রাজনীতির মঞ্চে কি সাজের গুরুত্ব আছে? অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদেরা বলবেন, আছে। কারণ দুনিয়াটাই দর্শনধারী। সেখানে গুণ পরে বিচার করা হয়, আগে চোখে দেখেন মানুষ। কথা শোনার আগেই পোশাক-পরিচ্ছদ-হাবভাব দেখে একটা ধারণা তৈরি করে নেন। তাই তো বেশির ভাগ বড় নেতাকেই তাঁদের সাজে চেনেন মানুষ। গান্ধীজির ধুতি-চাদর থেকে শুরু করে জওহরলাল নেহরুর টুপি- জওহরকোট, ইন্দিরা গান্ধীর তাঁতের শাড়ি-চুলের ফ্যাশন, রাজীব গান্ধীর কুর্তা-পাজামার সঙ্গে স্নিকার্স, মনমোহন সিংহের নীল পাগড়ি এমনকি নরেন্দ্র মোদীর কুর্তা— সবই বৈগ্রহিক। প্রত্যেকটি পরিচ্ছদের একটি আলাদা উপস্থিতি রয়েছে। তার প্রভাব রয়েছে রাজনীতিতেও।
২১ জুলাই বাংলার শাসকদল তৃণমূলের অন্যতম বড় সমাবেশ বসে ধর্মতলায়। রাজনীতির আঙিনায় এই সভার আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। তাই সেই মঞ্চে নেতা-নেত্রী এবং দলের সঙ্গে নানা ভাবে যুক্ত তারকা সমর্থকেরা কেমন সাজলেন, গুরুত্ব রয়েছে তারও।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
২১ জুলাইয়ের মঞ্চে তিনিই আসল তারকা। তাঁকে দেখতে, তাঁর কথা শুনতেই ধর্মতলার মঞ্চের সামনে লাখো জনতার ভিড়। আর কথা যদি হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেত্রীকে নিয়ে, তবে তাঁর ব্যক্তিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ তাঁর সাজ তো বটেই। সে যতই নামমাত্র সাজ হোক না কেন! গোটা দুনিয়া সাদা শাড়ি আর হাওয়াই চটি পরা মহিলা রাজনীতিবিদ বললে তাঁকেই চেনেন। ২১ জুলাই তাঁর দলের একটি বড় সভা। সোমবার সেই সভার মঞ্চে তাঁকে দেখা গেল তাঁর প্রিয় রংমিলন্তি নীল-সাদায়।
ইঞ্চিপাড়ের একটি দুধ সাদা তাঁতের শাড়ি পরেছিলেন মমতা। পাড়ে সূক্ষ্ম বুননের দো-রঙা কলকা। অবশ্যই দু’টি রংই নীল। একটি গাঢ়, একটি উজ্জ্বল তুঁতে। যে রং দেখা যায় তাঁর বহু সরকারি দফতরের গায়েও। আঁচলে ওই দুই রঙেরই ডুরে। সাদা জমি নকশাহীন। পায়ে চিরচেনা সাদা চটি। হাতে সাদা ব্যান্ডের স্মার্টওয়াচ। তবে তৃণমূলের সবুজের ছোঁয়া একেবারে ছিল না, তা নয়। গলায় জড়ানো তাঁতের সাদা স্কার্ফটিতে ছিল ফিতে সবুজ পাড়।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
পুজো-পার্বণে তাঁকে ডিজ়াইনার পোশাকেও দেখা যায়। কিংবা বেড়াতে গেলে কেতাদুরস্ত স্ট্রেচেব্ল শার্টে। আবার বিদেশে দেশের প্রতিনিধি হিসাবে গিয়ে স্যুট-জওহরকোটও পরতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অর্থাৎ তিনি যস্মিন দেশে যদাচারে বিশ্বাসী। তবে তাঁর রাজনীতির মঞ্চেরও একটি সাজও আছে, যা তিনি গত কয়েক বছরে তৈরি করেছেন। পাটভাঙা সাদা শার্ট আর গাঢ় রঙের ট্রাউজ়ার্স। সঙ্গে পায়ে যে কোনও স্যান্ডাল অথবা হাঁটাহাঁটির দরকার পড়লে স্নিকার্স। এর উপর কখনও- সখনও রঙিন স্কার্ফ জড়িয়ে নেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সোমবারের মঞ্চেও তাঁকে রাজনৈতিক সভার চেনা সাজেই দেখা গেল। সাদা শার্ট, গাঢ় ছাইরঙা ট্রাউজ়ার্স এবং কালো মাথা-ঢাকা স্যান্ডালে। তবে তাঁর পিসি তথা দলনেত্রীর মমতার মতো গলায় স্কার্ফ জড়াননি।
মহুয়া মৈত্র
তৃণমূলের মঞ্চে নেতা-নেত্রীদের সাজগোজ নিয়ে যদি কথা বলতে হয়, তবে তা মহুয়া মৈত্রকে বাদ দিয়ে তা সম্ভব নয়। তারকাদের সাজ নিয়ে যেমন আলোচনা হয়, তেমন মহুয়া কী পরলেন-না পরলেন, সে দিকেও নজর থাকে অনেকের। দলের অন্যতম বড় সমাবেশে মহুয়া পরেছিলেন হালকা গোলাপি তাঁতের শাড়ি। তাতে সবুজ বুটি এবং একই রঙের ইঞ্চি পাড়। এর সঙ্গে কপালে লাল টিপ আর চোখে তাঁর আইকনিক বড় রোদচশমা।
দেব
তৃণমূলের নেত্রীরা যেমনই সাজুন, নেতাদের অধিকাংশই ২১ জুলাইয়ের সভাস্থলে হাজির হয়েছিলেন সমুদ্র-সবুজরঙা পাঞ্জাবি পরে। দেব অবশ্য এলেন কালো শার্ট আর নীল ফেডেড জিন্সে। পোশাকে সবুজ না থাকলেও তাঁর পায়ে ছিল সাদা-নীল স্নিকার্স।
সায়নী ঘোষ
সবুজ বা নীল-সাদা— কোনওটিই পরেননি যাদবপুরের সাংসদ সায়নী ঘোষ। তাঁকে দেখা গেল সাদা কোরা রঙের লাল ডুরে পাড় তাঁতের শাড়িতে। আঁচলে লাল সুতোর জ্যামিতিক নকশা। শাড়িতেও ছোট ছোট লাল বুটি। রাজনীতিতে আসার পর থেকেই মাথায় চুড়ো করে খোঁপা বাঁধার অভ্যাস সায়নীর। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চেও চুলের স্টাইল বদলায়নি। রোদের জন্যই শাড়ির আঁচল মাথায় দিয়ে রেখেছিলেন। চোখে পরেছিলেন সানগ্লাস। তার সঙ্গে কপালে বড় লাল টিপ পরা সায়নীকে সিনেমার পর্দায় দেখানো রাজনৈতিক নেত্রীর মতোই দেখাচ্ছিল!
