সামনেই অগ্রহায়ণ মাস। বিয়ের প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। হাজার একটা কাজের দায়িত্ব সামলে ত্বকের যত্ন নিচ্ছেন। মাসে এক বার ফেশিয়ালও করাচ্ছেন। তাতে কি লাভ কিছু হচ্ছে? ত্বকের জেল্লা ধরে রাখতে ঠিক কী ভাবে, কত দিন আগে থেকে যত্ন নেওয়া প্রয়োজন, তা জানা আছে? বিয়ের জন্য ত্বকের যত্ন নেওয়া শুরু করা উচিত প্রায় বছরখানেক আগে থেকে। ত্বকে যদি গুরুতর কোনও সমস্যা থাকে, তা হলে সারতে সময় লাগবেই। তবে সকলের হাতে এত সময় থাকে না। সে ক্ষেত্রে মাস ছয়েক বা মাস তিনেক আগে থেকেও তা শুরু করা যায়।
যাঁদের ত্বকে বিশেষ কোনও সমস্যা নেই, তাঁরা বাড়িতে প্রাকৃতিক উপাদানে ত্বকচর্চা করতে পারেন। ত্বকের সাধারণ পরিচর্যা রোজ করতেই হবে। অনেকেই হয়তো ‘সিটিএম’ অর্থাৎ ক্লিনজ়ার, টোনার এবং ময়েশ্চারাইজ়িং-এর উপর জোর দেবেন। দিনে এবং রাতে দু’বারই ‘সিএমএস’ করার কথা মাথায় রাখতে হবে হবু কনেদের। বাড়িতে রূপচর্চা করতে গিয়ে অনেকেই কিছু মারাত্মক ভুল করে বসেন। পরে আফসোস না করে জেনে নিন, বিয়ের আগে রূপচর্চায় কোন ভুলগুলি এড়িয়ে চলবেন।
১) নতুন নতুন প্রসাধনীর ব্যবহার: ত্বক পরিচর্যার জন্য বাজারে নিত্য দিন নতুন নতুন প্রসাধনী আসতেই থাকে। সেই সব প্রসাধনীর বাহারি বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে অনেকেই সেইগুলি কিনে ফেলে মাখতে শুরু করেন। চটজলদি জেল্লা ফিরে পেতে, ট্যান দূর করতে, ব্রণ কমাতে অনেকেই বিয়ের ঠিক আগে আগে নতুন নতুন প্রসাধনী মাখতে শুরু করেন। এর ফল কখনও কখনও হয় মারাত্মক। কারও ত্বক পুড়ে যায়, কারও গালভর্তি র্যাশ বেরিয়ে যায়। তাই বিয়ের ৪-৬ সপ্তাহ আগে ত্বকের সঙ্গে কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা ঠিক নয়। ত্বকের বড় কোনও সমস্যা হলে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়াও মাস খানেক আগে নয়, প্রায় বছর খানেক আগে শুরু করতে হবে। সুগন্ধীযুক্ত কোনও মেকআপ বা ত্বক পরিচর্যার প্রসাধনীও এড়িয়ে চলুন।
২) সানস্ক্রিন ব্যবহার: ত্বক পরিচর্যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রসাধনী হল সানস্ক্রিন। চিকিৎসকদের মতে, শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা— যে কোনও মরসুমেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। কেবল বাইরে বেরোলে নয়, বাড়িতে থাকলেও সানস্ক্রিন মাখতে হবে হবু কনেদের। সানস্ক্রিন কেবল ট্যান পড়ার হাত থেকে রেহাই দেয় এমনটা নয়, সূর্যের অতিবেগনি রশ্মি ইউভিএ (আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি এ) এবং ইউভিবি (আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি বি)-র ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করাই সানস্ক্রিনের মূল কাজ। বিয়েতে উজ্জ্বল ত্বক চাইলে এই প্রসাধনীটি নিয়মিত ব্যবহার করতেই হবে।
সমাজমাধ্যমে দেখে অনেকেই ত্বকে নানা রকম টোটকা প্রয়োগ করেন। ছবি: সংগৃহীত।
৩) মেকআপ না তুলে ঘুমিয়ে পড়া: মেকআপ করার সময়ে যতটা ধৈর্য থাকে, তোলার সময়ে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে। আবার, পছন্দের লিপস্টিকে রাঙানো ঠোঁট কিংবা সুন্দর করে আঁকা চোখের মায়াও সহজে ত্যাগ করতে পারেন না অনেকে। দাম দিয়ে কেনা নামী সংস্থার প্রসাধনী নিরাপদ ভেবে অনেকেই তা মুখ থেকে পরিষ্কার না করেই ঘুমিয়ে পড়েন। বিয়ের আগে এ রকম ভুলের ফলে ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ত্বকের উপর সারা রাত মেকআপের পরত থাকলে ত্বক ঠিক ভাবে শ্বাস নিতে পারে না। মৃত কোষের পরতও পুরু হতে থাকে। ফলে ত্বক জেল্লা হারায়। এ ছাড়া ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনের প্রক্রিয়াও শ্লথ হয়ে যায়। তাই যতই ক্লান্ত থাকুন, মেকআপ তুলে তবেই ঘুমোতে যাওয়ার অভ্যাস শুরু করুন।
৪) সতর্ক না হয়ে ঘরোয়া টোটকার প্রয়োগ: সমাজমাধ্যমে দেখে অনেকেই ত্বকে নানা রকম টোটকা প্রয়োগ করেন। সব টোটকা যে সবার ত্বকে সমান কাজ করবে এমনটা নয়, তাই নেটপ্রভাবীদের অনুকরণ করা বন্ধ করুন। বিয়ের মাস খানেক আগে ত্বকে কোনও নতুন টোটকার প্রয়োগ না করাই ভাল। ত্বক পরিচর্চার ক্ষেত্রে বছরের পর বছর ধরে যে টোটকা কাজ করেছে, সেগুলি ব্যবহার করতেই পারেন।
৫) ঘুম পুরো না করা: বিয়ের আগে মাথায় হাজার রকম চিন্তা থাকে। কাজেরও অনেক রকম চাপ থাকে। তবে সেই সব কারণে ঘুমের সঙ্গে আপস করলে চলবে না। ঘুমে ঘাটতি হলে সবার আগে তার প্রভাব লক্ষ করা যায় ত্বকে। বিয়ের আগে চোখের তলার কালি, বলিরেখা এড়াতে চাইলে রাতে অনন্ত ৭-৮ ঘণ্টার ঘুম প্রয়োজন।