Advertisement
E-Paper

sperm donation: স্পার্ম ডোনেশন বিষয়ে...

স্পার্ম ডোনেশনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করলেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়।

সৌরজিৎ দাস

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২২ ০৮:২৯

চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির ফলে এখন বন্ধ্যাত্ব নিবারণের হরেক পথ খুলে গিয়েছে। যে সব দম্পতির সন্তানধারণের সমস্যা হচ্ছে বা যিনি ‘সিঙ্গল মাদার’ হতে চান, তাঁরা স্পার্ম ডোনেশন পদ্ধতিটির মাধ্যমে সন্তানধারণের সুখ লাভ করছেন। যে সব ব্যক্তি তাঁদের স্পার্ম ডোনেট করেন, তাঁদের বলা হয় স্পার্ম ডোনর। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) অনুযায়ী, স্পার্ম ডোনরদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হলে, স্পার্ম ব্যাঙ্কের মাধ্যমেই যাওয়া উচিত। যখন কোনও ক্লিনিকে স্পার্ম সংগ্রহ করা হয়, তখন সেটিকে বিশেষ পরিবেশে রাখা হয়। এবং প্রয়োজনে যখন সেটি কোনও মহিলার প্রজনন অঙ্গে (রিপ্রোডাকটিভ অরগ্যান) বপন (ইনসেমিনেট) করা হয়, তখন এই পদ্ধতিকে বলে ইনট্রাইউটেরাইন ইনসেমিনেশন। আর যখন এই স্পার্ম ল্যাবরেটরিতে কোনও পরিপক্ক ডিম্বাণুর (ফার্টিলাইজ়ড এগ) ফার্টিলাইজ়েশন-এর জন্য ব্যবহার করা হয়, তখন সেই পদ্ধতিকে বলা হয় ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজ়েশন। এই স্পার্ম ডোনেশনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করলেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়।

ডোনর কখন লাগে

ডা. চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, কেউ সিঙ্গল মাদার হতে চান বা কোনও দম্পতির বিশেষ পরিস্থিতিতে ডোনরের প্রয়োজন হয়। যেমন,

বিভিন্ন ধরনের টেস্টিকুলার সমস্যা, টেস্টিস-এর ডাক্ট-এ ব্লকেজ, ভ্যাসেকটমি কিংবা কেমোথেরাপির ফলে বন্ধ্যাত্বের কারণে ইজ্যাকুলেশনে সমস্যা হচ্ছে পুরুষ সঙ্গীর।

পুরুষ সঙ্গী অলিগোজ়ুস্পারমিয়া (স্পার্ম কাউন্টে হ্রাস) কিংবা অন্য কোনও স্পার্ম কিংবা সেমিনাল ফ্লুয়িড অ্যাবনরমালিটি-তে ভুগছেন।

পুরুষ সঙ্গীর ইরেকটাইল ডিসফাংশনের (সঙ্গমের সময়ে তাঁর যৌনাঙ্গ দৃঢ় হয় না) বা বীর্যপাতে (ইজ্যাকুলেশন) সমস্যা রয়েছে।

স্পার্মের মান খারাপ হওয়ার কারণে তা ভ্রুণ তৈরিতে সক্ষম নয়।

পারিবারিক সূত্রে রোগ কিংবা জেনেটিক ডিসঅর্ডার রয়েছে পুরুষ সঙ্গীর, যা দম্পতির সন্তানের মধ্যে চলে আসতে পারে।

সমকামী সঙ্গীদের ক্ষেত্রে।

স্পার্ম ডোনরের ক্ষেত্রে

যে ব্যক্তি স্পার্ম ডোনেট করছেন, তাঁর ক্ষেত্রে আইসিএমআর-এর কিছু নির্দেশাবলি রয়েছে বলে জানালেন ডা. চট্টোপাধ্যায়। যেমন,

ব্যক্তির এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি এবং সি সংক্রমণ, হাইপারটেনশন, ডায়াবিটিস, সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজ়িজ় এবং থ্যালাসেমিয়া-র মতো নির্ণয়যোগ্য ও সাধারণ জেনেটিক রোগ থাকা চলবে না।

ডোনরের বয়স ২১ বছরের নীচে বা ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে হলে চলবে না।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সিমেন দান করার পরে সেটি অ্যানালিসিস করতে হবে, বিশেষত সিমেন অ্যানালাইজ়ার দিয়ে। যদি এই সিমেন অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাকটিভ টেকনোলজি (এআরটি)-র জন্য ব্যবহার করা হয় তা হলে সিমেন অ্যানালিসিস-এর জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে মেথড ম্যানুয়াল রয়েছে, সেই অনুযায়ী সিমেনটি ‘নর্মাল’ হতে হবে।

ডোনরের ব্লাড গ্রুপ ও আরএইচ স্টেটাস নির্ণয় করতে হবে এবং তার রেকর্ড রাখতে হবে স্পার্ম ব্যাঙ্কে।

উচ্চতা, ওজন, বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, চোখ ও গায়ের রং, মানসিক রোগ-সহ গুরুতর রোগ এবং পারিবারিক রোগের ইতিহাস— ডোনরের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যেরও রেকর্ড রাখা দরকার।

অন্যান্য নির্দেশাবলি

স্পার্ম ডোনরদের ক্ষেত্রে আইসিএমআর-এর আরও কিছু নির্দেশিকা রয়েছে।

কারা স্পার্ম ডোনেট করতে পারেন এবং কারা পারেন না, তার সুস্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। ভারতে যে দম্পতি স্পার্ম ডোনেশন পদ্ধতির মাধ্যমে সন্তানধারণ করতে চাইছেন, তাঁদের কোনও আত্মীয়, স্ত্রী-র কোনও বন্ধু এমনকি স্বামী নিজেরও স্পার্ম ডোনেট করতে পারবেন না।

ডোনর থাকবেন অজ্ঞাতনামা। যে ক্লিনিকটি কিংবা দম্পতি ডোনরের স্পার্ম ব্যবহার করছেন তাঁদের কারও ওই ডোনরের পরিচয় সম্পর্কে কোনও কিছু জানার অধিকার নেই।

স্পার্ম ব্যাঙ্ক থেকে স্পার্ম জোগাড় করার দায়িত্ব বর্তায় এআরটি ক্লিনিকগুলির উপরে।

ডোনরের উচ্চতা, ওজন, বয়স, পেশা, গায়ের রং, পারিবারিক ইতিহাস, রোগ থেকে মুক্তি, জাতিগত উৎপত্তি এবং ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্ট— এই সব বিষয়ে ক্লিনিক এবং দম্পতির যথাসম্ভব তথ্য জানার অধিকার রয়েছে।

ডোনরের সিমেনের পরীক্ষা এবং যে সিমেন ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলির জন্য দম্পতির কাছ থেকে যথাযথ চার্জ নেওয়ার অধিকার রয়েছে এআরটি ক্লিনিকের।

ডোনরের নির্ধারিত বয়সসীমাও যথাসম্ভব মেনে চলা উচিত বলে জানালেন ডা. চট্টোপাধ্যায়।

ডোনেশনের প্রক্রিয়া

স্পার্ম ডোনেশনের আগে ডোনরকে বলা হয় ডোনেশনের অন্তত ২ থেকে পাঁচ দিন আগে হস্তমৈথুন না করতে কিংবা সঙ্গমে লিপ্ত না হতে। কোনও ক্লিনিক বা স্পার্ম ব্যাঙ্কে স্পার্ম ডোনেশনের পরে সেটিকে ঠিকমতো সংরক্ষণ করে অন্তত ছ’মাস কোয়রান্টিন-এ রাখা হয়। এর মধ্যে সিমেন স্যাম্পলটি পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া হয় তাতে কোনও ছোঁয়াচে রোগের আঁচ মিলছে কি না। যদি ফল নর্মাল আসে, তা হলে স্যাম্পলটির আবার পরীক্ষা করা হয় কোয়ান্টিটি, মুভমেন্ট এবং কোয়ালিটি-র জন্য। যদি এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্রাইটিরিয়া পূরণ করে, তা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি স্পার্ম ডোনেট করার যোগ্যতা অর্জন করেন। যদিও তার মাঝে তাঁকে বেশ কিছু রক্তের পরীক্ষা ও ইউরিন টেস্ট করাতে হয়। পরীক্ষার মধ্যে থাকে এইচআইভি হিউম্যান টি সেল লিমফোট্রপিক ভাইরাসেস (এইচটিএলভি), হেপাটাইটিস বি ক্যারিয়োটাইপ (ব্যক্তির জেনেটিক মেকআপ), হেপাটাইটিস সি সিস্টিক ফাইব্রোসিস (ব্যক্তি ক্যারিয়ার কি না), সাইটোমেগালোভাইরাস সিফিলিস, ক্ল্যামাইডিয়া গনোরিয়া। ডোনরের স্যাম্পলের সংখ্যায় রকমফের থাকতে পারে, যদিও গড়ে মোটামুটি ১৫টি স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়।

ডোনরের অধিকার, কর্তব্য

ডা. চট্টোপাধ্যায় বললেন, স্পার্ম ডোনরদের বেশ কিছু অধিকার থাকে। পরিবর্তে এটা ধরে নেওয়া হয়, তাঁরা কিছু কর্তব্যও পালন করবেন। যেমন,

ডোনরদের সব তথ্য গোপন রাখতে হবে। যাঁর বা যাঁদের সঙ্গে এই তথ্যে যোগ রয়েছে তাঁর বা তাঁদের সম্মতি ছাড়া স্পার্ম ডোনেশনের যাবতীয় খুঁটিনাটি থাকবে একমাত্র আইসিএমআর-এর সেন্ট্রাল ডেটাবেস-এ। তবে শুধুমাত্র কোর্টের নির্দেশে এই তথ্য প্রকাশ করা যাবে।

ডোনরকে অধিকার দেওয়া হয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাঁর সম্পর্কে কোন তথ্য কাকে দেওয়া যাবে, যদি না আদালতের কোনও নির্দেশ থাকে।

ডোনরকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁর স্পার্মের সাহায্যে যে সন্তানের জন্ম হবে, তার উপরে ডোনরের অধিকার থাকবে না।

কোনও অ্যাসিসটেড রিপ্রোডাকটিভ প্রসিডিয়োর প্রযুক্তি ডোনরের উপরে প্রয়োগ করা যাবে না, যদি না তিনি লিখিত ভাবে ওই প্রক্রিয়ার জন্য সম্মতি দিয়ে থাকেন।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy