Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

যোগে থাকুন চনমনে

বাইরে চড়া রোদ। শরীরচর্চা করা মুশকিল। কিন্তু গ্রীষ্মে ফিট থাকতে হবে। ঘরে বসেই যোগাসনের মাধ্যমে শরীর সুস্থ রাখতে পারেন। জানাচ্ছেন যোগবিশেষজ্ঞ  রবিশঙ্কর সিংহবাইরে চড়া রোদ। শরীরচর্চা করা মুশকিল। কিন্তু গ্রীষ্মে ফিট থাকতে হবে। ঘরে বসেই যোগাসনের মাধ্যমে শরীর সুস্থ রাখতে পারেন। জানাচ্ছেন যোগবিশেষজ্ঞ রবিশঙ্কর সিংহ

তির্যক তারাসন।

তির্যক তারাসন।

অর্পিতা মজুমদার
শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৫০
Share: Save:

প্রশ্ন: গ্রীষ্ম এসে গেল। কী ভাবে শরীর ‘ফিট’ রাখা যাবে?
উত্তর: গরমে বাইরে বেরনো কমাতে হবে। ফলে বছরের অন্য সময় যে ভাবে সকালে হাঁটা যায় গ্রীষ্মে তা হয়তো সম্ভব হবে না। এই সময় মন দিতে হবে ঘরে বসে নানা ধরনের শরীচর্চার উপরে।

প্রশ্ন: ঘরে বসে কী কী করা যায়?
উত্তর: শরীর সুস্থ রাখতে যোগ অনুশীলন ভীষণ জরুরি। সে যে কোনও ঋতুতেই হোক। যোগাসনকে জীবনের অঙ্গ করে তুলতে হবে। বিভিন্ন ধরনের যোগাসন রয়েছে। প্রাণায়াম, মুদ্রা, ফ্রি-হ্যান্ড-সহ নানা কিছু ঘরে বসেই করা যেতে পারে।

প্রশ্ন: যোগাসনের উপরে এত গুরুত্ব কেন দেওয়া হচ্ছে?
উত্তর: আজকের সদাব্যস্ত জীবনে ‘রিল্যাক্সেশন’ ভীষণ জরুরি। যোগ হল ‘আর্ট অব রিল্যাক্সেশন’। যোগাসনের মাধ্যমে মনকে শান্ত রাখা যায়। আর মন শান্ত থাকলে ক্লান্তি দূর হবে, শরীর চাঙ্গা হয়ে উঠবে । এটা নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমেই সম্ভব।

প্রশ্ন: কী ভাবে এটা করা হয়?
উত্তর: ধ্যানের মাধ্যমে মনকে শান্ত রাখা যায়। চোখ বন্ধ করে ধ্যান করতে হবে। তার পরে মনকে কেন্দ্রীভূত করতে হবে। শরীরের কোনও অংশের কথা চিন্তা করতে হবে। যেমন, মনে করুন, প্রথমে ডানহাতের বুড়ো আঙুলের কথা ভাবলেন। ভাববেন, মনকে সেখানে নিয়ে গিয়েছেন। এর পর একে একে বাকি আঙুলগুলির কথা ভাববেন। পরে শরীরের অন্যান্য অংশের কথা চিন্তা করবেন।
এই মুদ্রা করার সময়ে একটি বিপরীতধর্মী অনুভূতি হবে। মনকে একাগ্র করা কিন্তু কঠিন। কিন্তু মনকে একাগ্র করতেই হবে। মনে রাখতে হবে, চারপাশের পরিবেশ যেন শান্ত থাকে। পদ্মাসন, সিদ্ধাসন বা বজ্রাসনে বসেও এটা করা যায়।

প্রশ্ন: কোন কোন যোগাসন করা যেতে পারে?
উত্তর: নানা ধরনের যোগাসন করা দরকার। এক এক আসনে শরীরের এক এক অংশ সুস্থ রাখার জন্য জরুরি। কাজেই প্রতি দিন বেশ কয়েকটি আসন করা দরকার।

প্রশ্ন: শুরু কী ভাবে করা যায়?
উত্তর: একটি নিরিবিলি শান্ত জায়গায় বসে চোখ বন্ধ করে নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস অনুভব করতে হবে। শ্বাস নেওয়ার সময় শরীরে ঠান্ডা বাতাস ঢোকে আর শ্বাস ছাড়ার সময়ে শরীর থেকে গরম বাতাস বেরিয়ে যায়। এটা অনুভব করতে হবে। একশো থেকে উল্টো গুণতি শুরু করতে হবে। প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হলেও ধীরে ধীরে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হবে। যদি মাঝপথে ভুল হয়ে যায় তা হলে বুঝতে হবে মন নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই। তখন আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে। এ ভাবে তিন বার অভ্যাস করতে হবে। ৫-১০ মিনিটের মধ্যে শরীর শান্ত হয়ে আসবে। এই মুদ্রা খুব সহজ ও কার্যকরী।

প্রশ্ন: এখন অনেকেই হৃদযন্ত্রের নানা সমস্যায় ভোগেন। তাঁদের জন্য বিশেষ কী করতে হবে?
উত্তর: হৃদয় মুদ্রা অনুশীলন করলে হৃদযন্ত্রের বেশ কিছু সমস্যাকে এড়ানো যায়। এটা খুব জরুরি। বুড়ো আঙুলের নীচে তর্জনী ঠেকে থাকবে। মধ্যমা ও অনামিকা একসঙ্গে বুড়ো আঙুলের মাথায় লেগে থাকবে। কনিষ্ঠা থাকবে বাইরের দিকে সোজা। ১৫ মিনিট করতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। এই মুদ্রা অভ্যাস করলে হৃদযন্ত্রের নানা সমস্যা এড়ানো যায়। হৃদযন্ত্রের কোন বড় অপারেশন হলে এই আসন করলে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা সম্ভব।

প্রশ্ন: গ্রীষ্মে অনেকে অস্থিসন্ধির ব্যথায় কষ্ট পান। তাঁদের কী করা দরকার?
উত্তর: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীর শক্ত হতে শুরু করে। তাই অস্থিসন্ধিগুলিকে সচল রাখতে হবে। তা হলে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। প্রথমে হাতের কবজি দিয়ে শুরু করতে হবে। ঘড়ির কাঁটার দিকে ও কাঁটার বিপরীতে কবজি ঘোরাতে হবে। এর পরে কাঁধ। বাঁ হাতের আঙুল বাঁ কাঁধে এবং ডান হাতের আঙুল ডান কাঁধে রেখে সামনে-পিছনে ঘোরাতে করতে হবে। ১০ বার ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং ১০ বার কাঁটার বিপরীতে ঘোরাতে করতে হবে। এতে অস্থিসন্ধি অচল, শক্ত হয়ে যাওয়ার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

প্রশ্ন: অনেকে হাঁটুর ব্যথায় ভোগেন। তাঁদের কী করতে হবে?
উত্তর: পা দু’টি পাশাপাশি সোজা সামনের দিকে ছড়িয়ে বসতে হবে। এ বার হাঁটু টানটান করে ১০ সেকেন্ড ধরে থাকতে হবে। এর পরে শিথিল করতে হবে। এ ভাবে তিন-চার বার করলে হাঁটুর ব্যথায় আরাম মিলবে।

প্রশ্ন: আর কী করা যেতে পারে?
উত্তর: নাসাগ্র মুদ্রা। মধ্যমা ও তর্জনী থাকবে দুই ভুরুর মাঝে। বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ডান দিকের নাসাছিদ্র বন্ধ রেখে বাঁদিক দিয়ে শ্বাস নিতে হবে। হয়ে গেলে বাঁদিক অনামিকা দিয়ে বন্ধ করে ডান দিক দিয়ে ছাড়তে হবে। এ বার আবার ডান দিক দিয়েই শুরু করতে হবে। কমপক্ষে ২০ বার করতে হবে।

প্রশ্ন: প্রবল গরম থেকে রেহাই পেতে কিছু করা যায় কি?
উত্তর: শীতলি প্রাণায়াম করা যেতে পারে। জিভকে বিশেষ চেষ্টায়, কায়দায় টিউবের মতো করে নিতে হবে। এর পর তার ভিতর দিয়ে শ্বাস নিতে হবে। আর ছাড়তে হবে নাক দিয়ে। পুরো ১০ বার করতে হবে। তা হলে গরম কম লাগবে। শরীরে ঠান্ডা ভাব আসবে।

প্রশ্ন: আর কিছু আছে কী?
উত্তর: ভস্তিকা করা যেতে পারে। যে কোনও আরামদায়ক আসনে বসে দ্রুত শ্বাস নিতে হবে আর ছাড়তে হবে। কিছুক্ষণ করলে শরীরের গরম ভাব কেটে যায়।
প্রশ্ন: শরীর ফিট রাখতে আর কোন কোন আসন করা যায়?
উত্তর: বাটারফ্লাই বা প্রজাপতি আসন করা যায়। শক্ত জায়গায় বসে দু’টি পায়ের তলা মুখোমুখি জোড়া রেখে হাত দিয়ে দু’টি পায়ের হাঁটুকে ধরে উপর-নীচ করতে হবে। তারাসন করা যেতে পারে। দু’টি হাতের আঙুল একে অপরের ভিতরে দিয়ে শক্ত করে বদ্ধ করতে হবে। এর পরে সেই হাত মাথার উপরে রেখে পায়ের সামনের দিকে আঙুলের উপরে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে শ্বাস নিতে হবে। শ্বাস ছেড়ে আবার সাধারণ অবস্থায় আসতে হবে। এ ভাবে ১০ বার করতে হবে।
এ ছাড়া তির্যক তারাসন করা যায়। তারাসনের মতোই। ওই অবস্থাতেই দু’পাশে হেলতে হবে। এক বার বাঁদিকে, একবার ডান দিকে। হেলে থাকার সময় শ্বাস নিতে হবে। সোজা হয়ে শ্বাস ছাড়তে হবে। দু’পা সামান্য ফাঁক করে দাঁড়াতে হবে।
কটিচক্রাসনে এক বার ডান হাত বাঁ কাঁধে এবং আর এক বার বাঁ হাত ডান কাঁধে রাখতে হবে। যে কাঁধে হাত আছে তার উল্টো দিকে টুইস্ট করতে হবে। তখন অন্য হাত পিছনে থাকবে। এ ছাড়া ভুজঙ্গাসনও করা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Yoga Summer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE