Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Children's Day 2022

স্কুল বন্ধ, নজরদারির ‘অভাবে’ ক্রমশ বাড়ছে শিশুশ্রমিক

মাসুম, কিরণ, মুসকানদের গন্তব্য রেস্তরাঁ, গ্যারেজ।  শিশু দিবসেও এদের একই রুটিন। অথচ দেশে আইন রয়েছে। তবে বাস্তব হল, আজকের দিনে এরা সকলেই ‘শিশু শ্রমিক’।

আজ শিশু দিবস। কিন্তু শহরের রাস্তায় গোলাপ বিক্রিতে ব্যস্ত ছোট্ট মেয়েটি তা আদৌ জানে কি? ছবি: সুমন বল্লভ

আজ শিশু দিবস। কিন্তু শহরের রাস্তায় গোলাপ বিক্রিতে ব্যস্ত ছোট্ট মেয়েটি তা আদৌ জানে কি? ছবি: সুমন বল্লভ

মেহেদি হেদায়েতুল্লা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২২ ০৫:২৫
Share: Save:

জন্মের পর থেকে বাবার সঙ্গ পায়নি বছর দশেকের রবি (নাম পরিবর্তিত)। মায়ের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বাবা চলে যান ভিন্ রাজ্যে। রবি উত্তর দিনাজপুর জেলার পাঞ্জিপাড়ার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি ইটভাটায় কাজ করে। শুধু নিজের পেট চালানো নয়, এখন মায়ের দায়িত্বটাও তার। স্কুল ছেড়ে তাই ঠাঁই ইটভাটায়। অসুস্থ মায়ের ওষুধের খরচও রবিকে জোগাড় করতে হয়। রবির মতো মাসুম, কিরণ, নিশা মুসকানরাও সকাল হলেই কাজে বেরিয়ে পড়ে। নিশা ইটভাটায় মাটির কাজ করে। মাসুম, কিরণ, মুসকানদের গন্তব্য রেস্তরাঁ, গ্যারেজ। শিশু দিবসেও এদের একই রুটিন। অথচ দেশে আইন রয়েছে। তবে বাস্তব হল, আজকের দিনে এরা সকলেই ‘শিশু শ্রমিক’। শ্রম দফতরের দাবি, শিশুদের দিয়ে কাজ করানো বন্ধ করতে অভিযান চালানো হচ্ছে, নিরন্তর প্রচারও করা হয়। জেলার করণদিঘি, ডালখোলা, পাঞ্জিপাড়া, চাকুলিয়া, ইসলামপুর, ডালখোলা এবং রায়গঞ্জ শহরেও বহু খাবারের দোকান, গ্যারাজ, ইটভাটায় এমন শিশু শ্রমিকের দেখা মিলবে।

উত্তর দিনাজপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক মুক্তার আলমের দাবি, “একদিকে নজরদারি অভাবে বাড়ছে শিশুশ্রম। অন্যদিকে এক সময় যে সমস্ত শিশুদের উদ্ধার করে শিশু শ্রম স্কুলে ভর্তি করেছিলাম সেই স্কুল বন্ধ করে দেওয়ায় শিশুরা ফের শ্রমিকে পরিণত হয়েছে। ওই স্কুলের শিক্ষকদের ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, শিক্ষকেরাও এখন অনেকে শ্রমিকের কাজ করছেন।’’

শিশু শ্রমিকদের স্কুলে আনতে কেন্দ্রের ‘জাতীয় শিশু শ্রমিক প্রকল্প’ শুরু হয় ১৯৮৮ সালে। একাধিক শিশুশ্রমিক স্কুল তৈরি হয়। দেশের প্রতিটি রাজ্যে জেলা ভিত্তিক এই স্কুলে ৬-১৪ বছর বয়সি শিশু শ্রমিকদের বিনামূল্যে শিক্ষা ও মিড-ডে মিলের খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সঙ্গে প্রতি মাসে বৃত্তি বাবদ ১৫০ টাকাও দেওয়া হত। অভিযোগ, উত্তর দিনাজপুরে ৩৫টি এমন শিশুশ্রমিক স্কুল ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে বন্ধ। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই সব স্কুলের শিশুরা ফের পুরানো কাজে ফিরে গিয়েছে। কেউ চলে গিয়েছে ভিন্ রাজ্যে। জেলা শ্রম দফতরের আধিকারিক বিদিশা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছিল, তারা এই স্কুল চালাতে পারবে না। এই বিষয় তারা চিঠি পাঠায়। ওই স্কুলগুলিকে রাজ্যে সরকারের সর্বশিক্ষা মিশন অভিযানের আওতায় আনার জন্য সার্ভে করে একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।’’ রায়গঞ্জের বিজেপি সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী বলেন, ‘‘শিশু শ্রমিক স্কুল কেন বন্ধ হয়ে আছে, তা আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

রাজ্য শ্রম দফতরের তরফে নজরদারিতেও সমস্যা রয়েছে বলে অভিযোগ। শিশুশ্রম অবাধে চলছে বলে অভিযোগ উঠলেও, পরিদর্শকের অভাবে গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে উত্তর দিনাজপুরে শিশুশ্রম বিরোধী অভিযান ‘বন্ধ’ রয়েছে। শ্রম দফতর সূত্রে খবর, জেলার ন’টি ব্লক, চারটি পুরসভা ও দু’টি আঞ্চলিক দফতর মিলিয়ে ১৫টি পরিদর্শকের পদ থাকলেও গত পাঁচ বছর ধরে চারটি পদ ফাঁকা। শ্রম দফতরের জেলা আধিকারিকদের দাবি, শূন্যপদে নিয়োগের জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যে সমস্ত ব্লকে শূন্যপদ রয়েছে সেইসব এলাকায় অন্য পরিদর্শকদের বাড়তি দায়িত্ব দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। ইসলামপুর শ্রম দফতরের সহ আধিকারিক ডালটন বিশ্বাস বলেন, ‘‘শিশুশ্রম রোধে ব্লকে নিয়মিত অভিযান চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child Labor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE