বয়স ত্রিশ হোক বা ষাট, হাঁটুর ব্যথায় কাবু এখন অনেকেই। কিছু ক্ষণ শুয়ে থাকার পর উঠতে গেলে ব্যথা, বসে থেকে দাঁড়াতে গেলে ব্যথা, সিঁড়ি ভাঙতে গেলেও টনটনিয়ে ওঠে হাঁটু। হাঁটুর ব্যথার কারণ অনেক। জন্মগত কারণে হাড়ের গঠনে কোনও সমস্যা থাকলে, কখনও কোনও সংক্রমণ হলে, চোট লাগলে, আর্থ্রাইটিস হলে বা কার্টিলেজে আঘাত লাগলেও হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে। আবার কিছু কিছু টিউমারের কারণেও হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে। হাঁটুর ব্যথার একশো রকম কারণ থাকলেও এখন মূলত দু’টি সমস্যা ভীষণ ভাবে বেড়েছে সাধারণের মধ্যে। প্রথমত, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, দ্বিতীয়ত অস্টিয়ো আর্থ্রাইটিস।
অল্প বয়স থেকেই হাঁটুর বিষয়ে সতর্ক না হলে পরে বয়স বাড়লে ভোগান্তি বাড়তে পারে। কী ভাবে হাঁটুর ব্যথা থেকে রেহাই পাবেন, অল্প বয়স থেকেই কোন কোন বিষয়ে সতর্ক থাকলে হাঁটুর সমস্যা এড়িয়ে চলতে পারেন, তারই কিছু উপায় বলে দিলেন অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিতের স্বামী শল্যচিকিৎসক শ্রীরাম নেনে। শ্রীরাম বলেন, ‘‘হাঁটু মজবুত হলেই জীবনে পথ চলা সহজ হবে। খুব বেশি দেরি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না, এখন থেকেই হাঁটুর যত্ন নিতে শুরু করুন আগামী দিনে যন্ত্রণামুক্ত থাকার জন্য।’’
হাঁটু ভাল রাখতে কোন কোন পরামর্শ দিলেন শ্রীরাম?
শরীরচর্চা করুন বুঝেশুনে: হাঁটুর কলকব্জা ঠিক রাখতে হলে শরীর সচল রাখা ভীষণ জরুরি। আর তার জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। তবে কোন ধরনের শরীরচর্চা করবেন, তা বাছাই করতে হবে বুঝেশুনে। শ্রীরাম বলেন, সাইকেল চালানো, হাঁটাহাঁটি করা, সাঁতার কাটার মতো হালকা শরীরচর্চাগুলি হাঁটু ভাল রাখার জন্য ভীষণ জরুরি, এই রকম ব্যায়ামের ফলে হাঁটুর অস্থিসন্ধিগুলি মজবুত হয়।
ওজন রাখুন নিয়ন্ত্রণে: হাঁটুর উপর বাড়তি চাপ পড়লে কিন্তু ব্যথা বাড়বে। তাই হাঁটুর ব্যথা থেকে রেহাই পেতে হলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা ভীষণ জরুরি। শ্রীরাম বলেন ১ কেজি বাড়তি ওজনও কিন্তু হাঁটুর উপর বাড়তি ৪ কেজি চাপ ফেলার জন্য যথেষ্ট। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য খাওয়াদাওয়ায় ভারসাম্য রাখা আর শরীরকে সচল রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
অল্প বয়স থেকেই হাঁটুর বিষয়ে সতর্ক না হলে পরে বয়স বাড়লে ভোগান্তি বাড়তে পারে। ছবি: সংগৃহীত।
পেশির উপর নজর দিন: হাঁটু ভাল রাখতে হলে পেশিগুলিকেও মজবুত রাখতে হবে বইকি। আর তার জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ থেকে ৪ দিন পেশি সংক্রান্ত শরীরচর্চা যেমন স্কোয়াট, লেগ লিফ্ট, হ্যামস্ট্রিং কার্লস করা যেতে পারে। পেশির শক্তি বাড়ানোর জন্য রোজ অন্তত মিনিট পাঁচেক স্ট্রেচিং করা ভীষণ জরুরি।
জুতো বাছাইয়ের বিষয় সতর্ক হোন: হাঁটু ভাল রাখতে সঠিক জুতো বাছাই করা ভীষণ জরুরি। খুব বেশি হিল আছে বা ফ্ল্যাট শু পরা উচিত নয়। খুব শক্ত সোলযুক্ত জুতো না পরে নরম আর আর্চ আছে এমন জুতো পরলেই কিন্তু হাঁটু ভাল থাকবে। ফ্যাশনের জন্য অনেকেই এমন জুতো পরে ফেলেন, যা পরে আদৌ তাঁরা স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না। শ্রীরাম বলেন, ফ্যাশনের জন্য হাঁটুর সঙ্গে আপস না করাই ভাল।
চোট-আঘাত থেকে সাবধান: শরীরচর্চা করতে গিয়ে কিংবা হাঁটাচলার সময় অনেক সময়েই চোট লেগে যায়। চোট-আঘাত লাগলে কিন্তু শরীরচর্চা থেকে বিরতি নিতে হবে। বিশ্রাম করা, বরফ লাগানো হাঁটুর ক্ষেত্রে ভীষণ জরুরি।