Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গ্যাস-অম্বলে কাবু বাঙালি

কাঁড়ি-কাঁড়ি অ্যান্টাসিড বাঙালি জীবনের অঙ্গ। তবু সে গ্যাস আর অম্বলকে কাৎ করতে পারেনি। সর্বক্ষণ হয় তার পেট ফুলছে বা বদহজম হচ্ছে। খাবার দেখলে লোভ হচ্ছে, কিন্তু খেতে ভয় করছে। পেটরোগা বাঙালির দীর্ঘদিনের এই স্বাস্থ্যশত্রুদের নিয়ে লিখেছেন চিকিৎসক কৌশিক ভট্টাচার্য।খাদ্যবস্তুর হজম বা পরিপাক বাধাপ্রাপ্ত হলে গলা-বুকে জ্বালা অনুভব হয়। অতিরিক্ত তেল অথবা মশলা মিশ্রিত খাবার খেলে বা লোভ সামলাতে না-পেরে অতিরিক্ত খাবার খেলে এই বদহজমের হতে পারে।

ছবি প্রতীকী। তুলেছেন প্রণব দেবনাথ 

ছবি প্রতীকী। তুলেছেন প্রণব দেবনাথ 

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৯ ০১:৪০
Share: Save:

মানুষের পাকস্থলীর ভিতরে হাইড্রোকোলিক অ্যাসিড স্বাভাবিক ভাবেই নিঃসৃত হয়। তা হলে অম্বল বোধটা আলাদা করে কখন অনুভূত হয় বা কেন হয় সেই প্রশ্ন ওঠে।

এর দু’টি কারণ। প্রথমত, খাদ্যাভ্যাসে ত্রুটির কারণে অতিরিক্ত অ্যাসিড নিঃসরণ। দ্বিতীয়ত খাদ্যনালি এবং পাকস্থলীর সংযোগস্থলে কোনও গঠনগত ত্রুটি। এতে পাকস্থলীতে নিঃসৃত অ্যাসিড উপরে উঠে আসে এবং অম্বল অনুভূত হয়।

আবার পেটের অন্ত্রে অবস্থানকারী ব্যাকটেরিয়া সন্ধান প্রক্রিয়ায় গ্যাস উৎপাদিত হয়। অতিরিক্ত গ্যাস অনুভবের কারণ হল, খাবারের মাধ্যমে অতিরিক্ত গ্যাস সেবন। যেমন, সোডা জাতীয় কোল্ডড্রিঙ্কস পান। অথবা খুব তাড়াহুড়ো করে খাদ্য অথবা পানীয় খাওয়া, গ্লাসে চুমুক দিয়ে জল না খেয়ে আলগা করে ঢেলে খাওয়া ইত্যাদি। এতে গ্যাস শরীরে প্রবেশ করে এবং পেট ফোলা অর্থাৎ গ্যাসের অনুভব হতে পারে। পেটে অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পেলে অর্থাৎ অপরিশোধিত অথবা অর্ধ পাচিত খাদ্য সেবনেও গ্যাস বাড়ে।

খাদ্যবস্তুর হজম বা পরিপাক বাধাপ্রাপ্ত হলে গলা-বুকে জ্বালা অনুভব হয়। অতিরিক্ত তেল অথবা মশলা মিশ্রিত খাবার খেলে বা লোভ সামলাতে না-পেরে অতিরিক্ত খাবার খেলে এই বদহজমের হতে পারে। অনেক সময় পরিপাকপ্রণালীর কিছু গঠনগত সমস্যা অথবা হরমোন নিঃসরণ প্রক্রিয়ায় ত্রুটি থাকলে সেখান থেকেও এই অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে।

এই ধরনের অসুবিধা গরম কালে বেশি হয়। এখন প্রশ্ন হল, গরমকালে কেন বেশি হয়? প্রথমত, গ্রীষ্মকালে শরীরে খাবারের চাহিদা থাকে কম। কারণ, শরীরে বেশি তাপ উৎপাদনের প্রয়োজন হয় না। উপরন্তু তাপ বিকিরণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তাই প্রয়োজনের থেকে বেশি খেলে সমস্যা হয়। দ্বিতীয়ত, খাবারের মধ্যে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা জনিত কারণে সহজেই ব্যাধি সৃষ্টিকারী জীবাণুর জন্মলাভ এবং বৃদ্ধি হয়। এ জন্য টাটকা খাবার স্বাস্থ্য সম্মত ভাবে খাওয়া গরমকালে অত্যাবশ্যক।

অম্বল হলে অর্থাৎ গলা জ্বালা হলে তার সঙ্গে বমি হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে। রাত্রে শোওয়ার পরে কাশি অথবা বুকের কাছে চাপ বোধ করা ভাল লক্ষণ নয়। অতিরিক্ত ওজন ও কোমরের কাছে শক্ত করে বেল্ট বাঁধলে বিপদ বাড়তে পারে। খাবার গিলে খেতে কোথাও আটকাছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে। ওজন কমে যাওয়া অথবা রক্ত বমি বা কালো রঙের মলত্যাগ খারাপ লক্ষণ। এই অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

এ বার আসা যাক প্রতিকার ও সাবধানতা বিষয়ে। অম্বল নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে মুঠো মুঠো অ্যান্টাসিড বা হজমের ওষুধ খাবেন না। কারণ, এই অ্যাসিড বস্তুটি কিন্তু আমাদের শরীরের বহু উপকার সাধন করে। জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন দরকার। ধূমপান পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। মদ্যপান এড়িয়ে চলতে হবে। অল্প অল্প করে বারবার খাবার খাওয়া খুব দরকার। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জল না খেয়ে খাওয়ার ১৫ মিনিটের পরে জল খান। খাবার খাওয়া র সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে না পড়ে 1 ঘন্টা পরে শুতে যান। বেশি মশলাদার ও বাইরের জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন। বেশি ক্ষণ খালি পেটে থাকবেন না। একসঙ্গে বেশি খাবার খাবেন না। দৈহিক ওজনের দিকে লক্ষ্য রাখুন। বিশেষ করে পেটে অতিরিক্ত মেদ চাপ সৃষ্টি করে অম্বলের অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়। ঢিলা পোশাক ব্যবহার করুন। বিশেষ করে কোমরের কাছে। চায়ের পাতলা লিকার খান। গ্যাস কমাতে ভাল করে চিবিয়ে খাবার খান। মুখের লালা য় অনেক উৎসেচক থাকে যা খাদ্য পরিপাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। জল খাওয়ার সময় বোতল থেকে সরাসরি না খেয়ে গ্লাস এ ঢেলে খান। গুরুপাক খাদ্য এড়িয়ে চলাই ভাল। টাটকা রান্না করা খাবার খান। বাইরের বা স্ট্রিট ফুড এড়িয়ে চলুন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। অর্থাৎ নখ ছোট করে কাটুন। রান্না বা খাওয়ার আগে ভাল করে হাত ধুয়ে নিন।

একমাত্র বাজার চলতি অ্যান্টাসিড ট্যাবলেট ছাড়া অন্য কোনও ওষুধ নিজের থেকে খেতে যাবেন না। দূরে থাকুন ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকোলির মতো আনাজ থেকে। এগুলিতে পেট ফাঁপে৷ বিনস-এ উপস্থিত অলিগোস্যাকারাইড হজম করতে পারে না আমাদের শরীর, সেটা পেটের ভিতর গ্যাসের জন্ম দেয়৷ ময়দা রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ায়, বাড়ায় ফ্যাটের স্টোরেজ৷ সেই সঙ্গে তা গ্যাসও তৈরি করে পেটে৷

প্রচুর চিনি মেশানো থাকে যে কোনও কার্বনেটেড পানীয়তে। আপনার রোজের খাবারের সঙ্গে যখন সেটা পান করছেন, তখন হজমে ব্যাঘাত ঘটবেই৷ আর খাবার হজম হতে যত দেরি হবে, পেটে গ্যাসের পরিমাণ তত বাড়বে৷দই আর টক ফল আলাদা আলাদা ভাবে শরীরের জন্য খুব ভাল৷ কিন্তু দুটোকে একসঙ্গে মেশাবেন না, তাতে হজম হতে অনেক দেরি হবে৷ একান্তই যদি কখনও দই আর এই ধরনের ফল একসঙ্গে খেতে চান, তা হলে খেয়াল রাখবেন দই যেন ঘরের তাপমাত্রায় থাকে৷ সেই সঙ্গে যোগ করে নিন সামান্য মধু আর এক চিমটে দারুচিনির গুঁড়ো। দইয়ের সঙ্গে ডাল খেতে পারেন, কিন্তু দুধের সঙ্গে ডাল নৈব নৈব চ৷ মাছ আর দুধএকসঙ্গে খেলেই হজমের গোলমাল হতে পারে৷গ্যাস ও অম্বল দূর করতে তুলসী পাতা, মৌরি, দারুচিনি, ঘোল, গুড়, লবঙ্গ, জিরাপানি, আদা, ঠাণ্ডা দুধ, , নারকেলের জল, পুদিনা পাতা, টক দই, কলা খুবই উপকারী।

অনুলিখন: সুস্মিত হালদার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gas Acidity Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE