Advertisement
E-Paper

পরীক্ষামূলক প্লাজ়মা থেরাপির খুঁটিনাটি

প্লাজ়মা থেরাপি কী? করোনার মোকাবিলায় কী ভাবে কাজ করছে এই চিকিৎসা?সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম), মার্স (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ইত্যাদি ভাইরাসের দাপট যখন বেড়েছিল, তখনও এই থেরাপি করা হয়েছে।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২০ ০১:৪৯
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

গত কয়েক সপ্তাহে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় বারবার নাম উঠেছে ‘প্লাজ়মা থেরাপি’র। চিকিৎসকদের কথায়, এই থেরাপি নতুন নয়। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ১৯২০ সালের ফ্লুয়ের সময়েও এই চিকিৎসার চল ছিল। সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম), মার্স (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ইত্যাদি ভাইরাসের দাপট যখন বেড়েছিল, তখনও এই থেরাপি করা হয়েছে। তবে এই চিকিৎসা পদ্ধতি এখনও পরীক্ষাধীন। তাই কোন পরিস্থিতিতে এটি কেমন ফল দেবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

প্লাজ়মা থেরাপি ও প্লাজ়মাফেরেসিস-এর পার্থক্য

রক্তের জলীয় অংশকে বলা হয় প্লাজ়মা। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। কোভিড-১৯ রোগের ক্ষেত্রে করোনা-মুক্ত হয়ে যাওয়া ব্যক্তির প্লাজ়মা করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে ইনজেক্ট করা হচ্ছে। এটিই মূলত প্লাজ়মা থেরাপি। চিকিৎসার পরিভাষায় একে বলা হয় কনভালেসেন্ট প্লাজ়মা থেরাপি।

তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে কোনও রোগীর দেহের প্লাজ়মাই পরিশোধিত করে তাঁর দেহে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এটিকে বলা হয় প্লাজ়মাফেরেসিস। যেমন ধরুন, কোনও ব্যক্তি যদি বিষাক্ত কিছু খেয়ে ফেলেন বা ঘুমের ওষুধ অতিরিক্ত পরিমাণে খান, তখন সেই রোগীর প্লাজ়মা পরিশোধন করা হয়। রক্তে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে, এমন পদার্থ মুক্ত করে রোগীর শরীরে তা প্লাজ়মার আকারে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এই পদ্ধতি ও প্লাজ়মা থেরাপির প্রয়োগের ক্ষেত্র এবং ধরন সম্পূর্ণ আলাদা।

প্লাজ়মা থেরাপির ব্যবহারিক প্রয়োগ

বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় প্রতিনিয়ত প্লাজ়মা থেরাপির ব্যবহার করা হচ্ছে। রক্তদান শিবির থেকে যে ব্লাড সংগ্রহ করা হয়, তা থেকে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে প্লাজ়মা তৈরি রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় এর ব্যবহার রয়েছে। যেমন, কোনও রোগী গুরুতর ভাবে পুড়ে গেলে, তাঁর শরীরে প্লাজ়মার অনেকটাই অভাব দেখা যায়। আবার জন্মগত কারণে কারও কারও রক্ততঞ্চনে সমস্যা থাকে। কারও শরীরে প্রোটিন উৎপাদনে সমস্যা তৈরি হয়। এই সব ক’টি ক্ষেত্রেই প্লাজ়মা থেরাপির ব্যবহার রয়েছে।

কনভালেসেন্ট প্লাজ়মা থেরাপি

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অরুণাংশু তালুকদার বললেন, ‘‘করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় যে প্লাজ়মা থেরাপির ব্যবহার হচ্ছে, তাকে বলা হয় কনভালেসেন্ট প্লাজ়মা থেরাপি। ‘কনভালেসেন্ট’ কথাটির অর্থ, কোনও একটি রোগ থেকে সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরে ব্যক্তির দেহে রোগ প্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডি রয়ে গিয়েছে। করোনার মোকাবিলায় যেহেতু প্রতিষেধক এখনও হাতে এসে পৌঁছয়নি, সেহেতু সুস্থ হয়ে যাওয়া ব্যক্তির অ্যান্টিবডি করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে ইনজেক্ট করা হচ্ছে।

তবে কোন ব্যক্তির প্লাজ়মা অন্য ব্যক্তির দেহে দেওয়া যাবে, তা নিশ্চিত করার বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে। জেনারেল ফিজ়িশিয়ান ডা. সুবীর কুমার মণ্ডল বললেন, ‘‘এখনও অবধি উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিকে প্লাজ়মা দেওয়া হচ্ছে না। যে ব্যক্তিকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে, তাঁকেও নয়। শুধুমাত্র হালকা উপসর্গযুক্ত ব্যক্তি, যাঁদের অক্সিজেন দিয়েও স্যাচুরেশন বাড়ানো যাচ্ছে না, তাঁদের ক্ষেত্রেই এটি প্রয়োগ করা হয়েছে।’’

কোন ব্যক্তি প্লাজ়মা দাতা হতে পারবেন?

সাধারণত, করোনামুক্ত ব্যক্তির শরীরে বারো সপ্তাহ পর্যন্ত অ্যান্টিবডি বেঁচে থাকে। অর্থাৎ যদি কোনও ব্যক্তির করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ছ’সপ্তাহ পরে (এই সময়টাই বেশি ভাল বোঝা যায়) রিপোর্ট নেগেটিভ আসে, তবে তাঁর শরীরে আগামী তিন মাস পর্যন্ত অ্যান্টিবডি বেঁচে থাকবে। ১৮-৫৫ বছর বয়সি করোনামুক্ত ব্যক্তির যদি অন্য কোনও সংক্রমণ বা রোগ না থাকে, তবে তিনি প্লাজ়মা দান করতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথমেই দেখে নিতে হবে, তাঁর শরীরের অ্যান্টিবডি অন্য কোনও রোগীর শরীরে আদৌ কাজে আসবে কি না।

প্লাজ়মা থেরাপির ঝুঁকি

যে কোনও ব্লাড ট্রান্সমিশনের মতো এক ব্যক্তির প্লাজ়মা অন্য ব্যক্তির শরীরে দেওয়ায় কিছু ঝুঁকি থেকে যায়। যেমন, হেপাটাইটিস বি বা সি-এর সংক্রমণের ভয়, অ্যালার্জির ভয় ইত্যাদি। একাধিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্লাজ়মা স্ক্রিনিংয়ের কাজ চলে, তবুও এই ভয় খানিক থাকে।

প্লাজ়মা থেরাপির রিপোর্ট কার্ড

চিকিৎসকদের মতে, করোনার মোকাবিলায় এই থেরাপির ফল মিশ্র। কোনও ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক ফল মিলেছে, কোনও ক্ষেত্রে নয়। গত তিরিশ-চল্লিশ বছর ধরে এই থেরাপি নিয়ে নানা দেশে গবেষণা চলছে। তবে এর কার্যকারিতা এখনও হলফ করে বলার সময় আসেনি বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। তবে করোনার প্রতিষেধক এখনও হাতে এসে না পৌঁছনোয় ক্ষেত্রবিশেষে এই থেরাপির সাহায্য নিতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।

Plasma Therapy Covid 19
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy