবহার করতে হবে না। কেয়া বললেন, ‘‘ট্যান দূর করার জন্য মুলতানি মাটি, বিটের পাউডার, মধু আর দুধ দিয়ে একটি প্যাক বানিয়ে সপ্তাহে দু’তিন বার ব্যবহার করুন। মিনিট পনেরো প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন, ট্যানের সমস্যা দূর হবে। হাত-পায়ের ট্যান দূর করতেও এই প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।’’
পুজোর আগে জেল্লা ফেরাতে নানা প্রসাধনী ব্যবহার করলেও অনেকে ভুলে যান স্ক্রাবিংয়ের কথা। ছবি: সংগৃহীত।
স্ক্রাবিং ভীষণ জরুরি
পুজোর আগে জেল্লা ফেরাতে নানা প্রসাধনী ব্যবহার করলেও অনেকে ভুলে যান স্ক্রাবিংয়ের কথা। অথচ ত্বকের জেল্লা বাড়াতে স্ক্রাবিং ভীষণ জরুরি বলে মনে করালেন কেয়া। কেবল মুখেই নয়, সারা গায়ে করতে হবে স্ক্রাবিং। বাহারি প্রসাধনী নয়, ঘরোয়া উপাদানেই ফিরতে পারে ত্বকের জেল্লা। কেয়া বলেন, ‘’৫০ গ্রাম টকদই, ১ চা চামচ কস্তুরী হলুদ, ২ চা চামচ সজনেগুঁড়ো, ১ চা চামচ মুলতানি মাটি আর সামান্য মধু মিশিয়ে একটি প্যাক বানিয়ে নিন। প্যাকটি মুখ, গলা, হাত, পা যে কোনও জায়গায় মেখে খানিকটা শুকিয়ে গেলে ডাবের জল দিয়ে ভাল করে স্ক্রাব করুন। তার পর মিনিট দশেক রেখে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।’’
ব্রণ গায়েব করতে
ব্রণ কমাতে নিম কিন্তু দারুণ উপকারী। কেয়া বলেন, ‘‘ব্রণ দূর খরতে ২ চা চামচ নিমের গুঁড়ো, ১-২ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল আর সামান্য জল দিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ বানিয়ে নিন। যেখানে ব্রণ হয়েছে, শুধু মাত্র সেই স্থানগুলিতে ব্যবহার করুন প্যাকটি। দু’চার দিনেই ফল পাবেন হাতেনাতে। এ ছড়া যাঁরা সারা বছর ব্রণর সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা টোনার হিসাবে নিম ওয়াটার ব্যবহার করুন। যাঁরা কোনও ট্রিটমেন্টের কথা ভাবছেন, ব্রণ কমাতে তাঁরা পুজোর আগে দু’ বার হাইড্রা ফেশিয়াল করিয়ে নিতে পারেন।
ত্বকের শুষ্ক ভাব দূর করতে
সারা বছর যাঁদের ত্বক শুষ্ক থাকে, তাঁদের জন্য ছানা ভীষণ উপকারী, জানালেন কেয়া। ভাল করে ছানা ফেটিয়ে নিয়ে তার সঙ্গে মধু আর পাকা পেঁপে মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক বানিয়ে ফেলতে পারেন। শুষ্ক ত্বকে জেল্লা আনতে দারুণ কাজ করে এই প্যাক।
ত্বকের জেল্লা ধরে রাখতে হলে নিয়ম করে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। এক বার নয়, ত্বকে বার বার সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এর পাশাপাশি বেশি করে জল ও ফল খেতে হবে ত্বক ভাল রাখার জন্য। ডায়েটে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা কমিয়ে প্রোটিন বেশি করে খেতে হবে। সঙ্গে ত্বক ভাল রাখতে নিয়ম করে শরীরচর্চা কিংবা যোগাসন করাও জরুরি। এ ছাড়া রোজের ডায়েটে ডিটক্স ওয়াটার রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে চিয়া বীজ ভেজানো জল, শসাকুচি, লেবুর টুকরো, পুদিনাপাতা ভেজানো জল, গ্রিন টি, ডাবের জল ভাল বিকল্প হতে পারে।