Advertisement
E-Paper

ক্ষতি শিশুমনের, উড়ানের আনন্দ দিতে পারেন মা-বাবাই

লেখা ও ছবির মাধ্যমে করোনাকালের অনুভূতি খাতায় ফুটিয়ে তুলে আজকের শিশুরাও পারে আগামীর দলিল রচনা করতে।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২১ ০৬:১১
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

‘তোর জন্য খোলা টিফিন বক্স...’

সেই ভাগ করে খাওয়া কিংবা টিফিন পিরিয়ডে হুটোপাটির ‘স্বাদ’ আজ কেড়ে নিয়েছে করোনা।
প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের মাঝের কিছু দিন খানিকটা মুক্তির স্বাদ মিললেও, ফের ‘বন্দিজীবন’ শুরু বাচ্চাদের। সঙ্গে দোসর, কোভিডে আক্রান্ত হলে কোয়রান্টিনে থাকা।

করোনায় এই জোড়া উপদ্রব শিশুদের মানসিক বিকাশকে বিপর্যস্ত করছে বলে জানাচ্ছেন মনোরোগ চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘এই সময়টা বাবা-মায়ের আসল পরীক্ষা। একমাত্র তাঁরাই সন্তানকে অবসাদগ্রস্ত হওয়া থেকে বাঁচাতে পারেন।’’

সহপাঠীর টিফিন বক্স থেকে লুচি বা জিলিপি তুলে দৌড় দেওয়া, এক বেঞ্চ থেকে আর এক বেঞ্চে লাফানো, মাঠে হুটোপাটি করে গায়ে ধুলো মাখা কিংবা ছুটির ঘণ্টা বাজলেই দৌড়ে বাসে বা গাড়িতে ওঠা— এইগুলি
আপাত দৃষ্টিতে বাচ্চার দুরন্তপনার ইঙ্গিত দিলেও, বিজ্ঞানের পরিভাষায় হল ‘সাইকোমোটর অ্যাক্টিভিটি’। এমনটাই জানিয়ে ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’-র অধিকর্তা, মনোরোগ চিকিৎসক প্রদীপ সাহা বলেন, ‘‘করোনার কারণে বাড়িতে বন্দি হয়ে থাকায় বাচ্চাদের সাইকোমোটর অ্যাক্টিভিটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে মস্তিস্ক, স্নায়ু-সহ তাদের যে মানসিক বিকাশ হয়, তা ব্যাহত হচ্ছে। তবে করোনা নিয়ে শিশুমনে থাকা কৌতূহল কাটাতে হবে বাবা-মাকেই। যাতে বাচ্চার মনেও আশার আলো জেগে থাকে।’’

সন্তানের মানসিক বিকাশ যাতে কোনও ভাবে থমকে না যায়, তার জন্য মা-বাবাকে সময় বেশি দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালও। বলছেন, ‘‘সব সময়ে শুধু পড়াশোনা নয়। বরং বাচ্চাকে বাড়ির কাজেও বেশি করে যুক্ত করতে হবে। যেমন, মা হয়তো রান্না করছেন। তিনি বাচ্চাকে বললেন, ‘আমাকে অমুক জিনিসটা দাও তো।’ এ ছাড়াও, সন্তানের সঙ্গে কথা বলতে হবে। বিভিন্ন খেলনা দিতে হবে সময় কাটানোর জন্য।’’ সুযোগ থাকলে কিছুটা সময়ের জন্য বাচ্চাকে খোলা বারান্দা বা ছাদে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দিচ্ছেন নীলাঞ্জনাদেবী।

অন্য দিকে, কোনও শিশু করোনায় আক্রান্ত হলে তাকে কী ভাবে কোয়রান্টিনে রাখা যাবে, তা নিয়েও বিভ্রান্ত পরিজনেরা। শিশু মনোরোগ চিকিৎসক তথাগত চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, বাচ্চা যদি একটি আলাদা ঘরে থাকে, তা হলে তার কাছে অন্তত দু’জন যেতেই পারেন। এবং সেই যাওয়াটা খুব জরুরি। তথাগতবাবু বলেন, ‘‘ছোট পরিবারে তো এমনও হতে পারে, বাবা-মা করোনা আক্রান্ত হয়ে কোয়রান্টিনে। সেখানে বাচ্চাটি একা, আলাদা থাকছে। তাই করোনার বিষয়ে আগে থেকেই খোলামেলা আলোচনা করা দরকার। আর আলাদা থাকলেও বাচ্চার যেটা পছন্দ, সেটা তাকে দিতে হবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও অনেক বাচ্চা খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। কারও কারও ক্ষেত্রে অমনোযোগী, খিদে কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা যাচ্ছে। পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজ়অর্ডারেও আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে।’’

‘‘একদম ছোট বাচ্চাকে কোয়রান্টিনে পাঠানোর প্রশ্নই নেই। তাতে বন্ধ ঘরে একা থাকতে গিয়ে আতঙ্কিত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারাতে পারে শিশুটি’’— বলছেন নীলাঞ্জনাদেবী। তিনি এটাও জানাচ্ছেন, যে বয়সের বাচ্চারা একা থাকতে পারে, তারা কোভিড আক্রান্ত হয়ে ঘরে আলাদা থাকলেও তাদের সঙ্গে কথা বলা, ভিডিয়ো-কলে যোগাযোগ রাখা, ভাল খাবার, খেলার জিনিস দেওয়া, এমনকি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর উপরে জোর দিতে হবে।

তবে করোনা আক্রান্ত হলেও বাচ্চাদের কোয়রান্টিনে পাঠাতে নারাজ শিশুরোগ চিকিৎসক অরুণ সিংহ। তাঁর কথায়, ‘‘পাঁচ বছরের কম কোনও বাচ্চাকে করোনা হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে দেখিনি। তাই বড় পরিবার হলে আলাদা কথা। কিন্তু ছোট পরিবারে বাবা-মায়ের সঙ্গেই সেই বাচ্চা থাকবে। তাতে ভয় নেই। ১০ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের করোনা হলেও জ্বর-সর্দি-কাশির ওষুধেই কাজ হয়। মনে রাখতে হবে, যে বাচ্চা মাকে ছাড়া থাকতে পারে না, তাকে দূরে রাখলে কিন্তু বড় আতঙ্ক বাচ্চাটিকে গ্রাস করবে। বন্দি জীবন বাচ্চাদের ক্ষতি করে।’’

কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে থাকার সময়ে নিজের অনুভূতি ডায়েরিতে লিখেছিলেন অ্যানলিজ়ে মারি ফ্রাঙ্ক। সেই ডায়েরি আজ বিশ্বের কাছে দলিল। তেমনই লেখা ও ছবির মাধ্যমে করোনাকালের অনুভূতি খাতায় ফুটিয়ে তুলে আজকের শিশুরাও আগামীর দলিল রচনা করতে পারে বলেই মত প্রদীপবাবুর।

COVID-19 coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy