E-Paper

রক্ত জমাট বাঁধলে উপেক্ষা নয়

ডিপ ভেন থ্রম্বোসিস হতে পারে নানা কারণে, যা ক্ষেত্রবিশেষে হতে পারে প্রাণঘাতীও। কী ভাবে সতর্ক থাকবেন, জেনে নিন।

সায়নী ঘটক

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৫ ০৭:৩৪

—প্রতীকী চিত্র।

শরীরের কোনও অংশে রক্ত জমাট বাঁধলে সাবধান হওয়া প্রয়োজন। চোট-আঘাতের ফলে কিংবা অন্য একাধিক কারণে শিরায় রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। সেখান থেকে হতে পারে ডিপ ভেন থ্রম্বোসিস, যা কিছু ক্ষেত্রে হতে পারে প্রাণঘাতীও। তাই লক্ষণ দেখলেই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

ইন্টারভেনশন রেডিয়োলজিস্ট ডা. মৌসম দে জানালেন, কী কী লক্ষণ দেখা দিলে সাবধান হওয়া প্রয়োজন। ‘‘শরীরের প্রায় সব অঙ্গ নিয়েই আমরা খুব সতর্ক থাকি, যেমন হার্ট, ফুসফুস, লিভার ইত্যাদি। শুধু অবহেলা করি নিজেদের পা দু’টিকে। অনেক সময়েই এই রক্ত জমাট বাঁধার প্রথম লক্ষণ দেখা দেয় আমাদের পায়ে। সাবধান না হলে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে, ক্ষেত্রবিশেষে প্রাণসংশয়ও হতে পারে,’’ বললেন ডা. দে।

কখন সাবধান হবেন?

পা ফুলে যাওয়া, পায়ের শিরায় রক্ত জমাট বেঁধে কালো ছোপ তৈরি হওয়া, হাঁটতে হাঁটতে বসে পড়া, হঠাৎ অসহ্য যন্ত্রণা— এই ধরনের লক্ষণ দেখলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ডা. দে জানালেন, নাইট ক্র্যাম্প অর্থাৎ রাতে ঘুমের মধ্যে পায়ের শিরায় টান ধরাও এর অন্যতম উপসর্গ। ক্র্যাম্প মানেই রক্ত জমাট বাঁধা নয়, কিন্তু এর একটি লক্ষণ হতে পারে শিরায় টান ধরা। তাই শিরায় রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক না হলেই দেখা দরকার, রক্ত জমাট বাঁধেনি তো?

কাদের ঝুঁকি বেশি?

মধুমেহ রোগ যাঁদের আছে, তাঁদের শরীরে এই রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেশি। যাঁরা নিয়মিত ধূমপান করেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। সাধারণত বয়স্ক মানুষদের মধ্যে এই উপসর্গ বেশি দেখা যায়। যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে কোনও অসুস্থতার কারণে শয্যাশায়ী, তাঁদের শিরায় রক্তপ্রবাহের গতিবেগ কমে যায়। তা ছাড়া একটানা পা ঝুলিয়ে অনেকক্ষণ বসে থাকলে, খেলতে গিয়ে চোট-আঘাত পেলে, একটানা দীর্ঘক্ষণ গাড়ি চালালেও এই উপসর্গ দেখা দিতে পারে। রক্ত জমাট বাঁধার পরে তা নির্ণয় করে ব্যবস্থা না নিলে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে ফুসফুসে। তাকে বলে পালমোনারি এম্বলিজ়ম। ক্রমে তা বিকল করে দিতে পারে হৃদ্‌যন্ত্রও।

শনাক্তকরণ ও নিরাময়

ডা. মৌসম জানালেন, ব্লাড ক্লটের সমস্যায় আগে প্রাথমিক ভাবে হেপারিন দিয়ে চিকিৎসা করা হত। এখন চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির ফলে সরাসরি ক্লটটিকেই বাদ দিয়ে দেওয়া হয় শরীর থেকে। ‘‘শিরায় রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা কারও ক্ষেত্রে খুব দ্রুত, কারও ক্ষেত্রে তা নয়। ডপলার টেস্টের মাধ্যমে এই ব্লাড ক্লট নির্ণয় করা যায় প্রাথমিক ভাবে। অ্যাঞ্জিয়োগ্রাফিও করানো হয়। ডিভাইসের সাহায্যে শুধু জমাট বাঁধা রক্তপিণ্ডটি শরীর থেকে বাদ দেওয়া যায়। এতে রোগী খুব দ্রুত সেরে ওঠেন। অস্ত্রোপচারের পরের দিনই বাড়ি চলে যেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ফুসফুস বা অন্যত্র ছড়িয়ে পড়া থেকে আটকানো যায় আগেই,’’ বললেন ডা. দে। তবে ফুসফুসে ছড়িয়ে গেলেও সময় থাকতে নির্ণয় করা গেলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব।

ডিপ ভেন থ্রম্বোসিস কখনও কখনও খুব দ্রুত সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। হাতে সময় কম থাকলে হৃদ্‌যন্ত্রের ঠিক আগে আইভিসি শিরায় একটি ছাতার মতো আকৃতির ফিল্টার লাগিয়ে দেওয়া হয় অনেক সময়ে। ‘‘এটি ছাঁকনির মতো কাজ করে ও ফুসফুস বা হার্টে সরাসরি ব্লাড ক্লট পৌঁছতে দেয় না,’’ বললেন ডা. দে।

সাবধানতা

ব্লাড ক্লট হওয়া আটকানো সব সময়ে রোগীর হাতে থাকে না। তবে ধূমপানের অভ্যেস ত্যাগ করা, দীর্ঘক্ষণ একটানা পা ঝুলিয়ে বসে না থাকা, বিরতি দিয়ে গাড়ি চালানো… এই ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করা যায়। যাঁরা শয্যাশায়ী, তাঁদের সম্ভব হলে নিয়মিত হাঁটানো বা পাশ ফিরিয়ে দেওয়া, প্রাথমিক কিছু এক্সারসাইজ় করানো… জরুরি। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, রক্ত জমাট বাঁধলে সময় থাকতে তা নির্ণয় করা ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডপলার টেস্ট করানো। খেলতে গিয়ে পায়ে চোট লাগলেও স্পোর্টস মেডিসিনের চিকিৎসকের কাছে গিয়ে বিশদে পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।

অনেকেই পুরনো ব্যথা বা চোট-আঘাত দীর্ঘ দিন ফেলে রাখেন। সেটা করবেন না। মনে রাখতে হবে, ডিপ ভেন থ্রম্বোসিস শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে ছড়িয়ে যেতে খুব বেশি সময় নেয় না। তাই সময় থাকতে সচেতনতাই এই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Blood Clots Health Problems Health care

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy