Advertisement
E-Paper

ওদের চাই বিশেষ পুষ্টি

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ডায়েট আলাদা কিছু নয়। পুষ্টির পাশাপাশি মাথায় রাখতে হবে খাওয়ানোর বিষয়টিওবিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ডায়েট আলাদা কিছু নয়। পুষ্টির পাশাপাশি মাথায় রাখতে হবে খাওয়ানোর বিষয়টিও

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৭:০০

শিশুদের পুষ্টি নিয়ে সব সময়েই মা-বাবারা চিন্তায় থাকেন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ক্ষেত্রে সেই চিন্তা বাড়ে বই কমে না। কারণ এই শিশুদের সমস্যা শুধু পুষ্টিগত নয়, শারীরিক এবং আচরণগতও বটে। তাই তাদের মনের অবস্থা বুঝে পুষ্টির বন্দোবস্ত করা অভিভাবকদের গুরুদায়িত্ব। যথাযথ ধারণার অভাবে মা-বাবারা হয়তো অযথা আশঙ্কা করেন, কখনও বা বাচ্চাদের সঙ্গে অতিরিক্ত কড়া হয়ে যান। কিন্তু এই দু’টির কোনওটিই কাম্য নয়।

পুষ্টিবিদ্যার দিক থেকে, শারীরিক ও মানসিক ভাবে যে বয়সে যতটা বৃদ্ধি হওয়ার কথা, সেটা যাদের হয় না, তারাই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। এর কারণ জন্মগত হতে পারে, বা জন্মের পরে কোনও রোগের ফলেও হতে পারে। সেপ্টেম্বর মাসে দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে ‘ন্যাশনাল নিউট্রিশন মান্থ’। গর্ভবতী মহিলাদের পুষ্টির বিষয়টি এ বারের কর্মসূচিতে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে কোনও উপাদানের ঘাটতির জন্য জন্ম থেকে শিশুর শরীরে সেই বিশেষ ঘাটতি তৈরি হয়।

বারো থেকে আঠারো বছরের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে একটি সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা গিয়েছে, অটিজ়ম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার আক্রান্তদের ৬৭.১ শতাংশ ওবেসিটি বা অতিরিক্ত মেদের শিকার। ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্তদের মধ্যে ৮৬ শতাংশ ওবেসিটিতে ভুগছে। সেরিব্রাল পলসি আক্রান্তদের মধ্যে ১৮.৮ শতাংশ ওবেসিটিতে ভুগছে। এই প্রজন্মের যে কোনও টিনএজারের কাছে বড় সমস্যা, ওবেসিটি। তবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বা কিশোরদের ক্ষেত্রে সমস্যাটি জটিল আকার নেয়।

খাবার বহির্ভূত ওবেসিটির কারণ

প্রসেসড ফুডের আধিক্য, স্ক্রিন টাইম বেড়ে যাওয়া... এর পাশাপাশি আরও কিছু সামাজিক কারণ আছে।

• এই ধরনের শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের বাড়তি ভীতি কাজ করে। তাই অন্য ক্ষেত্রে নিষেধ থাকলেও খাওয়ার ব্যাপারে তাঁরা অনেক ক্ষেত্রে বারণ করেন না। বাচ্চাটির মন রাখতে সে যদি অতিরিক্ত একটি চিপসের প্যাকেট চায়, তা হলে সেটাই দেওয়া হয়।

• এক্সারসাইজ় বা রোজকার খেলাধুলোয় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বাচ্চারা অনেক ক্ষেত্রেই অংশ নেয় না। আবার স্থূলকায় হওয়ার কারণ জিনগতও হতে পারে।

• এদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওষুধের প্রয়োজন হয়। কয়েকটি ওষুধ থেকেও ওজন বাড়তে পারে।

ওবেসিটি নিয়ে ভয় কোথায়?

• এই ধরনের শিশু বা কিশোরদের ওজন বাড়লে তাদের চলাফেরা আরও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।

• কেয়ারগিভারদের পক্ষেও তাদের স্নান করানো কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে।

• টাইপ টু ডায়াবিটিস, অ্যাজ়মা এবং কিশোরীদের ক্ষেত্রে স্ত্রীরোগের সমস্যা তৈরি করতে পারে।

বিশেষ পুষ্টির চাহিদা

নিউট্রিজিনমিক্স এবং ডিজ়িজ় রিভার্সাল এক্সপার্ট কর্ণ কক্কর খাদ্যতালিকায় কয়েকটি বিশেষ বিষয়ের দিকে নজর দিতে বলছেন:

• ওদের ডায়েটে হাই ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। যেমন, আমন্ড, ওয়ালনাট, চিয়া সিড, পাম্পকিন সিড। মস্তিষ্কের কোষের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এগুলো সাহায্য করে।

• রোজ সকালে এক গ্লাস আপেলের রস খাওয়ালে শিশুরা উপকৃত হয়। বাড়িতেই এই জুস তৈরি করবেন, বাইরে থেকে কেনা নয়।

• স্নায়ুতন্ত্র ও ব্রেন সেলের জন্য ঢ্যাঁড়স উপকারী। তাই রোজের ডায়েটে বা সপ্তাহে এক দিন অন্তর ঢ্যাঁড়স সিদ্ধ রাখতে পারেন।

• নারকেলের জলও বেশ উপকারী।

• যে কোনও সুষম ডায়েটে সবুজ আনাজপাতি রাখা খুব জরুরি। পালং শাক, লাল শাক স্পেশ্যাল চাইল্ডদের ডায়েটে অবশ্যই রাখবেন।

মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস

ডায়াটিশিয়ান কোয়েল পাল চৌধুরীর মতে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ডায়েটে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসের চাহিদা খুব বেশি থাকে। তাই সে দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন:

• ভিটামিন ও মিনারেলস: ব্রেন এবং মুড ঠিক রাখার জন্য ভিটামিন বি, ত্বকের পুষ্টির জন্য ভিটামিন এ এবং সি, হাড়ের গঠনের জন্য ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়োডিন, আয়রনের ঠিক ব্যালান্স চাই ডায়েটে।

• সাধারণ খাবারের মতোই প্রয়োজনমাফিক জল পানেও অনীহা থাকে এই শিশুদের। ডিহাইড্রেশনের কারণে মনঃসংযোগে ব্যাঘাত হতে পারে, স্মৃতিশক্তির উপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই দিনে প্রয়োজন অনুযায়ী জল পান করানোর দিকে নজর রাখতে হবে।

• শস্যদানা জাতীয় খাবার, ফাইবার জাতীয় আনাজ ও ফল কোষ্ঠকাঠিন্য দূরে রাখে। হজমশক্তি বাড়ায়।

• স্পেশ্যাল চাইল্ড সকলের ক্ষেত্রেই যে এক নিয়ম কার্যকর হবে, তা কিন্তু নয়। চিবিয়ে খাওয়ার ক্ষেত্রে শারীরবৃত্তীয় সমস্যা থাকতে পারে। আবার অনিচ্ছা থেকেও কখনও কখনও তারা এমন আচরণ করতে পারে। তাই পুরস্কার বা শাস্তিরূপে খাবারকে ট্রিট করবেন না।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের আলাদা কোনও সমস্যা (্অ্যালার্জি, হাঁপানি) না থাকলে ডায়েটে বড় পরিবর্তনের দরকার নেই। তবে খাওয়া নিয়ে সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়।

Diet Plans Specially Abled Children
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy