আড্ডা আর চা। কলকাতার ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই দুটো শব্দ। সেই কবে সাহেবদের হাত ধরে চা খেতে শিখেছিল বাঙালি। তার পর এত বছর পার হয়ে গিয়েছে, চা-কে ঘিরে যে কত বিপ্লব ঘটে গিয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। গ্রিন টি, জ্যাসমিন টি, ক্যামোমাইল টি— বাজারে হরেক রকম ফ্লেভারের চায়ের ভিড়েও দুধ-চিনি দিয়ে কড়া চায়ের জন্য বাঙালির মনকেমন করে। অফিসের ফাঁকে চায়ের বিরতি হোক কিংবা সন্ধ্যাবেলা বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা, আবার বাড়ি ফিরে এক কাপ চায়ে শান্তির চুমুক— দুধ চা না হলে ঠিক যেন জমে না! তবে দুধ চা বানানো বেশ ঝক্কির কাজ। দুধ, চা, চিনির সঠিক অনুপাত আর ঠিক কত ক্ষণ ফুটলে সেই চায়ের স্বাদ একে বারে ঠিকঠাক হবে— তার হিসাব সকলের কাছে থাকে না। তা ছাড়া, কখন সেই দুধ চা উথলে উঠবে তার দিকেও সজাগ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে হয়। এই সব মুশকিল আসান করতে রন্ধনশিল্পী সঞ্জীব কপূরের সংস্থা ‘ওয়ান্ডার শেফ’ নিয়ে এল ‘চায় মেকার’। এই বৈদ্যুতিন যন্ত্রটিতে দুধ, চা, চিনি, মশলাপাতি একসঙ্গে দিয়ে দিলেই হল— পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করলেই তৈরি হয়ে যাবে মনের মতো দুধ চা। কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে এই ‘চায় মেকার’ প্রথম বার প্রকাশ্যে আনলেন সঞ্জীব আর ‘ওয়ান্ডার শেফ’-এর সিইও রবি সাক্সেনা।
শহরে ‘ওয়ান্ডার শেফ’-এক একটি অনুষ্ঠানে সঞ্জীব কপূর। ছবি: সংগৃহীত।
সালটা ১৯৯৩। সম্ভবত দেশের প্রথম রান্নার অনুষ্ঠানের মুখ ছিলেন তিনি। ‘চায় মেকার’-এ তৈরি চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কলকাতা আর কলকাতার ‘খানা খাজ়ানা’ নিয়ে আনন্দবাজার ডট কমের সঙ্গে আড্ডায় বসলেন সেই সঞ্জীব।
প্রশ্ন: কলকাতার রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে কখনও চা খাওয়া হয়?
সঞ্জীব: সেই ভাবে এখন আর সুযোগ হয় না। আগে অনেক খেয়েছি। কলকাতা ‘স্টক এক্সচেঞ্জ’ অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে বহু বার চা আর বাটার টোস্ট খেয়েছি। তবে এখন কলকাতায় কারও বাড়িতে চায়ের নিমন্ত্রণ পেলে বেশি খুশি হই।
প্রশ্ন: চায়ের সঙ্গে ‘টা’ হিসাবে কোন খাবারটা পছন্দ করেন?
সঞ্জীব: কলকাতায় এলে ঝালমুড়ি আমি খাবই খাব। এখানে ভিক্টোরিয়ার সামনে যে ঝালমুড়ি মাখা পাওয়া যায়, সেটি আমার ভীষণ প্রিয়।
প্রশ্ন: কলকাতার কোন খাবারটার জন্য মুম্বইতে বসেও মনকেমন করে?
সঞ্জীব: কলকাতার মতো মিষ্টি আর কোথাও পাওয়া যায় না। মিষ্টি দই আমার সবচেয়ে প্রিয়।
প্রশ্ন: বর্ষায় মরসুমে কলকাতায় এসেছেন, কোন খাবারটা না খেলে পরে আফসোস করবেন?
সঞ্জীব: কলকাতায় বর্ষায় এসে ইলিশ তো খেতেই হবে।
প্রশ্ন: কোন বাঙালি খাবারটি রাঁধতে ভালবাসেন?
সঞ্জীব: ঝিঙে পোস্ত, চচ্চড়ি, শুক্তো— এই খাবারগুলি রান্না করতে ভীষণ ভালবাসি। শুধু রান্নাই নয়, খেতেও ভালবাসি।
প্রশ্ন: কলকাতায় কোন রেস্তরাঁর খাবার পছন্দ করেন?
সঞ্জীব: আগে কলকাতায় এলে আফসোস করতাম এই ভেবে যে, এখানে বাঙালি খাবারের তেমন কোনও রেস্তরাঁ নেই। তবে এখন তো রেস্তরাঁর ছড়াছড়ি।
প্রশ্ন: সুস্বাদু খাবারকে স্বাস্থ্যকর করে তোলেন কোন মন্ত্রে?
সঞ্জীব: খাবার খাওয়ার সময়ে কেবল স্বাদকে গুরুত্ব দিলে চলবে না। যে খাবার আপনার জিভের জন্য ভাল কিন্তু গোটা শরীরের জন্য খারাপ সেগুলি যতই সুস্বাদু হোক তার থেকে দূরে থাকতে হবে। প্যাকেটজাত খাবার খাওয়ার আগে তার উপকরণগুলি পড়ে নিতে ভুলবেন না। বাহারি উপকরণ, যার নামও হয়তো আপনার জানা নেই, এমন খাবার না খাওয়াই ভাল।
প্রশ্ন: আপনি ভোজনরসিক হয়েও এতটা ফিট আছেন কী ভাবে?
সঞ্জীব: নিজের শরীরের কথা শুনুন। কোনও জিনিসই অতিরিক্ত ভাল নয়। খাবার খেতে হবে বুঝেশুনে। রোজ যে খাবারটি খাচ্ছেন, তা যেন টাটকা হয় সে দিকে নজর রাখতে হবে। বিদেশি শাকসব্জি, ফল না খেয়ে স্থানীয় বাজারে যে সমস্ত মরসুমি ফল, শাকসব্জি পাওয়া যায় সেগুলি বেশি করে খেতে হবে। আর একটা কথা সব সময় মাথায় রেখে চলতে হবে যে, বাড়ির খাবারের চেয়ে ভাল আর কিছুই হয় না। খাবারের পাশাপাশি শরীরকে সচল রাখাও জরুরি। জিমে গিয়ে ভারী কসরত না করতে পারলে হাঁটাহাঁটি করুন, লিফ্টের জন্য দাঁড়িয়ে না থেকে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। তা ছাড়া, ঘুমের সঙ্গে কোনও রকম আপস করলে কিন্তু চলবে না।