নিত্যনতুন কেশসজ্জার শখ। আর তা করতে গিয়েই আপনার ঘরের বাতাস রাসায়নিকে ভরে উঠছে, তা কি জানেন? শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। হেয়ার স্টাইলিংয়ের জন্য ব্যবহৃত নানা সরঞ্জামের কারণে ঘরের বাতাস দূষিত হচ্ছে বলেই দাবি করেছেন গবেষকেরা। এই দূষণের পাল্লা এতটাই ভারী যে, যানবাহনের ধোঁয়ার চেয়ে তা আরও বেশি মারাত্মক।
কেশসজ্জার কারণে ঘরের দূষণ বাড়ছে, কী ভাবে তা সম্ভব?
প্রায়শই চুল স্ট্রেট করার অভ্যাস? নিজের কোঁকড়া বা ঢেউখেলানো চুল অপছন্দ অথবা মাঝেমধ্যে সাজ বদলানোর শখ— যা-ই হোক না কেন, বাড়িতে কিনে রাখা হেয়ার স্ট্রেটনার যন্ত্রের ব্যবহার হয় প্রায় রোজ। তা ছাড়া হেয়ার ড্রায়ার তো আছেই। নানা রকম কার্লিং আয়রনও বেরিয়ে গিয়েছে। অতএব চুলের সাজ বদলাতে এখনকার প্রজন্ম এই সব যন্ত্রপাতির উপরেই নির্ভর করছে। আর তা করতে গিয়েই বিপদ ঘনাচ্ছে। এই সব যন্ত্রপাতি অতিরিক্ত তাপ তৈরি করে। আর তা থেকেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ন্যানোপার্টিকলের জন্ম হয়। সেই সব কণা ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে।
আরও পড়ুন:
আমেরিকার পারডু ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা এই পরীক্ষাটি করে দেখেছেন। কেশসজ্জার সরঞ্জামের কারণে কী ভাবে দূষিত কণার জন্ম হচ্ছে এবং তা বাতাসে মিশছে, সে সংক্রান্ত বিষয়ে একটি গবেষণাপত্রও প্রকাশিত হয়েছে ‘এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ জার্নালে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, হেয়ার স্ট্রেটনার দিয়ে চুল স্ট্রেট করার সময়ে বা হেয়ার ড্রায়ারে চুল শুকনোর সময়ে, যে অতিরিক্ত তাপ তৈরি হয় তা যেমন চুলের ক্ষতি করছে, তেমনই রাসায়নিক কণার জন্মও হচ্ছে। ভেজা চুলে তাপ প্রয়োগ করলে চুলের ভিতরে থাকা জল বাষ্পে পরিণত হয়। এই বাষ্পে ভর করেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাসায়নিক কণা তৈরি হয়। এই সব কণায় মিশে থাকে সিলিকনের মতো যৌগ। প্রতি বার ব্যবহারের পর ৫০০ ন্যানোমিটারের কম আয়তনের হাজার হাজার দূষিত কণা মিশে যায় চারপাশের বাতাসে। শুধু তা-ই নয়, এই কণাগুলি শ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসেও ঢোকে এবং রক্তে গিয়ে মেশে। হেয়ার স্ট্রেটনার বা কার্লিং আয়রন থেকেও একই রকম সিলিকন যৌগ বার হয়।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, একটি ১০ থেকে ২০ মিনিটের হেয়ার স্টাইলিং সেশনের সময় যে পরিমাণ ক্ষতিকর কণা তৈরি হয়, তা ব্যস্ত রাস্তায় যানবাহনের ধোঁয়ার মতোই বিপজ্জনক হতে পারে। গবেষকেরা আরও জানাচ্ছেন, যন্ত্রপাতিগুলির তাপ যদি ৩০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়, তা হলে কেবল রাসায়নিক কণা তৈরিই হয় না, সেগুলি আশপাশের বাতাসে মিশে গিয়ে বাতাসের ধূলিকণা, গ্যাসের সঙ্গে বিক্রিয়া করে নতুন রাসায়নিকও তৈরি করে ফেলে। এই কণাগুলি এতটাই সূক্ষ্ম যে, শ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে ঢুকে কোষের ক্ষতি করে। দীর্ঘ সময় ধরে ফুসফুস বা শ্বাসনালিতে জমা হলে তা থেকে জটিল রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে বলে দাবি গবেষকদের।