Advertisement
E-Paper

ট্রাম্পের নৈশভোজের আসরে জামেওয়ার শাড়ি পরে চমকে দিলেন নীতা! কী এই জামেওয়ার?

জামেওয়ার কাশ্মীরের এক প্রকার সূচিকর্মের নাম। যার জন্ম পারস্যে। সেখান থেকেই প্রায় ৫০০ বছর আগে কাশ্মীরে এসেছিল জামেওয়ারের সূচিশিল্প। মোগল জমানায় জামেওয়ারের বিস্তার। শোনা যায়, সম্রাট আকবরের পৃষ্ঠপোষকতায় কাশ্মীরের দক্ষতম সীবনশিল্পীরা জামেওয়ার বোনায় মন দিয়েছিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:২২
ওয়াশিংটনে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নৈশভোজের আসরে নীতা অম্বানী।

ওয়াশিংটনে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নৈশভোজের আসরে নীতা অম্বানী। ছবি : ইনস্টাগ্রাম।

ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ অম্বানী এবং তাঁর স্ত্রী নীতা অম্বানী আমন্ত্রিত ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের নৈশভোজের আসরে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুবাদে দুনিয়ার বহু খ্যাতনামীকেই ডিনারে ডেকেছিলেন ট্রাম্প। সঙ্গী অথবা সঙ্গিনীদের নিয়ে তাঁরা হাজিরও হয়েছিলেন ওয়াশিংটনে। প্রেসিডেন্টের অতিথি বলে কথা! নৈশভোজের জন্য সেরা পোশাকটি বেছে নিয়েছিলেন সকলেই। অধিকাংশ মহিলা এবং পুরুষের পরনেই ছিল পশ্চিমি কেতার পোশাক। নীতা কিন্তু সেখানে গিয়েছিলেন শাড়ি পরে। সেই শাড়িও যেমন-তেমন নয়, খাঁটি কাশ্মীরি জামেওয়ার কারুকাজের শাড়ি! সে শাড়ির দাম কোটিতে হলেও আশ্চর্যের কিছু নেই।

ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

জামেওয়ার কাশ্মীরের এক প্রকার সূচিকর্মের নাম। যার জন্ম পারস্যে। সেখান থেকেই প্রায় ৫০০ বছর আগে কাশ্মীরে এসেছিল জামেওয়ারের সূচিশিল্প। সূক্ষ্ম সুতোর ওই ঠাসবুনটের নিখুঁত কাজে বাহার যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে আভিজাত্য। মোগল জমানায় জামেওয়ারের বিস্তার। শোনা যায়, সম্রাট আকবরের পৃষ্ঠপোষকতায় কাশ্মীরের দক্ষতম সীবনশিল্পীরা জামেওয়ার বোনায় মন দিয়েছিলেন। খাঁটি জামেওয়ার বোনা হয় পশমিনা শাল অথবা রেশমের উপর। কিন্তু সমস্যা হল, এক-একটি শাল বুনতেও বছরের পর বছর কেটে যায়। এমন বহু জামেওয়ারের কাজ হয়েছে, যা শেষ হতে দশক পেরিয়েছে। হয়তো দেখা গিয়েছে, যিনি শুরু করেছিলেন, তিনি শেষ করতে পারেননি। তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম সেই কাজ শেষ করেছে। সেই বিপুল সময় আর সেই নিখুঁত কাজের দামেই বরাবর মহার্ঘ হয়েছে জামেওয়ার। যা একমাত্র রাজপুরুষ কিংবা খানদানি পরিবারের মানুষজনই কেনার সামর্থ্য রয়েছে। তাঁদেরই কাঁধের শোভা বৃদ্ধি করত কাশ্মীরের সূচিশিল্প।

ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

সাধারণের নাগালের বাইরে থাকলেও জামেওয়ারের কারুকাজ একটা সময় এতটাই জনপ্রিয় হয় যে, বেনারসি শাড়ির তাঁতিরাও তাঁদের শাড়িতে জামেওয়ার অনুপ্রাণিত নকশা বোনা শুরু করেন। তৈরি হয় বেনারসি ব্রোকেড। কিন্তু দামের জন্য হোক বা দীর্ঘমেয়াদি বয়নের জন্যই হোক, ফ্যাশনে খাঁটি জামেওয়ারের বহুল ব্যবহার কখনওই হয়নি। গত অগস্টে সেই জামেওয়ারকেই নিজের শরৎকালীন সম্ভারে একটু অন্য আধারে নিয়ে আসেন পোশাকশিল্পী তরুণ তেহলানি। জামেওয়ারের কাজের সঙ্গে মিশিয়ে দেন সমকালীন ভাবনা। ট্রাম্পের নৈশভোজের আসরে নীতা যে শাড়িটি পরেছেন, তা তরুণের ওই শারদ সম্ভারেরই একটি।

ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

কালো সিল্কের উপরে জামেওয়ারের কাজ করেছেন কাশ্মীরের শিল্পীরা। তার পর সেই শাড়িটির বিভিন্ন অংশ হাতে আঁকা হয়েছে। তার পরে সেই শাড়িকে প্রিন্ট করানো হয়েছে এবং শেষে আবার তাতে আড়ি কাজ এবং কাশিদাকারি কাজ করিয়েছেন তরুণ। আড়ির কাজ মূলত গুজরাত-রাজস্থানের সূচিশিল্প হলেও ওই শিল্পের শিল্পীরা রয়েছেন কাশ্মীরেও। আবার কাশিদাকারিও পঞ্জাব, বিহার, হিমাচলের পাশাপাশি কাশ্মীরে বিখ্যাত। কাশ্মীরি ফিরান, শালে আকছার কাশিদাকারির কাজ দেখা যায়, দেখা যায় আড়ির কাজও। সুদূর আমেরিকায় নৈশভোজের সাজে সেই কাশ্মীরেরই সূচিশিল্পের শাহি প্রদর্শন ঘটালেন নীতা।

ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

নীতার ছবি দিয়ে ইনস্টাগ্রামে পোশাকশিল্পী তরুণ জানিয়েছেন, নীতার শাড়ির জামেওয়ার কাজটুকুই করতে সময় লেগেছে ১৯০০ ঘণ্টা। অর্থাৎ, টানা ২৪ ঘণ্টা এক বারও না থেমে কাজ করলেও অন্তত ৭৯ দিন। কিন্তু না খেয়ে, না ঘুমিয়ে সে ভাবে কাজ করা অসম্ভব, তাই কাজটি শেষ করতে যে আরও বেশি সময় লেগেছে, তা স্পষ্ট। নীতা ওই শাড়িটি পরেছেন নকশাকাটা কলারের কনুইছোঁয়া হাতার ব্লাউজ় দিয়ে। সেই ব্লাউজ়েও সূক্ষ্ম কাশিদাকারী কাজ।

তরুণ নীতার শাড়ির কথা বলতে গিয়ে লিখেছেন, ‘‘নীতা বরাবরই ভারতের সূক্ষ্ম এবং উঁচুদরের শিল্পের কদর করেন। নীতার নিজের সংগ্রহেও বহু জামেওয়ার রয়েছে। তবে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের নৈশভোজের আসরের জন্য নীতা যে জামেওয়ার শাড়িটি বেছেছেন, তাতে আধুনিকতাকে ছুঁয়ে থেকেও ভারতীয় পরম্পরাকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়েছেন তিনি।’’

Jamawar Jamewar Jamewar Saree Jamawar Shawl Pashmina shawl Nita Ambani Mukesh Ambani Tarun Tahiliani
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy