Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

স্তন্যদানে অনীহা বাড়ায় উদ্বেগ

সংসারে কাজের চাপ হোক বা কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ততা। বেশি বয়সে বিয়ে বা দেরিতে সন্তান নেওয়া এখন সাধারণ বিষয়। সদ্যোজাতদের স্তন্যদানেও এখন প্রবল অনীহা অধিকাংশ মায়ের। অথচ নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মাতৃদুগ্ধের বিকল্প নেই। চিকিৎসকদের সতর্কবার্তা, পর্যাপ্ত মায়ের দুধ না পেলে শিশুদের লেখাপড়া শেখার ক্ষমতাও কমে যেতে পারে। এমনকী, নানা ধরণের জটিল অসুস্থতাও দেখা দেওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।

মাতৃদুগ্ধের গুরুত্ব জানাতে পদযাত্রা।

মাতৃদুগ্ধের গুরুত্ব জানাতে পদযাত্রা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৫ ০১:৪৫
Share: Save:

সংসারে কাজের চাপ হোক বা কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ততা। বেশি বয়সে বিয়ে বা দেরিতে সন্তান নেওয়া এখন সাধারণ বিষয়। সদ্যোজাতদের স্তন্যদানেও এখন প্রবল অনীহা অধিকাংশ মায়ের। অথচ নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মাতৃদুগ্ধের বিকল্প নেই। চিকিৎসকদের সতর্কবার্তা, পর্যাপ্ত মায়ের দুধ না পেলে শিশুদের লেখাপড়া শেখার ক্ষমতাও কমে যেতে পারে। এমনকী, নানা ধরণের জটিল অসুস্থতাও দেখা দেওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
মাতৃদুগ্ধের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর শহরে এক সচেতনতা সভার আয়োজন করা হয়। জেলা স্বাস্থ্য দফতর এবং আইসিডিএস সেলের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত শিবিরে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক সুশান্ত চক্রবর্তী। সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সুশান্তবাবু আক্ষেপ করেন, “তথাকথিত শিক্ষিত অনেক মা- ই শিশুকে বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত করেন। এটা ভাবতে অবাক লাগে।” সভার আগে শহরে এক পদযাত্রাও হয়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার পাশাপাশি পদযাত্রায় সামিল হন জেলার দুই উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী, রবীন্দ্রনাথ প্রধান প্রমুখ। সচেতনতা সভায় যোগ দেন স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে আইসিডিএস কর্মী, নার্সিং ছাত্রীরা। ম্যাজিক শো- ও হয়। গিরীশচন্দ্রবাবু জানান, আগামী দিনে গ্রামাঞ্চলেও ম্যাজিক শো-এর মাধ্যমে মাতৃদুগ্ধের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা- প্রচার চলবে। পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, “অভ্যাসের পরিবর্তন ঘটাতে হবে। মায়েদের বোঝাতে হবে মাতৃদুগ্ধ শিশুর কতখানি উপকারী।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার কথায়, “এখন বিশ্বায়নের যুগ। মা সন্তানকে ধারণ করবেন, প্রতিপালন করবেন, স্তনপান করাবেন, এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু আজকের কর্মব্যস্ত জীবনে মাতৃদুগ্ধ একটা বিপন্নতার জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছিল।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘শিশুকে মাতৃদুগ্ধ থেকে কিছুতেই বঞ্চিত করা যাবে না। মাতৃদুগ্ধের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সবস্তরে সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। না হলে পরবর্তীকালে সমস্যা হতে পারে।” মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ তমালকান্তি ঘোষের কথায়, “মাতৃদুগ্ধ মা ও শিশুর সম্পর্ক আরও নিবিড় করে। সরকার যতই চেষ্টা করুক, সকলে এগিয়ে না এলে সর্বস্তরে সচেতনতা বাড়বে না।” মেদিনীপুর মেডিক্যালের শিশু বিভাগের প্রধান অরুণ দে-র কথায়, “মায়ের দুধের উপকারিতা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মাতৃদুগ্ধ পান ঠিক ভাবে করাতেই হবে।”

চিকিত্‌সকদের বক্তব্য, শিশুকে প্রথম ছ’মাস শুধুই বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। তার পরের দু’বছর বয়স পর্যন্ত পরিপূরক খাদ্যের সঙ্গে বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। এটা দরকার শিশুর বৃদ্ধি, পুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য। বুকের দুধ শিশুদের পক্ষে উপকারী কেন? চিকিত্‌সকদের বক্তব্য, গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বুকের দুধ পান করে যে সব শিশু, তাদের অসুখ কম হয়। নবজাতক শিশু বুকের দুধ খাওয়ার সময় প্রথম তার মায়ের শরীরের সংস্পর্শে নিবিড় ও নিরাপদ সম্পর্ক অনুভব করে। এক বছর বা তার বেশি দিন বুকের দুধ খেলে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা অর্ধেক কমে যায়। চিকিত্‌সকদের আরও বক্তব্য, যে সব শিশু অন্তত ছ’মাস বুকের দুধ খায় তাদের ১৫ বছর বয়সের আগে ক্যানসারের ঝুঁকি কম থাকে। বুকের দুধ খাওয়া শিশুদের এডস্- এ মৃত্যুর সম্ভাবনা এক তৃতীয়াংশ কমে।

পাশাপাশি, চিকিত্‌সকেরা এও জানাচ্ছেন, শিশুর বয়স ছ’মাস হয়ে গেলেই বুকের দুধ ছাড়া অন্য কোনও বাড়তি খাদ্য দেওয়া দরকার। কারণ, ছ’মাস বয়সের পরে শুধু বুকের দুধ শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও উদ্যমের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। ছ’মাস থেকে পরিপূরক খাদ্য দেওয়া না- হলে শিশুর প্রাণশক্তি কমে যায় এবং তার ওজন কম হতে থাকে। মেদিনীপুর মেডিক্যালের শিশু বিভাগের প্রধান অরুণবাবু বলেন, “মায়ের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারটা ঠিক ভাবে পালন করতেই হবে। এটা বড় ব্যাপার। যতই জীবন কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ুক, তাও। সর্বত্র সমান সচেতনতা নেই। সচেতনতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে।” একাংশ মা যে ভাবে নিজেদের শরীর আরও সুস্থ থাকবে, এই আশায় শিশুকে মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত করেন, সভায় সেই নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন চিকিত্‌সকেরা।

জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্করবাবু এবং রবীন্দ্রনাথবাবুর বক্তব্য, শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানোর অর্থ হল, শিশু বুকের দুধ ছাড়া অন্য কিছু, এমনকী জল বা বিকল্প সহায়ক খাদ্যও না খায়। তবে ভিটামিন ও খনিজ দ্রব্যের ফোঁটা চিকিত্‌সকদের পরামর্শ মতো সরাসরি খেতে দেওয়া যাবে। বুকের দুধ খাওয়াবার আগে অন্য কোনও কিছুই শিশুকে খাওয়ানো যাবে না। অন্য কিছু খাওয়ালে বুকের দুধ খাওয়ার ইচ্ছে কমে যাবে। কারণ, এ সব খাদ্যের মধ্যে থাকে চিনি, মধু, জল বা মাখন জাতীয় দ্রব্য। বোতলের দুধেও সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। এমনকী, গরম জল বা আলাদা ভাবে জল খাওয়ালে শিশুর বুকের দুধ খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। শিশু শুধু বুকের দুধ খেয়েই ছ’মাস স্বাভাবিক ভাবে বাড়তে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE