Advertisement
E-Paper

মনোরোগীকে দেখার সময় স্রেফ দু’ঘণ্টা

হাসপাতাল-বন্দি মানসিক রোগীর সঙ্গে ক্ষেত্রে দেখা করার জন্য বাড়ির লোকের জন্য বরাদ্দ কেবল বিকেল চারটে থেকে ছ’টা। তার বাইরে দেখা করার অনুমতি মিলবে না। এমনই নিয়ম বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:১৬

হাসপাতাল-বন্দি মানসিক রোগীর সঙ্গে ক্ষেত্রে দেখা করার জন্য বাড়ির লোকের জন্য বরাদ্দ কেবল বিকেল চারটে থেকে ছ’টা। তার বাইরে দেখা করার অনুমতি মিলবে না। এমনই নিয়ম বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে। রাজ্যের আর সব মানসিক হাসপাতাল কিন্তু রোগীর সঙ্গে দেখা করতে দেয় দিনের যে কোনও সময়ে।

কলকাতার পাভলভ মানসিক হাসপাতাল, লুম্বিনী পার্ক ও পুরুলিয়া জেলা মানসিক হাসপাতালে বাড়ির লোকজন দিনের যে কোনও সময়ে গেলে রোগীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পান। সেখানে বহরমপুর মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, বিকেলে স্রেফ দু’ঘণ্টা রোগীর সঙ্গে দেখা করা যাবে।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে মুর্শিদাবাদ-সহ লাগোয়া নদিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়া, বর্ধমান ছাড়াও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার মানসিক রোগীদের নিয়ে এসে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, সেখানে বিকেলের দিকে রোগীদের সঙ্গে দেখা করার সময় বেঁধে দিয়ে পরিবারের লোকজনকে ভোগান্তির মুখে ঠেলে দেওয়া কেন? হাসপাতালের নিয়ম মেনে বিকেলের দিকে রোগীর সঙ্গে দেখা করা পরে ওই পরিবারের সদস্যরা সে দিনই বাড়ি ফিরতে পারেন না। এতে তাঁদের অর্থ ও সময় দুটোই বাড়তি ব্যয় হয়।

সম্প্রতি বীরভূম, নদিয়ার চাপড়া, নবদ্বীপ, করিমপুর থেকে কয়েক জন এসেছিলেন রোগীর সঙ্গে দেখা করতে। তাঁরা সকালের দিকে এসে একটি বার চোখের দেখা দেখার জন্য তাঁদের বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। নবদ্বীপ থেকে আসা এক মহিলা হাসপাতালের পুরুষ বিভাগের দোতলার ওঠার সিঁড়ির মুখে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষীকে কোনও ভাবে বুঝিয়ে নার্সদের ঘরের কাছেও পৌঁছে যান। কিন্তু হাসপাতালের সুপারের অনুমতি না থাকায় কর্তব্যরত সেবিকারা তাঁকে ‘গালমন্দ’ করে তাড়িয়ে দেন। ওই মহিলা তখন অনুমতির জন্য সুপারের কাছে আবদেন করেন। অভিযোগ, সুপার নিরাপত্তরক্ষী ও রোগীর বাড়ির ওই আত্মীয়কে বকাবকি করে হাসপাতালের ভেতর থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা বলেন। ওই মহিলা বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত চোখের জলে বহরমপুর ছাড়েন।

শিলিগুড়ির এক রোগীর পরিবারের সঙ্গে সম্প্রতি এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিবাদও বাধে। ওই পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ‘ভিজিটিং আওয়ার্স’ বলে যে সময় বেঁধে দিয়েছেন, তাতে রোগীর সঙ্গে দেখা করে সে দিনই বাড়ি ফেরা যায় না।

কেন এমন নিয়ম? সুপার পবিত্রকুমার সরকার বলেন, ‘‘রাজ্যের সমস্ত মানসিক হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে পরিবারের লোকজনকে দেখা করার নিয়ম যে রয়েছে, এখানেও সেই নিয়ম চালু রয়েছে। স্বাস্থ্যভবনের নির্দেশে ওই নিয়ম চালু রয়েছে, আমি নিজে ওই নিয়ম চালু করিনি।’’

স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী অবশ্য জানান, ‘‘মানসিক হাসপাতালের রোগীদের সঙ্গে পরিবারের লোকজনের দেখা করতে দেওয়ার ব্যাপারে স্বাস্থ্যভবন থেকে কোনও নির্দেশ জারি করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের সুপার তিনি নিজের মতো করে ওই নিয়ম চালু করেন। সেক্ষেত্রে রোগীর বাড়ির স্বার্থ দেখা উচিত বলে আমি মনে করি।’’

মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভাশিস সাহাও মাত্র দু’ঘণ্টার ‘ভিজিটিং আওয়ার্স’ সমর্থন করছেন না। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের অনেক বেশি রোগীর বন্ধু হয়ে উঠতে হবে। বিশেষ করে মানসিক রোগীদের কাছে তাঁদের পরিবারের লোকজন বেশি করে দেখা করতে এলে ওষুধের চেয়েও বেশি কাজ করে।’’ শুভাশিসবাবু জানান, রোগীর বাড়ির লোকজন এখনও অবধি এ নিয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ করেননি। তবে আগামী বৈঠকে তিনি বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, ‘‘বাড়ির লোকজনের সঙ্গে মনোরোগীদের আরও বেশি করে মেলামেশার সুযোগ করে দেওয়ার উপযোগিতা নিয়ে মনোবিজ্ঞানে চর্চা হচ্ছে। রোগী ও পরিবারের সদস্যদের মেলবন্ধন ঘটানোর জন্য স্বাস্থ্য দফতর পরিকল্পনাও নিচ্ছে। সেখানে রোগীর সঙ্গে দেখা করতে না দিয়ে মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী ও পরিবারের সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করছে!’’

হাসপাতালের চিকিৎসক-স্বেচ্ছাসেবীদের আশঙ্কা, এমনিতেই মনোরোগীদের এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায় পরিবারের মানুষদের। তার উপর হাসপাতালে নিয়মের কড়াকড়ি করলে আরওই দেখা মিলবে না তাঁদের। দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকবেন রোগী।

family members two hours baharampur mental hospital mantal patients
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy