চল্লিশ পেরিয়ে চুল পাতলা হয়ে যাওয়া সাধারণ সমস্যা। টাকও যে উঁকিঝুঁকি দেয় না, তা নয়। অনেক ছেলের আবার ওই বয়সে গিয়ে চুল-দাড়িতে পাকও ধরে যায়। একমাথা ঘন চুল ঝরে গিয়ে টাক পড়তে থাকলে, মনে দুঃখ তো হবেই। টাক ঢাকতে কখনও পরচুলা, আবার কখনও টুপি দিয়ে আড়াল করার চেষ্টা চলতেই থাকে। আসলে মাথাভরা ঘন কালো চুল চিরদিনই এ দেশের মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম প্রধান মাপকাঠি হিসাবে মর্যাদা পেয়ে এসেছে। সেই চুলই চলে যেতে থাকলে, হীনম্মন্যতায় ভোগা আশ্চর্যের কিছু নয়। কিন্তু কেন ওই বয়সে গিয়েই চুল পাতলা হতে থাকে বা টাক পড়তে থাকে, তার কিছু কারণ রয়েছে। তা জেনে রাখা ভাল। সেই সঙ্গে কী ভাবে সমাধান হবে, তা-ও জানা জরুরি।
চল্লিশের পরে টাক পড়ার নানা কারণ
১) জিনগত কারণে টাক পড়া অন্যতম প্রধান কারণ। বাবা-কাকা বা পরিবারের অন্য কোনও পুরুষ সদস্যের টাক পড়ার ধাত থাকলে, তার থেকে হতে পারে।
২) পুরুষের অ্যান্ড্রোজেন হরমোনও এর জন্য দায়ী। অ্যান্ড্রোজেন হরমোন ক্ষরণের তারতম্যে চুল উঠতে থাকে। এই হরমোনটির তারতম্য হলে চুলের গোড়া দুর্বল হতে থাকে। একে বলে অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেসিয়া।
আরও পড়ুন:
৩) অত্যধিক মানসিক চাপ, উদ্বেগও চুল পড়ার কারণ হতে পারে।
৪) ভিটামিন ও খনিজের অভাবেও চুল পড়ার সমস্যা বাড়ে। আয়রন, ভিটামিন ডি, জ়িঙ্ক এবং বায়োটিনের অভাবে ছেলেদের চুল পড়ার সমস্যা বাড়ে।
৫) অস্বাস্থ্যকর খাওয়ার অভ্যাস, অতিরিক্ত মদ্যপান রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা কমিয়ে দেয়, ফলে চুলের গোড়ায় সঠিক পুষ্টি পৌঁছয় না। এতে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে চুল পড়ার সমস্যা বাড়ে।
৬) কেশসজ্জার ত্রুটির কারণেও চুল পড়তে পারে। ভিজে চুল বার বার আঁচড়ানো, চুল শুকোতে হিট ড্রায়ারের অত্যধিক ব্যবহার, বাজারচলতি হেয়ার ক্রিম বা সিরাম বেশি ব্যবহার করলেও চুল পড়বে। পাকা চুল ঢাকতে রাসায়নিক দেওয়া ডাই ঘন ঘন ব্যবহার করতে থাকলে, চুল পড়ার সমস্যা বেড়ে যাবে।
সমাধান কিসে?
মিনোক্সিডিল একটি ‘ওভার-দ্য-কাউন্টার’ ওষুধ, যা চুলের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে। অ্যান্ড্রোজেন প্রভাবিত অ্যালোপেসিয়ায় ২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ মিনোক্সিডিল দিনে দু’বার ব্যবহার করলে নতুন চুল গজানো শুরু হবে। তবে মিনোক্সিডিল দীর্ঘ দিন ব্যবহার করলে পুরুষদের মুখে লোমের আধিক্য দেখা যায়। অনেক সময় ত্বকে চুলকানিও হয়।
মিনোক্সিডিলের সঙ্গে ফেনেস্টেরাইল নামের ওষুধ খেলে টাকে চুল গজাতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শেই ওষুধ ব্যবহার করা ভাল।
চুল প্রতিস্থাপন করান অনেকেই। তবে সে ক্ষেত্রে পকেটের জোর থাকা চাই। মাথার একেবারে পিছনের দিকের ত্বকের চুল অ্যান্ড্রোজেন দ্বারা প্রভাবিত হয় না। তাই ওই অঞ্চলের চুলের গোড়াশুদ্ধ তুলে এনে টাক পড়া জায়গায় প্রতিস্থাপন করা যায়। তবে এর খরচ অনেক।
লেজ়ার থেরাপি করে চুলের গোড়াগুলিকে (হেয়ার ফলিকল) উদ্দীপিত করে চুল গজানোর প্রক্রিয়া আছে। এখন আবার লেজ়ার ক্যাপ, লেজ়ার চিরুনিও বেরিয়ে গিয়েছে। তবে এই সব কিছুই ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ঘরোয়া উপায়ে পর্যাপ্ত প্রোটিন, যেমন মাছ, ডিম ও চিকেন, আয়রন, ভিটামিন বিশেষ করে বায়োটিন ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেলে চুল পড়ার সমস্যা কমবে। রোজের পাতে শাকসব্জি, ফল, বাদাম রাখতে হবে। ধূমপান ও মদ্যপান কমিয়ে ফেলতে হবে।
নিয়মিত মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে। বেশি রাসায়নিক দেওয়া শ্যাম্পু ব্যবহার না করাই ভাল। উষ্ণ জল কখনওই মাথায় ঢালবেন না, ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করার চেষ্টা করবেন। ভিজে চুল ধীরে ধীরে আঁচড়ান, মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন। নিয়মিত চুল ট্রিম করালেও চুলের ঘনত্ব বাড়বে।