Advertisement
০৬ অক্টোবর ২০২৪

বুঝতে হবে জ্বর হলেই তা ডেঙ্গি নয়

গত বছরের পরিস্থিতির পর স্বভাবতই আতঙ্কে শিলিগুড়িবাসী। এই অবস্থায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এই বছর, প্রস্তুতি কেমন? কেনই বা এই সময় ছড়াচ্ছে ডেঙ্গির সংক্রমণ? কীভাবে সম্ভব রোগটির চিকিৎসা?  প্লেটলেট কমলে কোথায় পাওয়া যাবে তা? সব কিছু নিয়ে মতামত এবং পরামর্শ দিলেন দার্জিলিঙের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য, শুনলেন সৌমিত্র কুণ্ডু।বৃষ্টির জন্য বিভিন্ন জায়গায় জল জমে থাকে। তাতে মশার লার্ভা জন্মায়। রোদ উঠলে ডিম ফুটে মশা বার হওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়। তবে নাগাড়ে বৃষ্টি হলে জল স্থির ভাবে জমতে পারে না। বয়ে চলে যায়। সে সময় ওই জলে মশা ডিম পাড়তে পারে না।

উদ্যোগ: করা হচ্ছে স্প্রে।

উদ্যোগ: করা হচ্ছে স্প্রে।

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৮ ০৩:২১
Share: Save:

প্রশ্ন: গত বছরের পরিস্থিতির পর ডেঙ্গি নিয়ে বাসিন্দাদের আতঙ্ক, উদ্বেগ রয়েছে, সেটা কাটাতে কী পরামর্শ দেবেন?

উত্তর: ডেঙ্গি এক ধরণের ভাইরাল ফিভার। জ্বর হলেই সেটা ডেঙ্গি নয় এটা বাসিন্দাদের বুঝতে হবে। সে জন্য বাসিন্দাদের সচেতন হতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জ্বর হলেই অনেকে ওষুধের দোকানে বলে যে কোনও একটা জ্বরের ওষুধ খেয়ে নেন। এটা ঠিক নয়। কোন ওষুধ খেতে হবে, কোনটা খাবেন না- না জেনে কিছু করা ঠিক নয়। চিকিৎসকের কাছে যাওয়াটাই ঠিক। অসুখ জটিল (হেমারেজিক, শক সিনড্রম) না হলে সাধারণ চিকিৎসাতেই রোগ সেরে যায়।

প্র: জুলাই-অগস্ট মাস, এই সময় ডেঙ্গির সংক্রমণ ছড়ানোর কারণ কী?

উ: বৃষ্টির জন্য বিভিন্ন জায়গায় জল জমে থাকে। তাতে মশার লার্ভা জন্মায়। রোদ উঠলে ডিম ফুটে মশা বার হওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়। তবে নাগাড়ে বৃষ্টি হলে জল স্থির ভাবে জমতে পারে না। বয়ে চলে যায়। সে সময় ওই জলে মশা ডিম পাড়তে পারে না।

প্র: শিলিগুড়ি শহরে গত বছর ডেঙ্গিতে বহু বাসিন্দা আক্রান্ত হয়েছিলেন। জেলার বিভিন্ন ব্লকে, বিশেষ করে মাটিগাড়ায় এই রোগ ছড়িয়েছিল। পাহাড়েও কয়েক জন আক্রান্ত হন। কোন এলাকায় ডেঙ্গির সম্ভাবনা বেশি?

উ: ডেঙ্গি সাধারণত শহর এলাকার রোগ। এই রোগের বাহক মশা এডিশ ইজিপ্টাই সাধারণত পরিষ্কার জলে ডিম পাড়ে। বাড়ির ছাদে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত পাত্র, বাথরুমে কোনও পাত্রে তিন চার দিন ধরে জমিয়ে রাখা জলে, বাতানুকূল যন্ত্রের কোনও অংশে জমে থাকা জলে ডেঙ্গির মশা জন্মায়। তা ছাড়া ফেলে রাখা টায়ার, ডাবের খোলাতে জল জমে থাকলে সেখানে ডেঙ্গির বাহক মশা জন্মাতে দেখা যায়। তবে গ্রামাঞ্চলেও যে এই রোগ নেই তা নয়। উপযুক্ত পরিস্থিতি, পরিবেশ পেলে এ ধরনের মশা জন্মালে ডেঙ্গির সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। লক্ষ্য রাখতে হবে বাড়ির আশপাশে ঝোপ জঙ্গলে পরিত্যক্ত পাত্রে যেন জল জমে না থাকে। এবছর ব্লকগুলোতেও বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা করা এবং সচেতনতা প্রচার হচ্ছে স্বাস্থ্য কর্মীদের দিয়ে।

চলছে হোর্ডিং-এ প্রচারও।

প্র: শিলিগুড়ি শহরেও গত বছর ডেঙ্গি ভয়াবহ আকার নেয়। তা রুখতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?

উ: এ বছর জানুয়ারি থেকেই রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের পতঙ্গবিদ রয়েছে। তাঁরা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জমে থাকা জলে মশার লার্ভা রয়েছে কি না বা থাকলেও কী ধরণের মশা জন্মাচ্ছে তা খতিয়ে দেখেন। সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়। শহর এলাকায় রোগ প্রতিরোধের মূল দায়িত্ব পুরসভার। বিভিন্ন এলাকা পরিষ্কার রাখা, বাসিন্দাদের সচেতন করা, মশা মারতে তেল স্প্রে, ধোঁয়া ছড়ানো- এ সব কাজ চলছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে পুরসভাকে সমস্ত ধরনের সাহায্য করা হয়। পুরসভার স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সমীক্ষা করে দেখেন কোথাও জ্বরের রোগী রয়েছে কি না। থাকলে কী ব্যবস্থা নিতে হবে তা পরামর্শ দেন।

প্র: জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে হাতে গোনা এক দুই জন পতঙ্গবিদ। তাঁদের পক্ষে সব জায়গায় গিয়ে দেখা সম্ভব হয় না। স্বাস্থ্যকর্মীরাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়ি ভিতরে ঢুকে কোথাও জল জমেছে কি না দেখা, বাসিন্দাদের বোঝানোর কাজটা ঠিক মতো করছেন না বলে অভিযোগ ওঠে।

উ: কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যেই ভাল ভাবে কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্য কর্মীদের বারবার প্রশিক্ষণ দিয়ে সঠিক ভাবে কাজ করতে বলা হচ্ছে। লিফলেট বিলি হচ্ছে। কাজ ঠিক মতো হচ্ছে কি না দেখার জন্য ৬ টি মনিটরিং টিম রয়েছে। সেই মতো পুরকমিশনার, কাউন্সিলরদের বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

প্র: এই রোগের চিকিৎসা বিষয়ে কিছু বলবেন?

উ: ডেঙ্গিতে জ্বরে গা ব্যাথা, অস্থি সন্ধিতে ব্যাথা, চোখের পিছনে ব্যাথা হয়, বমি পায়। গত বছর রোগীদের পেটের অসুখও হয়েছিল। ডেঙ্গি হলে জ্বরের ওষুধ প্যারাসিটামল খেতে হয়। এ ছাড়া অন্য কোনও জ্বরের ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। বিশেষ করে আই প্রফেন, আইবিইউ প্রফেন জাতীয় জ্বরের ওষুধ খাবেন না। সন্দেহ হলে চিকিৎসককে দেখিয়ে ডেঙ্গি নির্ণয়ের পরীক্ষা করান। সমস্ত জেলা হাসপাতালেই এখন ম্যাক এলাইজা, এনএসওয়ান (এলাইজা পদ্ধতিতে) পরীক্ষা হয়। জেলায় শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল ছাড়া উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ এবং দার্জিলিং-এ জেলা হাসপাতালে সেই সুবিধা রয়েছে। জ্বরের দুই তিন দিনের মাথায় এনএসওয়ান পরীক্ষা হয়। চার পাঁচ দিনের মাথায় হয় ম্যাকএলাইজা পরীক্ষা।

প্র: প্রশ্ন: সাধারণতঃ ডেঙ্গিতে রোগীর প্লেটলেট কমতে থাকে। সরকারি হাসপাতালে প্লেটলেট না পেয়ে বেশি দাম দিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রোগীর পরিবারকে কিনতে হচ্ছে। সমস্যা মেটাতে কী ভাবা হয়েছে?

উ: ডেঙ্গির চিকিৎসা ভাইরাল জ্বরের মতই। ঠিক মতো খাবার, জল খেতে হবে। জটিলতা হলে চিকিৎসকের অধীনে থাকাই ভাল। প্লেটলেট খুব নেমে ৩০ বা ২০ হাজারে চলে এলে বাইরে থেকে শরীরে প্লেটলেট দিতে হয়। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে প্লেটলেট পাওয়া যায়। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালেও রক্তের উপাদান পৃথকীকরণের যন্ত্র শীঘ্রই চালু করা হবে। এখান থেকে প্লেটলেট পেতে পারেন বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Advice Dengue Doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE