মডেলরা এগিয়ে চলেছেন মার্জারগতিতে, স্কোরবোর্ডের পিছনে কমেন্ট্রি বক্স আর পিচের মধ্য দিয়ে।
গ্যালারির ধাঁচে দর্শকের বসার আসন। এ যেন অন্য এক র্যাম্প। ফ্যাশনের সঙ্গে এ ভাবেই স্পোর্টসকে মিলিয়ে দিল ‘প্রাইড ইন ব্রিঙ্গিং টুইস্টস ইন ট্র্যাডিশনস’। ডিজ়াইনার ডুয়ো শান্তনু-নিখিলের অসামান্য কালেকশনে কোভিডের স্থবিরতা কাটিয়ে তিন বছর পর আবার মহাসমারোহে ফিরল ব্লেন্ডারস প্রাইড গ্লাসওয়্যার ফ্যাশন টুর। রয়্যাল কলকাতা গল্ফ ক্লাবে আয়োজন করা হয়েছিল এই ফ্যাশন শোয়ের। এ বারের পোশাকের সম্ভার সাজানো হয়েছিল এমন করে, যেখানে ওজন বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। মানিয়ে যাবে যে কোনও চেহারায়। এটাই ছিল এ বারের গ্লাসওয়্যার ফ্যাশন টুরের মূল মন্ত্র।
শোয়ের আগে...তখনও শুরু হয়নি শো। মহড়া চলছে। শো পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন দিল্লিনিবাসী অপর্ণা বহেল ও অনিশা বহেল। তাঁরাই র্যাম্পে ফাইনাল পজ়িশন বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন মডেলদের। কোভিড কতটা প্রভাবিত করেছে ফ্যাশন শোকে? ‘‘শোয়ের কনসেপ্ট থেকে র্যাম্প, ক্যাটওয়াক, আলো সব কিছুতেই প্রচুর পরিবর্তন এসেছে। ফ্যান্সি, ফান অ্যান্ড ফ্যাশন— এ সময়ের মূলমন্ত্র। ক্রিকেট পিচ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এই শোয়ের কনসেপ্ট তৈরি হয়েছে। চিরাচরিত যে র্যাম্পের কনসেপ্ট এত দিন ছিল, তা ভেঙেছে।’’ তাই সারা পৃথিবীতেই কোভিড পরবর্তী ফ্যাশন ট্রেন্ডে উঠে আসছে নতুন ধরনের নানা কনসেপ্ট। তার মধ্যমণি অবশ্যই মেকআপ। গ্রিনরুমের দিকে পাড়ি দিতে মেকআপ ট্রেন্ডেও উঠে আসা পরিবর্তন চোখে পড়ল। দিল্লির মেকআপ আর্টিস্ট অনু কৌশিক বললেন,‘‘লুমিনিয়াস গ্লসি লুক এখন ট্রেন্ড। তবে স্পোর্টস লুকে নতুনত্ব আনতে হোয়াইট লাইনারের ব্যবহার করেছি, এটাই ট্রেন্ডসেটার। সঙ্গে বিনুনি, কোঁকড়া চুলের স্টাইলে স্পোর্টি লুক ধরা হয়েছে ভিন্ন ভাবে।’’ এই নতুনত্বেই গা ভাসিয়েছেন ‘বিগ বস’খ্যাত নিতিভা কল। এই শোয়ের হাত ধরেই প্রথমবার ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কোনও ফ্যাশন শো হোস্ট করতে চলেছেন তিনি।
শোয়ের শুরু
অতিমারির পরে এখন আগের চেয়ে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। গত তিন বছর শো না হওয়ার খেদ যেন ভুলিয়ে দিল কলকাতায় অনুষ্ঠিত এই ফ্যাশন টুর। বরাবর পরীক্ষানিরীক্ষা করতে ভালবাসেন ডিজ়াইনার ডুয়ো শান্তনু-নিখিল। তাঁদের ক্রিকেট ক্লাব কালেকশন যা একধারে স্টাইল তৈরি করেছে, অন্য দিকে দিয়েছে ফিট থাকার সহজ উপায়। ঝলমলে আলোর রোশনাইয়ে ভেসে গেল র্যাম্পের পিচ। গ্যালারিতে ভিড় করে থাকা দর্শকদের সামনেই ক্যামেরা, মেকআপ আর পোশাকের চাকচিক্যে র্যাম্প মাতালেন মডেলরা। এই শোয়ের মাধ্যমে ডিজ়াইনার ডুয়ো দেখাতে চেয়েছেন, ফ্যাশনে উৎকর্ষের জন্য চেহারা কোনও বাধা নয়। শোয়ের শুরুতেই চমক ছিল ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন হরমনপ্রীত কৌর। ফ্যাশনের মঞ্চে হরমনপ্রীতের উপস্থিতি নতুন মাত্রা সংযোজন করে এই শোয়ে। পোশাকের ব্যাপারে ফ্লেক্সিবিলিটির উপরে জোর দিলেন হরমনপ্রীত। তাঁর কথায়, “একটা পোশাক পরে আগে দেখি, তাতে যেন আমার হাত ও পায়ের মুভমেন্টে বাধা সৃষ্টি না হয়। তার সঙ্গে আরামদায়ক হলেই আমি সে পোশাকে স্বচ্ছন্দ।”
শোয়ের নানা পর্বে উঠে এল স্পোর্টসওয়্যারের কায়দায় তৈরি সোয়েটার, জ্যাকেটের নানা সম্ভার। ছেলেদের জ্যাকেট যেমন জমকালো, ততটাই ক্যাজ়ুয়াল রাখা হয়েছে তাদের লুক। মেয়েদের লং শার্ট ও টেনিস স্কার্ট। তার সঙ্গে ছিল রাফলস ও প্লিটসের মেলবন্ধন, লেয়ার করা কেপ। পোশাকের প্রত্যেক পরতে যেন নতুনের খেলা। লেয়ারড লুকের কম্বিনেশনেই মঞ্চে এলেন শো-স্টপার, রাজকুমার রাও ও তাঁর স্ত্রী পত্রলেখা। গত বছর নভেম্বরেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তাঁরা। এই তারকাদম্পতির উপস্থিতি যেন জৌলুস বাড়িয়ে দিল ফ্যাশন শোয়ের।
স্পোর্টি লুকে ট্যাঞ্জারিন স্পর্শ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
এই প্রথম রাজকুমার আর পত্রলেখার একসঙ্গে র্যাম্পে হাঁটা। বাংলার জামাই হিসেবে রাজকুমার যে গর্বিত, তা জানিয়ে দিতে ভোলেননি অভিনেতা। পোশাকের ব্যাপারে অভিনেতা অবশ্য আরামকেই প্রাধান্য দেন। তাঁর কথায়, “পোশাক নিয়ে বেশি এক্সপেরিমেন্ট করি না। আরামদায়ক পোশাক পরতেই বেশি ভালবাসি। অবশ্য তার সঙ্গে এটাও দেখি যে, সেই পোশাকে আমায় ভাল লাগছে কিনা!” পত্রলেখার ফ্যাশনের বোধও অনেকটা রাজকুমারের মতোই। সব সময়ে ক্লাসিক ও কমফর্টেবল পোশাক বাছেন তিনি, যা পরে তাঁকে আত্মবিশ্বাসী দেখায়। সব সময়ে যে ট্রেন্ড ফলো করতে হবে, এমন মতে বিশ্বাসী নন রাজকুমার-ঘরনি।
এ বারের শোয়ে অবশ্য উপস্থিত থাকতে পারেননি শোয়ের দুই কান্ডারি শান্তুনু-নিখিল। বিশেষ কোনও পারিবারিক কারণে তাঁরা শোয়ে থাকতে না পারার জন্য দুঃখও প্রকাশ করেছেন। তবে তাঁদের পোশাকের সম্ভারে দেখা যাচ্ছিল ডিজ়াইনারদের ভাবনার মৌলিক ঝলক।
ফ্যাশন গ্যালারিতে নবীন ডিজ়াইনারদেরও দাপট দেখা গিয়েছে। পোশাকশিল্পীদের ব্যতিক্রমী আয়োজন, তারকাদের দ্যুতি, ফ্যাশনপ্রেমীদের রংবেরঙের পোশাক— সব মিলিয়ে জমজমাট ছিল কলকাতায় দীর্ঘদিন পরে অনুষ্ঠিত হওয়া এ বারের শো।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)