বর্ষাকাল মানেই চারিদিকে জল থই থই অবস্থা। অবিরাম বৃষ্টির মধ্যে কোথাও বেরোতে গেলে পাঁচ বার ভাবতে হয়। ছাতা বা বর্ষাতি ছাড়া তো বেরোনোই যাচ্ছে না। বৃষ্টির দিনে জরুরি কাগজপত্র নিয়ে বেরোতেও সমস্যা হয়, ভিজে যাওয়ার ভয় থাকে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন সামগ্রী এসেছে বাজারে। ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগ, পকেট ছাতা, পাউচ রেনকোট, জুতোর কভার... এ সবই ছোটখাটো জিনিস, কিন্তু খুবই জরুরি। এই মরসুমের সঙ্গী হতে পারে এমন কিছু জিনিসের সন্ধান রইল—
বল রেনকোট
বর্ষাতির সবচেয়ে বড় সমস্যা হল ব্যাগের অনেকটা জায়গা দখল করে নেয়। এ ক্ষেত্রে পকেট রেনকোট হতে পারে মুশকিল আসান। এই রেনকোট এতটাই ছোট যে ব্যাগ বা পার্সের মধ্যে অনায়াসে এঁটে যায় এবং খুবই হালকা। এটা দেখতে ছোট হলেও, খোলার পরে সম্পূর্ণ বর্ষাতির আকার নেয়। রেনকোটের সঙ্গে একটা টুপি থাকে, যাতে মাথাও বাঁচে বৃষ্টির জল থেকে। ছোট পাউচ বা বলের মধ্যেই এই ধরনের বর্ষাতি পাওয়া যায়। তাই এগুলোকে বল রেনকোটও বলা হয়। বাচ্চাদের জন্য এই ধরনের বর্ষাতি খুব উপযোগী। স্কুলের ব্যাগের মধ্যে সহজেই ঢুকে যাবে, ব্যাগ ভারীও হবে না।
জুতোর কভার
বৃষ্টির দিনে ভিজে যাওয়ার ভয়ে নতুন জুতো বা চামড়ার জুতো পরতে দ্বিধা বোধ করেন অনেকেই। কিন্তু শু গার্ড ব্যবহার করলে জুতো রক্ষা পাবে। জুতোর কভারগুলি মূলত সিলিকন বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হয়। কিছু কভার এক বার ব্যবহার করা যায়, কিছু আবার বেশ কয়েক বার। বৃষ্টির দিনে বাচ্চা স্কুলে যাওয়ার সময়ে এটা পরিয়ে দিতে পারেন। পরে খুলে ফেলতেও পারবে, জুতোও ভিজবে না। এ জিনিস অনলাইনেই পেয়ে যাবেন।
জ়িপলক পাউচ
বর্ষায় গুরুত্বপূর্ণ নথি বা কাগজপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য জ়িপলক পাউচ ব্যবহার করতে পারেন। নানা আকারের পাউচ ব্যাগ পাওয়া যায়। ফোনের জন্যও ওয়াটারপ্রুফ পাউচ ব্যবহার করা যায়। ফোনে জল ঢুকে গেলে বেজায় গোলমাল হয়। অনেক সংস্থাই দাবি করে তাদের ফোন ওয়াটার রেজ়িস্ট্যান্স, কিন্তু তার পরেও আশঙ্কা থেকেই যায়। ওয়াটারপ্রুফ পাউচগুলো মোটা প্লাস্টিক, সিলিকন দিয়ে তৈরি, তাই জল ঢুকে যাওয়ার সমস্যা নেই। ফোনের জন্য ট্রান্সপারেন্ট পাউচ কিনতে পারেন। এই পাউচে টাচ স্ত্রিনেও সমস্যা হবে না। বৃষ্টির জল যাতে ব্যাগ না ভিজিয়ে দেয়, তার জন্য ব্যাগপ্যাকের কভারও পাওয়া যায়। ল্যাপটপ ব্যাগ, স্কুল ব্যাগের জন্য এগুলি কিনে রাখতে পারেন।
হেলমেট ওয়াইপার
বাইক বা স্কুটি চালকদের বৃষ্টির সময়ে প্রবল সমস্যা হয়। হেলমেটের কাচে জল জমে সামনের বস্তু ঝাপসা দেখায়। বাইক চালাতে গিয়ে বারবার জল মোছাও সম্ভব হয় না। এই অসুবিধে থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করা যেতে পারে হেলমেট ওয়াইপার। চার চাকায় যেমন কাচের জল সরাতে ওয়াইপার সহায়ক, এখানেও হেলমেট ওয়াইপার ঠিক একই ভাবে কাচ থেকে জল সরানোর কাজ করে। এটি হেলমেটের কাচের ঠিক উপরে আটকাতে হয়। এই যন্ত্রের সঙ্গে থাকা একটি সুইচ টিপে জল পরিষ্কার করা যায়। এটি রিচার্জেবল ব্যাটারির মাধ্যমে চালিত হয়।
রেন রিপেলেন্ট স্প্রে
বৃষ্টির সময়ে হেলমেটের কাচে যাতে জল না ধরে, তার জন্য এই রেন রিপেলেন্ট স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই স্প্রে হেলমেটের কাচে দিয়ে কিছুক্ষণ (১০-২০ সেকেন্ড) অপেক্ষা করতে হবে। এর পরে স্প্রে-র সঙ্গে থাকা মোছার কাপড়টি দিয়ে কাচ আলতো করে মুছে নিতে হবে। এর পরে যতই বৃষ্টির জল লাগুক না কেন, তা আর কোন ভাবেই কাচে আটকে থাকবে না। গাড়ির কাচেও এই স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন।
বাইকের ছাউনি
বৃষ্টিতে বর্ষাতি পরেও বাইক চালাতে সমস্যা হয়। বৃষ্টির ছাঁটে অসুবিধে হয়। বাইক ক্যানোপি বা ছাউনি থাকলে, আর কোনও ভাবেই বৃষ্টিতে ভেজার ভয় থাকবে না। এটি মোটা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি এক ধরনের ছাউনি যা রোদ এবং বৃষ্টির হাত থেকে বাইক, স্কুটি আরোহীকে স্বস্তি দেয়। যেহেতু জিনিসটি হালকা হয়, তাই খুব ঝোড়ো হাওয়া দিলে এতে কাজ হবে না।
ছাতা টুপি
দেখতে ছাতা হলেও, এটি আসলে টুপি। অনেক সময়েই হাতভর্তি জিনিস থাকলে ছাতা ধরতে সমস্যা হয়। সেই সমস্যার সমাধান করতে এই ধরনের আমব্রেলা ক্যাপ সহায়ক। এই ছাতাগুলি মাথায় টুপির মতো পরতে হয়। এর সঙ্গে একটি ইলাস্টিক জাতীয় জিনিস থাকে, যা মাথার সঙ্গে সহজেই আটকানো যায়। পকেট ছাতাও এখন খুব ট্রেন্ডিং। এটি এতটাই ছোট ও হালকা হয় যে পকেটের মধ্যেও নিয়ে যাওয়া যায়।
এই সব জিনিস এমনি দোকানে যেমন পাবেন, তেমনই অনলাইনেও পেয়ে যাবেন। দামও মোটামুটি সাধ্যের মধ্যেই। অতএব বর্ষাকে আর ভয় নয়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)