Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Diwali 2020

বাজি-দূষণ পাল্টে দিতে পারে কোভিডে সুস্থতার হার

করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর নিরিখে রাজ্যের মধ্যে কলকাতার স্থান একদম শীর্ষে।

আতসবাজির এমন ধোঁয়াই স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক। ফাইল চিত্র

আতসবাজির এমন ধোঁয়াই স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক। ফাইল চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২০ ০১:৪৩
Share: Save:

‘‘এমনিতেই কালীপুজোর আগে কেমন যেন একটা ভয় শুরু হয় মনের মধ্যে। বাজির ধোঁয়া ওখান থেকে ঘরে ঢুকবে নাকি অন্য কোনও জায়গা থেকে, সব সময়ে এই আতঙ্কটা চলতে থাকে মনের ভিতর। এ বছর আবার তো করোনাও রয়েছে। ফলে কী হবে, কিছু বুঝতে পারছি না।’’— কথাগুলো বলছিলেন দক্ষিণ কলকাতার কাঁকুলিয়া রোডের বাসিন্দা অসীম মুখোপাধ্যায়। ৮৫ বছর বয়সি অসীমবাবু ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত। অন্য বছরগুলোয় তাঁকে নিয়ে কালীপুজোর আগে এমনিতেই উদ্বেগে থাকেন পরিবারের সদস্যেরা। সৌজন্যে বাজি-দূষণ! যে উদ্বেগ এ বছর হাজারো গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে করোনা সংক্রমণ।

অসীমবাবুর ছেলে কালীচরণ মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘শুধু আমার বাবার জন্যই বলছি না, শহরের সব বয়স্ক মানুষ, অসুস্থ মানুষের কথা ভেবেই এ বছরটা অন্তত যে কোনও বাজি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন।’’ কালীচরণবাবু ভুল কিছু বলেননি। কারণ পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মধ্যে বয়স্ক মানুষের সংখ্যার নিরিখে কলকাতা রয়েছে একদম প্রথম সারিতে। শহরে ষাটোর্ধ্ব মানুষের শতকরা হার ১১.৭৬ শতাংশ। অর্থাৎ, ৫ লক্ষ ৩০ হাজারের মতো। যেখানে রাজ্যে মোট ষাটোর্ধ্ব মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭৫ লক্ষ। ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর পপুলেশন সায়েন্সেস’-এর ‘ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ়’ বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অপরাজিতা চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘শুধু বয়স্ক মানুষের সংখ্যার নিরিখেই নয়, একা থাকেন এমন বয়স্কদের নিরিখেও কলকাতা দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানে।’’

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা আবার জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে কোভিডে যত জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে বয়স্কদের সংখ্যাই সর্বাধিক। যেমন, রবিবারই ৪৬-৬০ বছর বয়সিদের মৃত্যুর হার ছিল ১.৯ শতাংশ, ৬১-৭৫ বছর বয়সি রোগীদের মৃত্যুর হার ছিল ৫.৫৪ শতাংশ এবং ৭৫ বছরের ঊর্ধ্বে করোনা আক্রান্তের মৃত্যুহার ছিল ১২.৬৪ শতাংশ।

আরও পড়ুন: বাজি পোড়ানোয় ‘নিষেধাজ্ঞা’ শহরের বহু আবাসন কমিটির​

পরিসংখ্যান এ-ও বলছে, শহরের প্রায় ৪৫ লক্ষ জনসংখ্যার (২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী) মধ্যে ২৭ লক্ষ নাগরিকেরই শ্বাসযন্ত্র, ফুসফুসজনিত কোনও না কোনও রোগ রয়েছে। যে রোগের প্রাবল্য বছরের এই সময়ে, অর্থাৎ ঋতু পরিবর্তনের সময়ে বাড়ে। ‘কলেজ অব মেডিসিন অ্যান্ড সাগর দত্ত হাসপাতাল’ তথা বর্তমানে কোভিড চিকিৎসার অন্যতম হাসপাতালের ‘রেসপিরেটরি মেডিসিন’ বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর শুভাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শ্বাসকষ্টের রোগীদের সমস্যা শীতের সময়ে এমনিতেই বাড়ে। তার পাশাপাশি এই শ্বাসযন্ত্রজনিত সংক্রমণের মধ্যে বাজির ধোঁয়ার দূষণ হলে সুস্থ মানুষদেরও সংক্রমণের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে।’’

এর পাশাপাশি বিশেষজ্ঞেরা আরও একটি তথ্যের উল্লেখ করে জানাচ্ছেন, কেন চলতি বছরের কালীপুজোয় বাজি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। কারণ, করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর নিরিখে রাজ্যের মধ্যে কলকাতার স্থান একদম শীর্ষে। আবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, সংক্রমিতের সংখ্যার নিরিখে দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে চতুর্থ স্থানে! ‘অ্যাসোসিয়েশন অব চেস্ট ফিজ়িশিয়ান্স ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর সদস্য বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ মলয় মৈত্র বলছেন, ‘‘শহরের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষেরই কোনও-না-কোনও শ্বাসকষ্টের রোগ রয়েছে। ফলে তার মধ্যে করোনা সংক্রমণ ও বাজির দূষণ হলে যে পরিস্থিতিটা তৈরি হবে, তা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব তো?’’

আরও পড়ুন: বাজি বিক্রি নয়, সিদ্ধান্তে কালিকাপুর বাজিবাজার​

শহরের বায়ুদূষণ রোধের রূপরেখা তৈরির জন্য কলকাতা পুরসভা গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান তথা পরিবেশবিদ্যার অধ্যাপক অনিরুদ্ধ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এই বছর যে কোনও মূল্যে বাজি ফাটানো, পোড়ানো আটকাতেই হবে। এর কোনও বিকল্প নেই।’’ শহরের কোভিড হাসপাতালের এক চিকিৎসক আবার বলছেন, ‘‘মনে রাখতে হবে, আমরা কিন্তু করোনা সংক্রমণের সুপ্ত আগ্নেয়গিরির উপরে বসে রয়েছি। সে কারণে সংক্রমিত হওয়ার পরেও রাজ্যে সুস্থ হয়ে ওঠার হার (ডিসচার্জ রেট) এখনও পর্যন্ত ৮৮.৩ শতাংশ। বাজির ধোঁয়া কিন্তু সেই হিসেব যে কোনও মুহূর্তে পাল্টে দিতে পারে। এটা ভুলে গেলে বিপদ অনিবার্য!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE