E-Paper

বাগানে সেডামের সৌন্দর্য

এই গাছের পরিচর্যা খুব কঠিন নয়। একটু যত্ন নিলেই বাগান ভরে থাকবে সেডামে।

ঊর্মি নাথ

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:১৮

বাড়িতে অনেক সময়ে বাগান করার সাধে বাধা হয়ে দাঁড়ায় স্থানাভাব। জায়গা বলতে এক চিলতে বারান্দা কিংবা জানলা, যেখানে বড় গাছ, বড় টব রাখা সম্ভব হয় না। কারও বা বাড়ি সংলগ্ন সামান্য এক টুকরো জমি। এ সব ক্ষেত্রে মুশকিল আসান সেডাম। সাকুল্যান্ট জাতীয় এই গাছ স্টোনক্রপ নামেও পরিচিত। অ্যাডলফি, ডার্ক ম্যাজিক, অ্যাঞ্জেলিনা, ডাঙ্কিজ় টেল, নিয়ন, অটাম জয়, ডাবল মার্টিনি ইত্যাদি গোটা বিশ্ব জুড়ে নানা ধরনের সেডাম দেখা যায়।

এদের পাতা ও ফুল বেশ আকর্ষক। সেডামের জন্য বড় জায়গার প্রয়োজন নেই। ছোট টবেও রোপণ করা যায়, আবার বড় বাগানে নানা ধরনের সেডাম দিয়ে সৌন্দর্যায়ন করা যায়। এদের পরিচর্যা নামমাত্র। বিশেষ করে যাঁদের কাজের জন্য ঘনঘন বাড়ির বাইরে যেতে হয়, বাড়িতে অন্য সদস্য নেই যে গাছে জল-সার দেবে, তাঁদের জন্য উপযুক্ত সেডাম।

সেডামের প্রকৃতি

সাকুল্যান্ট প্রজাতির হওয়ায় সেডাম জাতীয় গাছে রোজ জল দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। মাটি শুকিয়ে গেলে তবে জল দিতে হয়। এরা খরা সহনশীল, বরং বেশি জল এই ধরনের গাছের জন্য ভাল নয়। তাই অতি বৃষ্টি হলে বারান্দা, ছাদ বা বাগান থেকে গাছগুলি সরিয়ে ফেলতে হবে। সেডাম ভাল লাগে বাহারি টবে বা পাত্রে। তবে রোপণের আগে অবশ্যই দেখে নিতে হবে সেই টব বা পাত্রে যেন উপযুক্ত জলনিকাশি ব্যবস্থা থাকে।

সেডামের জন্য বালি মেশানো, একটু পাথুরে মাটি ভাল। ঘন ঘন সার দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বছরে তিন চারবার মিশ্র জৈব সার দিতে পারেন। প্রচলিত ধারণা এই ধরনের গাছে রোদের প্রয়োজন নেই, কিন্তু তা নয়। অধিকাংশ সেডামের সারা দিনে পাঁচ-ছ’ঘণ্টা রোদ দরকার, এতে এরা তরতাজা থাকে, প্রচুর ফুল হয়।

ঘরের ভিতরে এই ধরনের গাছ রাখলে খেয়াল রাখতে হবে যাতে জানলা দিয়ে গাছে রোদ পড়ে। রোদ না পেলে গাছের ঔজ্জ্বল্য নষ্ট হয়ে যাবে, পাতায় রং ধরবে না, ফুলও আসবে না। তবে একেবারে কড়া রোদও এদের পক্ষে ভাল নয়। যেমন শরৎকালীন বা শীতের রোদে এই গাছ খুব ভাল হয়। তাই এই মরসুম সেডাম করার আদর্শ সময়।

