Advertisement
E-Paper

বসে বসে মাথা খাটিয়ে ব্যারামে আপিসজীবীরা

সাবধান! ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেয়ারে বসে কাজ? কম্পিউটার ছেড়ে ওঠার সময়ই নেই? কাজের তাড়ায় ব্রেকফাস্ট করতে ভুলে যান?

মধুরিমা দত্ত

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩১
—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

সাবধান! ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেয়ারে বসে কাজ? কম্পিউটার ছেড়ে ওঠার সময়ই নেই? কাজের তাড়ায় ব্রেকফাস্ট করতে ভুলে যান?

বিপদ ঘনিয়ে আসার আগেই সাবধান হোন শিক্ষক, সাংবাদিক, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির কর্মচারী বা আইটি-তে সদ্য যোগ দেওয়া অফিসজীবীরা। এক নাগাড়ে বসে কাজের ফলেই শরীরে বাসা বাঁধছে ডায়াবেটিস, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক চাপ। দেশবিদেশের বিভিন্ন সমীক্ষা জানাচ্ছে, বর্তমানে অধিকাংশ পেশায় সারাক্ষণ মাথার কাজ চললেও শারীরিক পরিশ্রম নেই একেবারেই। উপরন্তু সঙ্গী অগোছালো খাদ্যাভ্যাস। এর জেরেই তাঁদের স্বাস্থ্য ভাঙছে।

সম্প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হোম সায়েন্স বিভাগে শিক্ষকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার আয়োজন করে বিহারীলাল কলেজ। সেই পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশেরই রক্তচাপ স্বাভাবিকের উপরে। ওজন বেড়ে ক্রমেই এগোচ্ছে স্থূলতার দিকে। বাড়ছে রক্তে শর্করার মাত্রাও। বিভাগের প্রাক্তনী, ডায়াটিশিয়ানদের কথায়, শিক্ষকদের দিনের একটা বড় অংশই কোনও প্রকার শারীরিক কসরত করতে হয় না। ক্লাসে বসে বা দাঁড়িয়ে পড়ানো, আলোচনাসভায় বসে বক্তব্য রাখা— এ সবে মাথার পরিশ্রম যত হয়, ততটা শরীরের হয় না। এ ছাড়া বাড়ির বাইরে থাকাকালীন যথেচ্ছ চা এবং ফাস্টফুডও শরীরের প্রায় বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে।

সারা বিশ্ব জুড়ে প্রকাশিত স্বাস্থ্য সমীক্ষার বিভিন্ন রিপোর্ট বলছে, যাঁদেরই দিনে কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা বসে কাজ করতে হয় তাঁদের শারীরিক এবং মানসিক নানা সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে চিকিত্সকেরা দায়ী করছেন, সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাবকেই। তবে ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, মানসিক চাপের পাহাড় সামলাতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার থেকে জীবনযাপনে হালকা কয়েকটা পরিবর্তনেই জোর দিচ্ছেন পুষ্টিবিদ এবং গবেষক-চিকিত্সকেরা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হোম সায়েন্স বিভাগের ডিন শান্তা দত্ত জানান, কিছু রোগ আছে যা ওষুধ সাময়িক ভাবে সারালেও একেবারে নির্মূল করতে পারে না। ডায়াবেটিস, অ্যানিমিয়া, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ— এই সমস্ত রোগকে কাবু করতে পর্যাপ্ত পুষ্টিসম্মত খাবারের কোনও বিকল্প নেই।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান দেবাশিস সেনও বললেন, এই সময়কার বেশির ভাগ রোগের পিছনেই রয়েছে জীবনযাপনের বদলে যাওয়া ধরন এবং ব্যায়াম না করার অভ্যেস। ‘‘অফিস বেরনোর তাড়ায় অনেকেই ব্রেকফাস্ট করেন না, সোজা দুপুরের খাওয়া। এটা মারাত্মক ভুল।’’ তিনি জানান, ভোরবেলা থেকে সকালের মধ্যে আমাদের দেহে গ্লুকোকটিকয়েড হরমোন সবথেকে বেশি নিঃসরণ হয়। এই হরমোন শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায়। কিন্তু ওই সময়ে যেহেতু বেশির ভাগ মানুষই এখন ঘুমিয়ে থাকেন বা কাজের তাড়ায় খেতে ভুলে যান, তাই ওই হরমোন রক্তে বাড়িয়ে তোলে শর্করা। দেবাশিসবাবুর পরামর্শ, ‘‘ব্রেকফাস্ট যতটা সম্ভব ভারী খেতেই হবে। দুপুর থেকে বাকি সময়টা অল্প করে খাওয়া। রাতের খাবার সেরে ফেলতে হবে সাড়ে আটটার মধ্যে।’’ বেশিক্ষণ বসে কাজ, শারীরিক পরিশ্রম না করার কারণে সেন্ট্রাল ওবেসিটির পরিমাণ বাড়ছে বলেও জানান তিনি। দোসর কোলেস্টেরল।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোনমিক্সের প্রধান সোমনাথ গঙ্গোপাধ্যায় মনে করাচ্ছেন, ক্রমাগত বসে একই কাজ করলে মানুষের কর্মক্ষমতা এবং উদ্ভাবনী শক্তি কমে যায়। তিনি আরও জানান, চিকন এমব্রয়ডারির কাজ যাঁরা করেন তাঁদের অনেক ক্ষণ বসে কাজ করে যেতে হয়। পরীক্ষামূলক ভাবে দেখা গিয়েছে, কাজের ফাঁকে ফাঁকে তাঁদের একটু বিরতি দিলে বা অন্য কোনও ছোটখাটো কাজ করার সুযোগ দিলে, তাঁদের কর্মোত্পাদন ক্ষমতা অনেকখানি বেড়ে যায়। সোমনাথবাবু বলেন, ‘‘এমনও অফিস রয়েছে, যেখানে চা খেতে হলেও বেরোতে হয় না। বেল বাজালেই চা চলে আসে। যদি ওই চায়ের ঠেকটা অফিসের বাইরে কোথাও করা হয়, তা হলে চা খেতে যাওয়ার সুবাদেই ক্ষণিকের জন্য হলেও ওই ব্যক্তি স্থান বদল করেন। এতে তাঁর শারীরিক চলন যেমন হয়, তেমনই চা খেতে খেতে গল্পগুজবের ফলে মানসিক চাপও কিছু ক্ষণের জন্য কমে যায়।’’

যাঁরা সারাক্ষণই প্রায় বসে কাজ করেন তাঁদের অল্প পরিমাণে বারেবারে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে সোমনাথবাবু বলেন, ‘‘বসে কাজ করা আমাদের হজমক্ষমতায় একটু রাশ টানে। তাই বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। এর সঙ্গে প্রয়োজন ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি।’’ কিন্তু দেখা যায়, বেশি রাত পর্যন্ত অফিসে জেগে কাজ করার ফলে মর্নিং ওয়াকের জন্য সময় মেলে না। আবার অফিসজীবীদের খাতায় বরাদ্দ নেই কোনও সন্ধেবেলাও। সেক্ষেত্রে অন্তত যে কোনও সময়ে সামান্য হলেও ঘাম ঝরিয়ে হাঁটার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিত্সকেরা। ডায়েটিশিয়ান রণিতা ঘোষের কথায়, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে কথায় কথায় চা এবং যখন খুশি রোল, চাউমিন নৈব নৈব চ! স্বাস্থ্য ফেরাতে বাড়ির তৈরি রুটি, সব্জি, কম মশলাপাতিযুক্ত চিকেন এবং নিয়মিত ফল, পর্যাপ্ত জল, ঘুম এবং শরীরচর্চাই হাতিয়ার। কাজের চাপের মাঝে ভাল লাগার গান, আড্ডা, বই পড়া, মাঝেমধ্যে ছোটখাটো ট্যুরও একেবারে ভুলে গেলে চলবে না।

Diseases Irregularity food habit
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy