Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Lifestyle News

স্ট্রোক ঠেকাতে জীবনযাত্রার পরিবর্তন করুন

স্নায়ু–শল্যবিদ নৃপেন ভৌমিক জানালেন সুজাতা মুখোপাধ্যায়কেস্নায়ু–শল্যবিদ নৃপেন ভৌমিক জানালেন সুজাতা মুখোপাধ্যায়কে

স্ট্রোক হলে রক্ত যতটা জমার তা তো জমেই, তার পাশাপাশি জল জমে ব্রেনের ওই অংশ ফুলে যায়৷

স্ট্রোক হলে রক্ত যতটা জমার তা তো জমেই, তার পাশাপাশি জল জমে ব্রেনের ওই অংশ ফুলে যায়৷

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৮ ১৯:৩৫
Share: Save:

প্র: স্ট্রোক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পৌঁছে গেলে নাকি রোগী পুরো সেরে যান?

উ: কত বড় স্ট্রোক হয়েছে, কোন ধরনের স্ট্রোক হয়েছে, রোগীর সাধারণ স্বাস্থ্য কী রকম, ইত্যাদি বহু কিছুর উপর নির্ভর করে রোগী কতটা সুস্থ হবেন বা আদৌ হবেন কি না৷

প্র: মাথায় জমা রক্ত গলিয়ে দিলেই তো হয়।

উ: ব্রেনের রক্তনালীতে ডেলা জমলে তা গলানো যায় ঠিকই, যাকে থ্রম্বোলিসিস বলে৷ তবে তার কার্যকারিতা কিন্তু প্রশ্নের উর্ধ্বে নয়৷

প্র: কিন্তু আমরা যে শুনেছি এই পদ্ধতি স্ট্রোকের চিকিৎসায় যুগান্ত নিয়ে এসেছে?

উ: এর দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনা হয়নি এখনও৷ তা ছাড়া প্রচুর খরচও আছে৷

প্র: খরচ হোক, কিন্তু রোগী ভাল হচ্ছেন কি না, প্রশ্ন সেটাই৷

উ: সে ব্যাপারে শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি৷

প্র: আর ওই যে শিরা থেকে রক্তের ডেলা বার করে আনার চিকিৎসা?

উ, থ্রম্বেক্টমি। না, এই পদ্ধতি প্রয়োগ করার কোনও অর্থ নেই৷

প্র: কেন?

উ: দেখুন, মস্তিষ্কের রক্তনালীতে রক্তের ডেলা জমলে ওই নালী দিয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়৷ ফলে মস্তিষ্কের যে অংশে রক্ত যোগান দিত এই নালী, সেই অংশ রক্তের অভাবে তিন মিনিটের মধ্যে মরে যায়৷ এ বার আপনি যা-ই করুন না কেন, মৃত অংশে কি প্রাণ সঞ্চার করতে পারবেন?

প্র: তা হলে তো স্ট্রোক হওয়া মানে সব শেষ?

উ: তা নয়৷ ওই অংশের কোষ মরলেও তার আশপাশের কোষেদের যদি ভাল করে ট্রেনিং দেওয়া যায় তারা ওই ঘাটতি অনেকটাই মিটিয়ে দেয়৷

প্র: কী ভাবে?

উ: ফিজিওথেরাপি করে৷ তার আগে চিকিৎসারও বিরাট ভূমিকা আছে৷

প্র: কিন্তু আপনি যেমন বললেন, অপারেশনের তো তেমন ভূমিকা নেই?

উ: তা-ও আছে৷ তবে অনেক বুঝেশুনে করতে হয়৷ করা যায় বলেই করে দিলাম, এমন হলে হবে না৷ ওষুধপত্রের চেয়ে অপারেশন করলে যদি রোগী বেশি ভাল থাকেন তবেই অপারেশনের প্রশ্ন৷

প্র: যেমন?

উ: মাথার শিরা ছিঁড়ে স্ট্রোক হলে এবং রক্ত যদি ব্রেনের ভেতরে জমে থাকে, অপারেশন করতে গেলে প্রচুর সুস্থ কোষের ক্ষতি হয়৷ তাতে ভাল হয় না প্রায় সময়েই৷ সে ক্ষেত্রে ওষুধ এবং ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ–ই প্রধান চিকিৎসা৷

প্র: আর ব্রেনের উপরে জমলে?

উ: রক্ত যদি ব্রেনের একদম উপরের অংশে জমে সুস্থ কোষেদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে কনজারভেটিভ চিকিৎসার চেয়ে অপারেশনে বেশি ভাল ফল হয় অনেক সময়৷

প্র: কনজারভেটিভ চিকিৎসা বলতে?

উ: ওষুধপত্র দেওয়া ও কড়া পর্যবেক্ষণে রাখা৷

প্র: ওষুধে রক্ত গলে?

উ: সময়ের সঙ্গে রক্ত নিজের নিয়মে মিলিয়ে যায়৷ ওষুধ দেওয়া হয় অন্য আর যে ক্ষতি হয় ব্রেনে ও আরও যে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তা সামলাতে৷

প্র: যেমন?

উ: স্ট্রোক হলে রক্ত যতটা জমার তা তো জমেই, তার পাশাপাশি জল জমে ব্রেনের ওই অংশ ফুলে যায়৷ সুস্থ কোষেদের উপর চাপ দিতে থাকে৷ ওষুধ দিয়ে এই চাপ সরানোর চেষ্টা করা হয়, যাতে নতুন করে আর কোনও ক্ষতি না হয়৷

প্র: রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখারও চেষ্টা করা হয় নিশ্চয়ই?

উ: সে তো বটেই৷ না হলে নতুন করে অঘটন ঘটতে পারে৷ তবে বাড়াবাড়ি করলে বিপদ আছে৷ ৭০ বছরের মানুষের ক্ষেত্রে ১৬০–১৭০/৯০–১০০ প্রেশারই কিন্তু স্বাভাবিক৷ তাকে আরও কমাতে গেলে ব্রেনে ঠিক ভাবে রক্ত পৌঁছয় না, বিপদ বাড়ে৷

প্র: আচ্ছা, এই যে অপারেশনের কথা আগে বললেন, তা কি খুলি কেটে করা হয়?

উ: অবশ্যই৷ না হলে ব্রেন পর্যন্ত পৌঁছবেন কী করে?

প্র: খুলির হাড়টা পরে জুড়ে দেওয়া হয়?

উ: যে অপারেশনের কথা এখানে বললাম, ক্র্যানিওটমি, তাতে হাড় তখনই জুড়ে দেওয়া হয়৷ আর এক ধরনের অপারেশন আছে, যাকে বলে ডিকমপ্রেশন সার্জারি, তাতে খুলির কাটা অংশ পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখা হয়৷ ব্রেন স্বাভাবিক হয়ে গেলে পেট কেটে তাকে বের করে বসানো হয় জায়গা মতো৷

প্র: এ তো সাঙঘাতিক ব্যাপার! কাটা খুলি নিয়ে দিন কাটান রোগী?

উ: দিন কাটানো মানে কি আর চলাফেরা, ওঠাবসা করা? ব্রেন ফুলে এমন অবস্থা হয়ে থাকে যে তা না কমা পর্যন্ত রোগী হাসপাতালে শুয়ে থাকেন৷

প্র: খোলা ব্রেনে সংক্রমণের আশঙ্কা তো থাকে?

উ: ওষুধপত্র দেওয়া থাকে৷ সমস্যা হয় না তেমন৷

প্র: কিন্তু ও ভাবে খুলে রাখার কারণটা কী?

উ: স্ট্রোক হলে ব্রেন তো ফুলে যায়৷ বেশি ফুলে গেলে খুলির মধ্যে জায়গার অভাব হয়৷ তাই খুলি কেটে একটু জায়গা করে দেওয়া হয়৷

প্র: এত কাণ্ড করার পরে রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন?

উ: বেঁচে থাকেন৷

প্র: শুধু বেঁচে থাকেন! তা হলে আর লাভ কী?

উ: অনেক সময় বেঁচে থাকাটাই লাভ৷

প্র: অর্থাৎ স্ট্রোক ঠেকানোর চেষ্টা করাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ? আপনারা তো কিছু ওষুধও দেন অনেক সময়৷ রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ৷ সে সব তা হলে নির্দ্বিধায় খাওয়া যাবে?

উ: ঠেকানোর চেষ্টা তো অবশ্যই করতে হবে৷ এ ব্যাপারে সবচেয়ে কার্যকর জীবনযাত্রার পরিবর্তন বা লাইফস্টাইল মডিফিকেশন৷ তবে তা হলেই যে রোগ হবে না এমন নয়৷ আবার এই ধরনের ওষুধপত্র খেয়ে এক ধরনের স্ট্রোক, যাকে ইস্কিমিক স্ট্রোক বলে, তা কিছুটা ঠেকানো গেলেও, অন্য ধরনের স্ট্রোক বা হেমারেজিক স্ট্রোকের চান্স কিন্তু বেড়ে যায়৷ বাড়ে তার জটিলতাও৷

প্র: তা হলে উপায়?

উ: ওই যে বললাম, লাইফস্টাইল মডিফিকেশন৷ তার সঙ্গে ডাক্তার বললে ওষুধও খাবেন৷ কারণ তিনি ওষুধ দেবেন ভালমন্দ বিচার করে৷

স্ট্রোক ঠেকাতে কী কী করণীয়:

যত ছিপছিপে থাকবেন, তত চান্স কমবে বিপদের৷

রক্তচাপ, সুগার ও কোলেস্টেরল–ট্রাইগ্লিসারাইডের সমস্যা থাকলে নিয়ম মেনে ও প্রয়োজনে ওষুধ খেয়ে তাদের বশে রাখুন।

ঘাম ঝড়ানো ব্যায়াম করুন নিয়মিত৷

পরিবারে কম বয়সে স্ট্রোকে মৃত্যুর ইতিহাস থাকলে মাঝেমধ্যে একটু চেকআপ করাতে হবে৷

হালকা স্ট্রোক, যাকে ট্রান্সিয়েন্ট ইস্কিমিক অ্যাটাক বলে, তার লক্ষণ দেখা দিলে, চলতে হবে ডাক্তারের পরামর্শমতো৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Stroke Health Tips
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE