Advertisement
E-Paper

কোভিডের ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ কমাতে ফল খাওয়া নিয়ে কী কী মানতেই হবে

একটা সার্ভিং মানে ছোট একটা টেনিস বলের মাপ৷ কামড়ে, চিবিয়ে বা চুষে খান, যাতে ফলটা শেষ করতে খানিকটা সময় লাগে ও ছিবড়েটুকুও যায় শরীরে।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২০ ১৩:৩৬
ফলের রস কি সবাই খেতে পারেন? ফাইল ছবি

ফলের রস কি সবাই খেতে পারেন? ফাইল ছবি

কোভিডের সঙ্গে ফলের রসের সরাসরি কোনও বিরোধ নেই। কিন্তু যদি হাই প্রেশার, ডায়াবিটিস, ফ্যাটি লিভার, হাই কোলেস্টেরল–ট্রাইগ্লিসারাইডের মতো কোনও রোগ থাকে, আর আপনি নিয়মিত ফলের রস খেয়ে যান, মোটামুটি সপ্তাহ দশেকের মধ্যে ঝুঁকি বেড়ে যাবে ।

যত বেশি ফলের রস খাবেন, তত সমস্যা বাড়বে। ওজন বেশি হলে দিনে ৪৮০ মিলি ফলের রস মাত্র মাস তিনেক খেলে কোমরের মাপ ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বেড়ে যাবে। এ সবই কোভিডের রিস্ক ফ্যাক্টর। অতএব এই মুহূর্তে অন্তত ফলের রস বাতিল করুন। রসের বদলে খান গোটা ফল। সারা দিনে ৪০০ গ্রাম। অর্থাৎ ৮০ গ্রাম করে ৫ বারে ভেঙে (৫টি সার্ভিং)।

একটা সার্ভিং মানে ছোট একটা টেনিস বলের মাপ। কামড়ে, চিবিয়ে বা চুষে খান, যাতে ফলটা শেষ করতে খানিকটা সময় লাগে ও ছিবড়েটুকুও যায় শরীরে। খানিকটা সময় ধরে খাওয়া ও ছিবড়েসমেত খাওয়ার মধ্যেই লুকিয়ে আছে ফলের ভাল–মন্দের রহস্য। ফলের ছোট একটি টুকরো যখন কামড়ে, চিবিয়ে ও গিলে খাওয়া হয়, একেক বারে শরীরে অল্প করে ফলের চিনি বা ফ্রুকটোজ ঢ়োকে। সেটুকুও আবার ফাইবারে মিশে থাকে বলে ধীরে ধীরে শোষিত হয়। কিন্তু তার বদলে ৩–৪টি ফলের রস বানিয়ে একবারে খেয়ে নিলে ৩–৪ গুণ ফ্রুকটোজ শরীরে ঢুকে শোষিত হয়ে সোজা চলে যায় লিভারে।

আরও পড়ুন:সর্বনাশ তামাকেই, দেশে প্রতি ঘণ্টায় ওরাল ক্যানসারে মৃত ৫​

ফ্রুকটোজকে ভাঙতে পারে একমাত্র লিভার। যতখানি সে সামলাতে পারে তার চেয়ে বেশি এসে গেলে চিনির বেশ খানিকটা ফ্যাটে পরিণত হয়ে রক্ত ও লিভারে জমতে শুরু করে। পেট–কোমরে চর্বি জমে ও ফ্যাটি লিভারের সূত্রপাত হয়। রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড ও খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। একই সঙ্গে বাড়ে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের আশঙ্কা, যা কিনা ডায়াবিটিসের পূর্ব শর্ত।

গোটা ফল খেলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে, তৃপ্তি বেশি হয়। তার বদলে যদি এক গ্লাস ফলের রস খান, যা বানাতে কম করে ৩–৪টি ফল লাগে, ক্যালোরি বেড়ে যায়, কিন্তু তরল খাদ্য বলে খিদের তেমন সুরাহা হয় না। খানিকক্ষণের মধ্যে আবার কিছু খাওয়ার প্রয়োজন হয়। ফলে অনেক বেশি ক্যালোরি ঢোকে শরীরে।

আরও পড়ুন:শুধুমাত্র অতিরিক্ত চিনি খেয়েই বিশ্বে মারা যান ৩.৫ কোটি মানুষ!​

অর্থাৎ মাপমতো ফল খেলে যেখানে স্রেফ পুষ্টিই হয়, ফলের রস খেলে পুষ্টির সঙ্গে এসে হাজির হয় হাজারো বিপদও। হরমোন বিশেষজ্ঞ সতীনাথ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘’আপনি যদি রোগা–পাতলা ও চটপটে সচল হন, সপ্তাহে দু–চার বার ছোট এক গ্লাস টাটকা ফলের রস খেতে পারেন। প্যাকেটের ফলের রস নয়। কারণ তার আরও নানান ক্ষতিকর দিক আছে। কিন্তু ওজন বেশি হলে ও হাই প্রেশার, ডায়াবিটিস, ফ্যাটি লিভার, হাই কোলেস্টেরল–ট্রাইগ্লিসারাইড জাতীয় কোনও সমস্যা থাকলে ওটুকুও না খাওয়াই ভাল।’’

৩–৪টি ফলের রস বানিয়ে একবারে খেয়ে নিলে ৩–৪ গুণ ফ্রুকটোজ শরীরে শোষিত হয়ে সোজা যায় লিভারে। ফাইল ছবি।

প্যাকেটের ফলের রস, বাড়তি বিপদ

যতই ‘১০০ শতাংশ ফ্রুট জুস’ বা ‘নট ফ্রম কনসেনট্রেট’ লেখা থাকুক না কেন, আসলে ব্যাপারটা তেমন হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। তার কারণ অনেক। প্রথমত, ফল থেকে রস বার করার পর প্যাকেট করার আগে তাকে বেশ কিছুদিন অক্সিজেনহীন ট্যাঙ্কে জমিয়ে রেখে প্রসেস করা হয়। ফলে পুষ্টি কমে যায়। গন্ধ চলে যায়। মেশাতে হয় কৃত্রিম গন্ধ। তার কিছু অপকার আছে।

আরও পড়ুন:খাবারে এই মৌল না থাকলে হতে পারে মারাত্মক সব রোগ

দামি প্যাকেটের ফলের রসের সঙ্গেও টাটকা বানিয়ে খাওয়া রসের তফাত থাকে। কম দামি ফলের রস নিয়ে যত কম বলা যায় ততই ভাল। সে সব আসলে রং ও গন্ধ মেশানো চিনির জল ছাড়া আর কিছুই নয়।

আরও পড়ুন:ইভেরমেক্টিন কি করোনা মোকাবিলার নয়া তুরুপের তাস? কী বলছেন চিকিৎসকরা​

অতএব

সতীনাথের মত, ‘‘পুষ্টিবিদদের পরামর্শ মেনে দিনে ৪–৫ রকমের ফল মিলে ৪০০ গ্রামের মতো খান। চিবিয়ে খেলে ভাল। মাঝেমধ্যে স্মুদি বানিয়ে নিতে পারেন, যাতে শুধু রস নয়, শাঁস ও সেই সঙ্গে ফাইবার যায় শরীরে। কোনও অসুখ–বিসুখ হলে কোন ফল খাওয়া যাবে আর কোনটা নয়, তা ডাক্তারের কাছে জেনে নিন।’’

Coronavirus Corona COVID-19 Fruits
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy