E-Paper

কান টানলে মাথা আসে...

সন্তানের কানের ব্যথায় গোড়া থেকেই সাবধান হন। কানের ইনফেকশন ছড়াতে পারে মস্তিষ্কেও।

নবনীতা দত্ত

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৫১
An image of Ear Infection

—প্রতীকী চিত্র।

সদ্যোজাত থেকে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অনেক সময়েই নানা কারণে কানের ব্যথা দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে দিনকয়েকের মধ্যেই তা সেরেও যায়। কিছু ক্ষেত্রে সেই ব্যথা ঘুরেফিরে আসে ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। যদি কানে ব্যথা বাড়তে থাকে, সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের মত নিতে হবে। কানের সংক্রমণ থেকে এই ব্যথা হতে পারে।

সংক্রমণ কী ভাবে হয়?

অনেকেরই ধারণা থাকে যে, বাচ্চাদের কানে জল ঢুকে বা সদ্যোজাতদের দুধ খাওয়ানোর সময়ে তা কানে ঢুকে সংক্রমণ হয়। কানে ময়লা জমেও কানে ব্যথা হয় বলে সাধারণ ধারণা রয়েছে। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী বললেন, “এই ধারণাগুলো ঠিক নয়। আমাদের স্বাভাবিক অক্ষত কানের পর্দা ভেদ করে জল, দুধ ইনার ইয়ারে ঢুকতে পারে না। সংক্রমণ কেন হয়, তা বুঝতে কানের ভিতরটা বুঝতে হবে। কান, গলা ও নাক এগুলো একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। ফলে গলায় সংক্রমণ হলে তা সহজেই কানে চলে আসে। বাচ্চার ঠান্ডা লেগে জ্বর, সর্দি-কাশি বা গলায় সংক্রমণ হলে তা কানেও ছড়িয়ে পড়ে। কানের সঙ্গে ফ্যারিঙ্কসের যোগসূত্র তৈরি হয় ইউস্টেশিয়ান টিউবের মাধ্যমে। ফলে যখন সন্তান বা বড়দের ফ্যারিঞ্জাইটিস, ল্যারিঞ্জাইটিস বা টনসিলাইটিস হচ্ছে, তখন সেই সংক্রমণ কানের মধ্যে চলে যেতে পারে।”

সর্দি থেকেও কানে ব্যথা হয়। সদ্যোজাতদের মধ্যে এই উপসর্গ দেখা যায়। বাচ্চারা যেহেতু নিজে থেকে কফ বার করতে পারে না। তাদের ঠান্ডা লেগে গলায় কফ জমে এবং কানেও তরল জমতে পারে। ফলে কানে ব্যথা হয় ও বাচ্চা কাঁদতে থাকে। সদ্যোজাতদের সর্দির সমস্যায় তাই সাবধান হতে হবে। তবে কানে ব্যথা হলেই অনেকে ইয়ারড্রপ দিতে শুরু করেন। সেটা করতে বারণ করলেন ডা. রায়চৌধুরী। বরং চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল খাওয়ানো যেতে পারে। যেমন জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামলের সাহায্য নেওয়া হয়।

কী কী কারণে ব্যথা হয়?

ঘরে বা রাস্তাঘাটে ধুলো নাক-মুখ দিয়ে ঢুকলে অনেক সময়ে আল্যার্জি ও প্রদাহ হয়। ফলে ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যায়। তখন কানে ব্যথা হতে পারে।

বিমানে ওঠার সময়ে যেমন ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অনেকেরই কানে সমস্যা দেখা যায়। বাচ্চারা সেটা বোঝাতে বা বলতে না পেরে কেঁদে ওঠে। তখন বড় হোক বা বাচ্চা, ঢোঁক গিলতে হবে। তা হলেই আবার ইউস্টেশিয়ান টিউবের মুখটা খুলে যাবে। সন্তান খুব ছোট হলে জল বা লজেন্স খাওয়ানো যায়। সেটা খাওয়ার সময়ে সে ঢোঁক গিললে সমস্যা মিটে যাবে।

ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে গেলে বা কান বন্ধ হয়ে গেলে, তা ঠিক করার জন্য ভালসালভা ম্যানুভারও অভ্যেস করতে পারেন। এর জন্য নাক দিয়ে অনেকটা শ্বাস গ্রহণ করতে হবে। তার পরে নাক ও মুখ বন্ধ করে, বেলুন ফোলানোর মতো করে মুখ ফুলিয়ে সেই হাওয়া বার করার চেষ্টা করতে হবে। এতে নাক ও মুখ বন্ধ থাকায় ভিতরের হাওয়ার চাপে তা কানের পথে বেরোনোর চেষ্টা করবে। ফলে বন্ধ কান খুলে যাবে।

রাইনাইটিস থেকেও কানে ব্যথা হতে পারে। তখন নেজ়াল ড্রপ দেন বিশেষজ্ঞরা।

সতর্ক হতে হবে যে বিষয়ে

আর একটি বিষয়ে সাবধান করলেন ডা. দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী, “গলার সংক্রমণ কানে যেমন ছড়াতে পারে, কানের সংক্রমণ মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যেতে পারে। ট্রান্সভারস বা সিগময়েড সাইনাস কান ও মস্তিষ্কের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে। দীর্ঘদিন কানের ইনফেকশন অবহেলা করলে, এই সংক্রমণ সিগময়েড সাইনাস দিয়ে ব্রেনে চলে যেতে পারে। তখন ভেনাস থ্রম্বসিস ও ব্রেন অ্যাবসেস তৈরি করে রোগের জটিলতা বাড়ায়। ধরুন, গলায় যদি স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটিরিয়ার দ্বারা সংক্রমণ হয়, তা ব্রেনের মধ্যে চলে গেলে সেখানে মস্তিষ্কে পুঁজ তৈরি করে। এতে বাচ্চার খিঁচুনি হতে পারে, হাত-পায়ের দুর্বলতা দেখা যায়, চোখে কম দেখতে পারে সেই সময়। দ্রুত চিকিৎসা না হলে এটা প্রাণঘাতী। তাই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।” সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অ্যান্টিবায়োটিকস দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

ম্যাস্টয়ডাইটিস হলেও কক্লিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট করতেও হতে পারে। তাই কানের ব্যথা যত সামান্যই হোক, গোড়া থেকেই সচেতন হতে হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Ear Infection ENT Health Check up

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy