Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Fact Check

দিনে ৩ বার চা খেলে ভয় নেই করোনায়! এই দাবি কি ঠিক?

এই তিনটি যৌগই পাওয়া যায় চা পাতায়। চিনারা কোভিড-১৯ আক্রান্তদের দিনে ৩ বার চা খাইয়ে সারিয়ে তুলছেন। এ ভাবেই উহানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোও আটকানো গেছে। থেমেছে গোষ্ঠী সংক্রমণও।

দিনে ৩ বার চা খেলে নাকি সেরে যাচ্ছে করোনাভাইরাস, দাবি করা হচ্ছে ভাইরাল হওয়া এই পোস্টে

দিনে ৩ বার চা খেলে নাকি সেরে যাচ্ছে করোনাভাইরাস, দাবি করা হচ্ছে ভাইরাল হওয়া এই পোস্টে

ঋত্বিক দাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২০ ১৮:০২
Share: Save:

কী ছড়িয়েছে?

করোনা সংক্রমণ সারাতে দু’টি উপায়ের কথা বলা হচ্ছে। যেগুলির সার সংক্ষেপ করলে হয়,

এক, ইজরায়েলে আবিষ্কার হয়েছে করোনা সারানোর এক সহজ উপায়। গরম জল, স্লাইস করা লেবু আর বেকিং সোডা মিশিয়ে চায়ের মতো খেলেই নিমেষে শেষ হয়ে যাবে করোনা ভাইরাস। কারণ এতে শরীরের পিএইচ মাত্রা বেড়ে যায়। করোনাভাইরাসের পিএইচ মাত্রা ৫.৫ থেকে ৮.৫ এর মধ্যে। আপনার শরীরের পিএইচ মাত্রা এর চেয়ে বেশি হলেই নির্মূল হবে করোনাভাইরাস। ইজরায়েলিরা এই সহজ উপায়টি শিখে নিয়ে দিব্যি আছেন। তাই তাদের মধ্যে এই ভাইরাস নিয়ে কোনও আতঙ্ক নেই।

দুই, সিএনএন-এর একটি ব্রেকিং নিউজকে উদ্ধৃত করে বলা হচ্ছে, চিনের যে চিকিৎসক প্রথম বার কোভিড-১৯ নিয়ে সতর্ক করেন, তিনি নিজে এই ভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেলেও এর নিরাময়ের উপায় বলে দিয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন মিথাইলজ্যানথাইন, থিওব্রোমিন বং থিওফাইলিন, এই তিন যৌগ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং এই ভাইরাসের সংক্রমণ আটকায়। এই তিনটি যৌগই পাওয়া যায় চা পাতায়। চিনারা কোভিড-১৯ আক্রান্তদের দিনে ৩ বার চা খাইয়ে সারিয়ে তুলছেন। এ ভাবেই উহানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোও আটকানো গেছে। থেমেছে গোষ্ঠী সংক্রমণও।

কোথায় ছড়িয়েছে?

ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ, প্রোফাইল থেকে শেয়ার করা হয়েছে এগুলি। হোয়াটসঅ্যাপেও ছড়িয়ে পড়ছে এমনই সব মেসেজ।

এই তথ্য কি সঠিক?

না, যে সব উপায়গুলির কথা বলা হয়েছে সেগুলির স্বপক্ষে প্রমাণ এখনও কোথাও নেই। ইজরায়েলে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। চিনেও চা খেয়ে লোকে সুস্থ হওয়ার খবর নেই।

সত্যি কী এবং আনন্দবাজার কী ভাবে তা যাচাই করল

এই প্রতিবেদন লেখার সময় জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বলছে ইজরায়েলে মৃতের সংখ্যা ১৭১। সে দেশে সরকারি ভাবে এই কোন ঔষধি পানীয়ের কথা বলা হয়নি। যে ভাবে লেবু আর বেকিং সোডা মেশানো পানীয় খেয়ে শরীরের পিএইচ মাত্রা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। জেনিভা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জাঁ ফিলিপ বঁজু-র একটি গবেষণাপত্র বলছে ডায়েটে পরিবর্তন ঘটয়ে এ ভাবে শরীরের পিএইচ মাত্রায় পরিবর্তন ঘটানো যায় না। হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর একটি ব্লগ বলছে, এমন কোনও প্রমাণ নেই যেখানে দেখা গিয়েছে লেবু বা রসুন এই নতুন করোনাভাইরাস থেকে মানুষকে রক্ষা করেছে।

লেবু, রসুন খেলে সারে না করোনাভাইরাস, বলছে হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ

দিনে তিন বার চা খেয়ে চিনে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আটকানোর যে কথা বলা হচ্ছে। চা, কফি, চকোলেটে উপস্থিত মিথাইলজ্যানথাইন। এই যৌগ ঝিমুনি কাটিয়ে শরীরকে চনমনে করতে সাহায্য করলেও তা যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আটকায়, তার কোনও প্রমাণ নেই। ভাইরাল হওয়া দ্বিতীয় মেসেজটিতে সিএনএন-এর একটি ব্রেকিং নিউজের কথা বলা হয়েছে। সিএনএন এমন কোনও খবর আদৌ করেনি। লি ওয়েনলিয়াং বলে যে চিকিৎসকের কথা বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে তিনি গত ৭ ফেব্রুয়ারি মারা যান। তিনি ছিলেন পেশায় চক্ষু বিশেষজ্ঞ। ভাইরাস নিয়ে তাঁর কোনও গবেষণা ছিল না।

এমনিতে আমাদের রোজকার অভ্যাসে গলা খুসখুস করলে গরম পানীয় দিয়ে গার্গেল করা, গলা ব্যথা হলে আদা দিয়ে চা খেয়েই থাকি। কিন্তু সে সবে যে করোনা আটকাবে না এবং এই ধরনের মেসেজগুলি যে ভুয়ো তা জানাচ্ছে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোও।

হোয়াটস‌্অ্যাপ, ফেসবুক, টুইটারে যা-ই দেখবেন, তা-ই বিশ্বাস করবেন না। শেয়ারও করে দেবেন না। বিশেষত এই আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় তো তো নয়ই। এ ভাবেই ছড়িয়ে পড়ে ভুয়ো খবর। যাচাই করুন। কোনও খবর, তথ্য, ছবি বা ভিডিয়ো নিয়ে মনে সংশয় দেখা দিলে আমাদের জানান এই ঠিকানায় feedback@abpdigital.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE