Advertisement
E-Paper

শপথের শাড়িতে সোনার জল করা রুপোর জরি! পরিবারের প্রথা ভাঙলেন কি প্রিয়ঙ্কা?

কাসাভু শাড়িকে কেরলে মনে করা হয় সমৃদ্ধির প্রতীক। ইতিহাস বলছে, গ্রিক এবং রোমান রাজপুরুষদের পোশাক দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই তৈরি করা হয়েছিল সোনালি পাড়ের শ্বেত বস্ত্র। সাদাকে মনে করা হত সারল্যের প্রতীক। আর সোনালি ধন-সম্পদ-ঐশ্বর্যের।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ২০:৩১
বৃহস্পতিবার প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা শপথ নিলেন সংসদে। তাঁর পরনে ছিল কেরলের ঐতিহ্যবাহী কাসাভু শাড়ি।

বৃহস্পতিবার প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা শপথ নিলেন সংসদে। তাঁর পরনে ছিল কেরলের ঐতিহ্যবাহী কাসাভু শাড়ি। ছবি: পিটিআই।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী হাতে বোনা খাদির শাড়ি পরতেন। তাঁর পুত্র প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী পরতেন খাদির সাদা পাজামা-কুর্তা। বৃহস্পতিবার ইন্দিরার পৌত্রী এবং রাজীবের কন্যা প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢ়রা সাংসদ হিসাবে শপথ গ্রহণ করলেন কেরলের তাঁতিদের বোনা সোনালি পাড় আর সাদা জমির কাসাভু শাড়ি পরে। যে শাড়ির পাড় বোনা হয় সোনার জল করা রুপোর সুতো দিয়ে।

কাসাভু শাড়িকে কেরলে মনে করা হয় সমৃদ্ধির প্রতীক। ইতিহাস বলছে, কাসাভুর জন্ম বৌদ্ধযুগে। সে কালে গ্রিক এবং রোমান রাজপুরুষদের পোশাক দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই তৈরি করা হয়েছিল সোনালি পাড়ের শ্বেত বস্ত্র। সাদাকে মনে করা হত সারল্যের প্রতীক, আর সোনালি ধন-সম্পদ-ঐশ্বর্যের।

সংবিধান হাতে নিয়ে শপথ পাঠ করছেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা।

সংবিধান হাতে নিয়ে শপথ পাঠ করছেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা। ছবি: পিটিআই।

সোনা-রুপোর জরি দিয়ে ওই শাড়ি এবং ধুতি এক কালে বোনা হত রাজরাজড়াদের জন্যই। কেরলের মহারাজা-মহারানি ছাড়া সমাজের উচ্চবংশীয় এবং অভিজাতরাই ওই শাড়ি পরতে পারতেন। বস্তুত, একটা সময়ে মনে করা হত, সোনার জরিতে বোনা ওই শাড়ি সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে আসে। সোনার জরি বোনা কাসাভু কেরলে তখন ছিল আভিজাত্যের প্রতীক।

কালক্রমে অবশ্য সেই শাড়ি সাধারণের নাগালে এসেছে। সোনা-রুপোর জরির পাশাপাশি রঙিন সুতোর সাধারণ জরি দিয়েও বোনা হয় কাসাভু। সিল্ক এবং সুতো— দু’রকম শাড়িতেই কাসাভু পাড় বোনা হয়। যার দাম ৩০০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে পৌঁছতে পারে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত। সবটাই নির্ভর করে জরির মানের উপর।

স্বামী রবার্ট বঢরার সঙ্গে সংসদ চত্বরে প্রিয়ঙ্কা।

স্বামী রবার্ট বঢরার সঙ্গে সংসদ চত্বরে প্রিয়ঙ্কা। ছবি: পিটিআই।

কাসাভু শাড়ি বোনার মূলত তিনটি ক্লাস্টার রয়েছে কেরলে— বলরামাপুরম, চেন্দামঙ্গলম এবং কুঠামপল্লি। তিনটি ক্লাস্টারই কাসাভু তৈরিতে ভারত সরকারের খাঁটিত্বের শংসাপত্র জিয়োগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন ট্যাগ (জিআই ট্যাগ) পেয়েছে। এদের মধ্যে বলরামাপুরমের জরি আর সুতোর দু’য়েরই কদর বেশি। কারণ সেখানে খাঁটি সোনার জল করা রুপোর সুতো দিয়েই বোনা হয় কাসাভুর পাড়। সুতোয় ব্যবহার করা হয় ১২০ কাউন্টের। চেন্দামঙ্গলমের জরির মানকে বলা হয় ‘হাফ পিওর’ বা ‘হাফ ফাইন’। অর্থাৎ পুরোপুরি খাঁটি নয়। আবার নকলও নয়। এখানে সুতোও ব্যবহার হয় ৮০ থেকে ১০০ কাউন্টের। চেন্দামঙ্গলমের আরও একটি বিশেষত্ব হল এরা শাড়িতে খুব বেশি নকশা করে না। কুঠামপল্লির শাড়িতে আবার থাকে বিভিন্ন রকম নকশা। পাড়ের নকশার পাশাপাশি শাড়ির জমিতেও সোনালি সুতোয় বোনা নর্তকী বা পশুপাখি বা ফুলের নকশা থাকে। প্রিয়ঙ্কার শাড়িতে অবশ্য কোনও নকশা ছিল না। সুতির সাদা জমিতে চওড়া সোনালি পাড় দেওয়া শাড়ি পরেছিলেন রাজীবের কন্যা।

মা সনিয়া গান্ধী এবং দাদা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে প্রিয়ঙ্কা।

মা সনিয়া গান্ধী এবং দাদা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে প্রিয়ঙ্কা। ছবি: পিটিআই।

সক্রিয় রাজনীতিতে পাঁচ বছর কাটিয়ে ফেললেও সংসদীয় রাজনীতিতে এই প্রথম পদার্পণ প্রিয়ঙ্কার। শুরুতেই বড় ভোটে জিতে রেকর্ড গড়েছেন। কেরলের ওয়েনাড় লোকসভা কেন্দ্রে তাঁর সবচেয়ে কাছের প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে তাঁর প্রাপ্ত ভোটের ফারাক ছিল চার লক্ষেরও বেশি। স্বভাবতই তাঁকে ঘিরে কেরলের মানুষের আশাও বেড়েছে। আশা, সংসদে দাদা রাহুল গান্ধী এবং মা সনিয়া গান্ধীর হাত শক্ত করবেন তিনি। সাংসদ হিসাবে প্রথম দিনের পোশাকে রাজ্যের সংস্কৃতিকে তুলে ধরে নিজের ভোটারদের বিশেষ বার্তাও দিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা। তবুও অনেকের মনে প্রশ্ন, নিজের কেন্দ্রের সংস্কৃতিকে কতটা ভাল ভাবে জানেন প্রিয়ঙ্কা? বিশেষ করে গান্ধীরা যেখানে পরিধানে অনাড়ম্বরকেই বরাবর গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন, সেখানে প্রিয়ঙ্কার পোশাক চয়ন পরোক্ষে আড়ম্বরের কথাই কি বলল না ? তবে রাজনীতিকদের ক্ষেত্রে প্রশ্ন ও বিতর্ক তো উঠেই থাকে।

Priyanka Gandhi Vadra Kasavu saree
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy