প্রতি পাঁচ জন পুরুষের মধ্যে দু’জন ভুগছেন মুখের ক্যানসারে। প্রতি চার জন মহিলার এক জন আবার সারভাইক্যাল ক্যানসারের শিকার। সম্প্রতি হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, বর্ধমান এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জুড়েএকটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে এমনই ভয়াবহ সব তথ্য।
এই সমীক্ষা অনুসারে প্রায় মহামারীর আকার নিয়েছে ক্যানসার। যে কোনও বয়সের মানুষই এখন তার শিকার। বয়স বাড়লে তবেই ক্যানসার হয় এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ক্যানসারে আক্রান্ত মানুষদের গড় বয়স হিসেব করে দেখা যাচ্ছে, প্রতি পাঁচ জনে এমন একজন আছেন যাঁর ক্যানসার ধরা পড়েছে ৩৫ বছরের নিচে।
কলকাতার এক নার্সিংহোম ২০১৩ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় দু’লক্ষ লোকের ওপর এই সমীক্ষা চালিয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের ৪০ শতাংশ পুরুষ মুখের ক্যানসারে ভুগছেন। এর প্রধান কারণ অতিরিক্ত গুটখা চিবোনো। ২৮ শতাংস পুরুষ ভুগছেন পাকস্থলি, গল-ব্লাডার, কোলন ইত্যাদির ক্যানসারে। পাশাপাশি মহিলাদের মধ্যে সারভাইক্যাল ক্যানসারের হার শতকরা ২৮ ভাগ। স্তন ক্যানসারের হার শতকরা ২২ ভাগ। তবে সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয়,যাঁদের ক্যানসার ধরা পড়ছে তাঁদের ৪১ শতাংশের গড় বয়স ৫৬ থেকে ৬০ বছর।
ওয়ার্ল্ড হেল্থ অরগানাইজেশন (হু) থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড ক্যানসার রিপোর্টে বলা হয়েছে, সারা ভারত জুড়েই মহিলাদের মধ্যে বাড়ছে ক্যানসারের প্রবণতা। ২০১২ সালের রিপোর্ট অনুসারে বারতে ক্যানসার আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা যেখানে ৪.৭৭ লক্ষ, সেখানে মহিলার সংখ্যা অনেকটাই বেশি, প্রায় ৫.৩৭ লক্ষ। ক্যানসার আক্রান্ত পুরুষ এবং মহিলার সংখ্যাও প্রায় সমান।
হু- এর এই রিপোর্ট অনুসারে প্রতি বছর ভারতের প্রায় সাত লক্ষ মানুষ ক্যানসারে মারা যান। আর প্রত্যেক বছর নতুন করে প্রায় দশ লক্ষ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হন।
কিন্তু কেন এভাবে মহামারীর আকার নিচ্ছে ক্যানসার?
চিকিৎসকদের মতে, সময়ের সঙ্গে পাল্টে যাওয়া জীবনধারাই এর জন্য দায়ী। মানুষ এখন অত্যন্ত্য দ্রুত জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। বেড়েছে প্রতিযোগিতা। বাড়ছে স্ট্রেস। পাল্টে যাচ্ছে খাদ্যাভ্যাস। মানুষ অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে ফাস্ট ফুডের ওপর। বেড়েছে ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের প্রবণতাও। সময়ের সঙ্গে দূষিত হয়েছে বাতাস। সব মিলিয়ে ক্যানসার জাঁকিয়ে বসছে সমাজে। এর পাশাপাশি আরও একটি কারণকে চিহ্ণিত করেছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের মতে, চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিপুল উন্নতি হওয়াতেই আরও বেশি করে ধরা পড়ছে ক্যানসার। ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সোমনাথ সরকার বলেন, ‘‘যে কোনও পেটের সমস্যাতেই পেটে জল জমতে পারে। আগে তো ভাবা হত উদুরি হয়েছে। কিন্তু সেটা যে ক্যানসারও হতে পারে তা আধুনিক চিকিৎসার ফলেই বোঝা সম্ভব হয়েছে।’’ একই মত ক্যানসার বিশেষজ্ঞ গৌতম মুখোপাধ্যায়েরও। তিনি বলেন, ‘‘জনসংখ্যা বাড়ছে। আগের থেকে অনেক ভাল ডায়াগনসিস হচ্ছে। তাই ক্য়ানসার বৃদ্ধির এই প্রবণতা আরও বেশি করে চোখে পড়ছে।’’
কিন্তু এর থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কী?
গৌতমবাবু জানাচ্ছেন, দু’টি উপায় রয়েছে। প্রথমটিকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় ‘প্রিভেনশন অঙ্কোলজি’। এর অর্থ, ক্যানসারের জন্য দায়ী এমন অভ্যাস যেমন, ধূমপান, তামাক চিবোনো, মদ্যপান এবং খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি ত্যাগ করতে হবে। দ্বিতীয় উপায়টির পোশাকি নাম ‘আর্লি ডিটেকশন’ অর্থাৎ নিয়মিত চেক-আপ করাতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘আর্লি ডিটেকশনে মানুষকে অভ্যস্ত হতে হবে। চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। এর জন্য দরকার সচেতনতা।’’ একই কথা জানালেন সোমনাথবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘যাঁদের পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস রয়েছে তাঁদের আরও অনেক বেশি সচেতন হতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy