কখনও ১০ থেকে ১৫ ধাপ, কখনও শূন্য ধাপ। ত্বকচর্চার দুনিয়ায় নতুন নতুন ধারা বা ট্রেন্ডের জন্ম হতে বেশি সময় লাগে না। পরিবেশ ও জীবনযাপনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক নিয়ে নানাবিধ পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে রোজ। আর সেগুলি করে থাকেন মূলত তরুণ-তরুণীরাই। বিদেশে সম্প্রতি চর্চায় এল ‘কেভম্যান স্কিনকেয়ার’। অর্থাৎ গুহামানবদের মতো ত্বকচর্চা। প্রশ্ন উঠতে পারে, গুহামানবেরাও ত্বকের ঔজ্জ্বল্য, তারুণ্য, কোমলতা নিয়ে ভাবিত ছিল? আদিম প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই চালিয়ে বেঁচে থাকা গুহামানবেরা ছিল শিকারি-সংগ্রাহক জীবনধারার লোক। তারাও কি ত্বকচর্চা নিয়ে ভাবিত ছিল?
ট্রেন্ড নির্মাণকারীরা সেই ভাবনাকেই মাথায় রেখেছেন। গুহামানবদের চর্চাকেই নকল করা শুরু করল নতুন প্রজন্ম। গুহামানবরা অবশ্যই সচেতন ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবী সচেতন ভাবেই সিদ্ধান্ত নিল।
কী সেই সিদ্ধান্ত?
মুখ ধোবেন না, ফেস ওয়াশ বা সাবান ব্যবহার করবেন না। টোনার, মিস্ট তো দূরস্ত, তেল বা ক্রিমও মুখে ছোঁয়াবেন না। অর্থাৎ গুহামানবরা যে ভাবে নিজেদের ত্বক নিয়ে ভাবতই না, সে ভাবেই না ভাবার অনুশীলন শুরু করল নতুন প্রজন্ম। একেই বলা হল ‘কেভম্যান স্কিনকেয়ার’। ওই যে, ১০ থেকে একেবারে শূন্য এসে নামল ত্বকচর্চার ধাপের সংখ্যা।

নতুন ত্বকচর্চার ট্রেন্ডের ঘাড়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন যুবক-যুবতীরা। ছবি: সংগৃহীত।
কিন্তু এ বারে শুরু হল তর্ক-বিতর্ক। ট্রেন্ডের ঘাড়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন যুবক-যুবতীরা। কারও মনে হচ্ছে, বড় ঘেন্নার, কেউ মিথ্যে বলে দাগিয়ে দিলেন, কেউ আবার দু’দিন মুখ না ধুয়ে চেষ্টা করে দেখলেন। সারা বিশ্বে হাতে গোনা কয়েক জন নাকি এই ত্বকচর্চা শুরু করেছেন। তাঁরা এই পদ্ধতির প্রশংসা করলেও ধন্দে পড়ে গিয়েছেন চর্মরোগ চিকিৎসকেরা। আর বিপাকে পড়েছেন প্রসাধন সামগ্রীর ব্যবসায়ীরা। সমাজ-সচেতন মানুষেরা আবার বলছেন, ভোগবাদ-পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে ভাল পদক্ষেপ!
কিন্তু সকলের মনেই প্রশ্ন, আদৌ কাজ করে এই চর্চা? কী ভাবেই বা করে?
এখানে উঠে আসছে হাজার দাবি। কেউ বলছেন, ভাল পন্থা, কেউ গালমন্দ করছেন। কিন্তু এর নেপথ্যে নাকি বিজ্ঞান রয়েছে। অনেক দিন (৭ দিন, ৩০ দিন অথবা ৩ মাস পর্যন্ত এই চর্চায় থেকেছেন কেউ কেউ) ধরে মুখ না ধুলে, বা কোনও প্রসাধনের ব্যবহার না করলে ত্বকে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসে। তবে ‘কেভম্যান স্কিনকেয়ার’ দু’রকম হয় বলে জানা যাচ্ছে। কেউ কেউ প্রসাধনী ব্যবহার করেন না, কেবল জল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করেন। কেউ জলটুকুও ছোঁয়ান না। ধীরে ধীরে ত্বক এমন শুষ্ক হয়ে যাবে, যা কখনও হয়নি। সারা মুখে মৃত ত্বকের কোষের আস্তরণ পড়ে যাবে। মনে হবে, যেন কোনও মাস্ক পরে রয়েছেন কেউ। ধীরে ধীরে লাল লাল দাগ পড়বে মুখে। ঘাম বসে থাকলেও মুখ ধোয়া যাবে না।
আরও পড়ুন:
এই পর্যন্ত শুনে অবাক হবেন, এর পরও কেন কেউ গুহামানবদের নকল করতে চাইবে। কিন্তু তার পরেও অনেকে বাধ্যের মতো চর্চা চালিয়ে গিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। হাল না ছাড়লে নাকি জাদুকরী ফলাফল মিলতে পারে। ত্বকের মৃত কোষগুলি নিজে নিজেই বেরিয়ে আসে মুখের ত্বকের নীচের স্তর থেকে, তার পর আপনাআপনি সময় মতো ঝরে যায়। ফলে কিছু দিন পরে দেখলে নাকি মনে হতে পারে ‘মেকআপ করা’।
আপনিও চাইলে ‘কেভম্যান স্কিনকেয়ার’ করতে পারেন। ভাল হোক বা খারাপ, ফলাফল যা হবে, তার দায় গুহামানবদের উপরই বর্তাবে।