শতাব্দী রায়
সাদা-লালে দেখা গেল শতাব্দী রায়কেও। শিফনের শাড়ির সাদা জমিতে লাল ফুলপাতার চওড়া নকশাপাড়। লাল রঙের নকশা আরও চওড়া হয়েছে আঁচলে। এর সঙ্গে টম্যাটো লাল রঙের কোয়ার্টার স্লিভ ব্লাউজ় পরেছিলেন বীরভূমের লোকসভা সাংসদ।
বাবুল সুপ্রিয়
বাবুল সুপ্রিয় এসেছিলেন ২১ জুলাইয়ে তৃণমূল নেতাদের ‘পোশাকবিধি’ মেনে। সমুদ্র-সবুজ পাঞ্জাবির সঙ্গে গলায় ঝুলিয়েছিলেন কালো পাড়ের তসররঙা উড়নি। তাতে টেম্পল পাড়ের নকশা। একটি সবুজ আর একটি গেরুয়া।
রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়
সবুজ পরেননি রচনাও। তাঁর গাঢ় ছাইরঙা জামদানি শাড়িতে ছিল হলুদ সুতোর কারুকাজ। তবে সবুজ যে একেবারে ছিল না, তা নয়। ঘাসফুল না হোক, তাঁর শাড়ির রেশমি পাড়ে হলুদ সুতোর লতাপাতার নকশার ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে ছিল সবুজ ফুল। এর সঙ্গে গলায় তিন হালির ছাইরঙা মুক্তোর মালা। চোখে কাজল আর কপালে কালো টিপে সাজ সম্পূ্র্ণ করেছেন রচনা। তবে হুগলির সাংসদকে একেবারে অন্য রকম দেখাচ্ছিল তাঁর ঘাড় পর্যন্ত ছাঁটা বাদামি চুলে।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
বরানগরের বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ২১ জুলাইয়ের মঞ্চের জন্য বেছে নিয়েছিলেন নেত্রী মমতার প্রিয় সাদা-নীল। সাদা রঙের আনারকলি চুড়িদারের সঙ্গে গাঢ় নীল বাঁধনি কাজের ওড়না।
রাজ চক্রবর্তী
সবুজ নয়, নীলও নয়, সাদা শার্ট আর বেজরঙা ট্রাউজ়ার্সে দেখা গেল রাজ চক্রবর্তীকে। তবে চমক ছিল পায়ে। তৃণমূলনেত্রীর মতোই সাদা রঙের একটি হাওয়াই চটি পরেছিলেন রাজ। যেমনটা আবার তৃণমূলের যুবনেত্রী তথা টলিউড অভিনেত্রী সায়নীকেও পরতে দেখা যায়।
লাভলী মৈত্র
সবুজে নিজেকে মুড়ে নিয়েছিলেন সোনারপুর দক্ষিণের বিধায়ক লাভলী মৈত্র। তাঁর পেস্তা সবুজ রঙের তাঁতের শাড়িতে তামারঙা পাড়। একই রঙের বৈপরীত্য লম্বা হাতা এয়ারহোস্টেস ব্লাউজ়েও। টেনে বাঁধা চুল, সঙ্গে লম্বা ঝুলের দুল।
রূপাঞ্জনা মিত্র
তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন রূপাঞ্জনা মিত্র। তিনিও এই ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে দৃশ্যমান। বলেছেন, এখানে এসে মনে হচ্ছে খোলা হাওয়ায় শ্বাস নিতে পারছি। সাজেও কি কোনও বার্তা দিলেন? নাহ্, সবুজ পরেননি। পরেছিলেন গাঢ় মভরঙা তাঁতের শাড়ি।
রিমঝিম মিত্র
একদা বিজেপির হয়ে তৃণমূলকে বিস্তর কটু কথা বলেছেন। সেই রিমঝিম মিত্রকেও দেখা গেল ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে যোগ দিতে আসা টলিউড অভিনেত্রীদের ভিড়ে। সাদা টপ আর গাঢ় রঙের ট্রাউজ়ার্সের সঙ্গে গলায় উড়নি। হলুদ রঙের উপর কমলা আর সবুজের কারুকাজ।
শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়
সাদা রঙের পোশাক পরেছিলেন টলিউড অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়ও। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে তিনি এসেছিলেন দুধসাদা সালোয়ার কামিজ এবং সাদা ওড়নায়।