নানা ধরনের সেডাম

  • সেডাম অ্যাডলফি: সেডাম অ্যাডলফি গোল্ডেন অ্যাডাম’স ফিঙ্গার বা গোল্ডেন সেডাম নামেও পরিচিত। খুব সহজে বেড়ে ওঠে এই গাছ। পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পেলে পাতার সবুজ রং ক্রমশ সোনালি বা কমলা রং ধারণ করে। তবে সরাসরি সূর্যের আলোতে না রাখাই ভাল।
  • ডার্ক ম্যাজিক: পাতা কালচে পার্পল। ম্যাজেন্টা রঙের ফুল হয়। ফুল হলে প্রচুর প্রজাপ্রতি আসে।
  • সেডাম অ্যাঞ্জেলিনা: ঠিকমতো আলো-হাওয়া ও অনেকটা জায়গা জুড়ে বিস্তারের সুযোগ পেলে ছোট-ছোট পাতার গাছটি কার্পেটের মতো দেখতে লাগবে। টবে যেমন রাখতে পারেন, তেমনই বাগানে একটা ধার ধরে বসাতে পারেন। ঝুলন্ত টবে দেখতে বেশ লাগে। শীতের পরে এর পাতার রং হলদে হয়। তখন আরও সুন্দর লাগে দেখতে।
  • ডাঙ্কিজ় টেল: ডাঙ্কিজ় টেল বা বুরো’স টেল-এর পছন্দ ছায়াঘেরা জায়গা। যদিও গাছে সূর্যের তাপ আসা জরুরি। এই গাছ ঝুলন্ত টবে রাখলে দেখতে ভাল লাগে। ঝুলন্ত টব বেয়ে এর মোটা মোটা পাতা লেজের মতো নেমে এলে ভারী সুন্দর দেখায়।
  • নিয়ন সেডাম: ২০ ইঞ্চি মতো লম্বা এই গাছের পাতা ধূসর সবুজ। ম্যাজেন্টা গোলাপি রঙের ছোট-ছোট তারার মতো থোকা থোকা ফুল হয়। ঠিক মতো আলো ও সার পেলে ফুল এত বেশি হয় যে পাতা ঢেকে যায়। ফুলের মধু খেতে মৌমাছিদের আনাগোনা বাড়ে। শুধু ফুল নয়, ফুলের কুঁড়িও বেশ আকর্ষক। নিয়ন সেডামের মতো গোলাপি তারার মতো ফুলে ভরে যায় অটাম জয় সেডামে। সেই ফুলেরও মধু খেতে মৌমাছিদের ভিড় জমে।
  • ডাবল মার্টিনি: নিয়ন ও অটাম জয়ের মতো প্রজাপ্রতি ও মৌমাছিদের আকর্ষণ করে ডাবল মার্টিনি। এর লম্বা খয়েরি রঙের কাণ্ডের নীচ থেকে উপর পর্যন্ত জলপাই রঙের পাতা। মরশুমে প্রতিটি কাণ্ডের মাথায় ফুল হয়।

যাঁরা নানা রঙের পাথর, মুরাল, মূর্তি দিয়ে বাড়ির গ্রিন জ়োন সাজাতে চান তাঁরা সৌন্দর্যায়নের জন্য বাগানে ব্যবহার করতে পারেন নানা ধরনের সেডাম, সাকুল্যান্ট জাতীয় গাছ। এদের আকার, রং দীর্ঘ দিন একই রকম থাকে। পরিচর্যার বিশেষ প্রয়োজন হয় না। তবে প্রয়োজন মতো ছেঁটে দিলে সুন্দর আকার নেয়, দেখায়ও সুন্দর। বিভিন্ন নার্সারিতে নানা রকমের সেডাম পেয়ে যাবেন। তবে সেডাম ট্রিম করার সময়ে অতিরিক্ত পাতা, ডাল ফেলে না দিয়ে সেগুলোও আবার অন্য টবে রোপণ করে দিলে তার থেকে গাছ হয়। ফলে এই গাছে বাগান ভরে যেতে বিশেষ সময় লাগবে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sedum Plant Gardening

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy