Advertisement
E-Paper

গ্যাস-অম্বলের সমস্যায় মুঠো মুঠো ওষুধ? বাড়ছে করোনার ঝুঁকি

১০০ জনের মধ্যে ১৫-২০ জনের সমস্যা সত্যিই অ্যাসিডের জন্য। বাকি ২০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে কষ্টের কারণ বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ, ব্যথার ওষুধ, সিগারেট বা মদ।

৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে পিপিআই কেন, কোনও অম্বলের ওষুধই নিয়মিত খাওয়ার দরকার হয় না। ছবি: শাটারস্টক

৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে পিপিআই কেন, কোনও অম্বলের ওষুধই নিয়মিত খাওয়ার দরকার হয় না। ছবি: শাটারস্টক

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২০ ১৩:৫০
Share
Save

কথায় বলে পেটরোগা বাঙালি। সবেতেই তার গ্যাস-অম্বল। কখনও সত্যি অম্বল, কখনও তার মূলে রয়েছে অতিরিক্ত স্পর্শকাতরতা। মনের নয়, পেটের। বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, যত মানুষ অম্বলে কষ্ট পান, তার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশের পাকস্থলীতে অ্যাসিডের পরিমাণ ঠিকই থাকে। কিন্তু পাকস্থলীর স্পর্শকাতরতা বেশি থাকে বলে অল্প অ্যাসিডেও পেট জ্বলে। বুক জ্বলে। ব্যথা হয়। একে বলে নন-আলসার ডিসপেপসিয়া। এটা কোনও জটিল সমস্যা নয়। নিয়ম মানলেই রোগ বশে থাকে। ১০০ জনের মধ্যে ১৫-২০ জনের সমস্যা সত্যিই অ্যাসিডের জন্য। বাকি ২০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে কষ্টের কারণ বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ, ব্যথার ওষুধ, সিগারেট বা মদ।

কাজেই বুঝতেই পারছেন, যাঁরা অম্বলে কষ্ট পান তাঁদের প্রায় ৮০ শতাংশের ক্ষেত্রে পাকস্থলীতে বেশি অ্যাসিড থাকাটা মূল কারণ নয়। কিন্তু এঁরা প্রায় সবাই নিয়মিত পিপিআই বা প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর গোত্রের ওষুধ খান। আর পাকস্থলীর অ্যাসিড নিঃশেষ করে নিজেকে ঠেলে দেন বিপদের মুখে।

পিপিআই-এর বিপদ

বিভিন্ন পথে তৈরি হয়ে মূল যে পথটির মাধ্যমে অ্যাসিড পাকস্থলীতে পৌঁছোয়, তার নাম প্রোটন পাম্প। এই পথটি আটকায় পিপিআই। ফলে অ্যাসিড আর বেরতে পারে না। রোগীর আরাম হয়। ওমিপ্রাজোল/প্যান্টোপ্রাজোল/র‍্যাবিপ্রাজোল হল এই জাতীয় ওষুধ। এর ফলে নানা রকম বিপদও হয়। “কথায় কথায় বদহজম বা ডায়েরিয়া, হাড় নরম হয়ে যাওয়া বা কারও মতে ক্যান্সারের আশঙ্কা বাড়ে। কমে পাকস্থলী ও অন্ত্রের উপকারী জীবাণুর পরিমাণ। কারণ অন্ত্রে কোন কোন উপকারী জীবাণু কী মাত্রায় থাকবে তা নির্ভর করে অন্ত্রের অ্যাসিডিটির উপর। অ্যাসিডিটি কমে গেলে ভাল জীবাণুর পরিমাণ ও বৈচিত্র কমে যায়। ফলে হজমে যেমন বিঘ্ন ঘটে, কমে যায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। বাড়ে সংক্রমণের আশঙ্কা।” জানালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়।

অ্যাসিডিটি কমে গেলে ভাল জীবাণুর পরিমাণ ও বৈচিত্র কমে যায়। ফাইল ছবি।

ভাল জীবাণু কমলে বাড়ে কোভিডের আশঙ্কাও। 'আমেরিকান জার্নাল অফ গ্যাসট্রোএন্টেরোলজি'-তে প্রকাশিত প্রবন্ধে সিডার্স সিনাই মেডিক্যাল সেন্টারের চিকিৎসাবিজ্ঞানী ব্রেনান স্পিগেল জানিয়েছেন, যাঁরা নিয়মিত এই সব ওষুধ খান তাঁদের ২.৫-৩.৭ গুণ বেশি আশঙ্কা কোভিড হওয়ার। ৮৬,০০০ জন মানুষের উপর সমীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তিনি। ২০০২-২০০৩ সালে সার্স মহামারির সময়ও একই ছবি চোখে পড়েছিল। যাঁরা পিপিআই খেতেন তাঁদের মধ্যে সার্স সংক্রমণের হার ছিল অনেক বেশি। অর্থাৎ যে করেই হোক, কোভিডের মরসুমে পিপিআই খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।

আরও পড়ুন: কখন প্রয়োজন ভেন্টিলেটর? কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার এটির?

পিপিআই-এর বদলে

গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজিস্ট সব্যসাচী পট্টনায়কের মতে, “প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে পিপিআই কেন, কোনও অম্বলের ওষুধই নিয়মিত খাওয়ার দরকার হয় না। মাঝে মধ্যে সমস্যা হলে লিকুইড অ্যান্টাসিড বা ফ্যামোটিডিন জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন।কিছু গবেষণা থেকে জানা গেছে কোভিডের প্রকোপ কমাতে এই ওষুধের কিছুটা ভূমিকা থাকলেও থাকতে পারে। তবে নিয়মিত কোনও ওষুধই ভাল নয়। তার বদলে খাওয়া ও জীবনযাপনের নিয়ম মেনে চলা উচিত। বা কোনও অসুখের কারণে অম্বল হলে, সেই রোগের চিকিৎসা করা উচিত।”

আরও পড়ুন: করোনা কতটা ক্ষতি করছে স্নায়ুতন্ত্র-মস্তিষ্কে, কী বলছেন চিকিৎসকরা​

অম্বল কমাতে জীবনযাপনের নিয়ম

• “অম্বলের বাড়-বৃদ্ধির মূলে কিছু খাবারের হাত আছে।” জানালেন পুষ্টিবিদ প্রিয়ঙ্কা মিশ্র। “সবার সব খাবারে হয় না। যাঁর যেটাতে হয়, সেটা বর্জন করে চলা উচিত। যেমন, মিষ্টি ও ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার, দুধ, টক ফল, কফি, শুকনো লঙ্কা, গোলমরিচ, খুব ঠান্ডা বা খুব গরম খাবার, ঘন্টায় ঘণ্টায় এটা সেটা খাওয়ার অভ্যাস, ধূমপান, মদ্যপান। খালি পেটে মদ্যপান করলে সমস্যা বাড়ে। খালিপেটে চা খেলেও অনেকের সমস্যা হয়। কারও দুধ-চায়ে সমস্যা হয়। কারও হয় লেবু-চায়ে।”

কোভিডের মরসুমে অতিরিক্ত পিপিআই খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। ছবি: শাটারস্টক

যা মনে রাখতে হবে এই মরসুমে

• খাওয়া ও ঘুমের সময় মোটামুটি ঠিক রাখা উচিত।

• নিয়মিত ব্যায়াম করলে সমস্যা কম থাকে।

• কিছু ওষুধে সমস্যা বাড়ে কারও।

• মানসিক চাপ বাড়লে অম্বল বাড়তে পারে। কাজেই এদিকেও নজর দেওয়া দরকার।

• নিয়মে সমস্যা না মিটলে ডাক্তার দেখাতে হবে। বিশেষ করে যদি কারও খিদে কমে যায়, ওজন কমতে থাকে, খাবার গলায় আটকে যাচ্ছে বলে মনে হয়, রক্তাল্পতা হয়, রক্তবমি বা ব্ল্যাক স্টুল হয়। বয়স ৪০-৪৫-এর বেশি হলেও যদি অম্বল লেগে থাকে, পিপিআই না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

অতএব

অম্বল হলে প্রথমে খাওয়া-ঘুমের নিয়ম মেনে দেখুন সমস্যা কমে কিনা। না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিজে থেকে অম্বলের ওষুধ খাবেন না। বিশেষ করে এই কোভিডের মরসুমে নতুন করে বিপদ বাড়িয়ে কোনও লাভ নেই।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

Corona COVID-19 acidity Fake Officials Immunity medicines tablets

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।