Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
divorce

ডিভোর্সের ধাক্কা? কী ভাবে সামলাবেন নিজেকে...

ডিভোর্সের খবর পাওয়ার পর তা মেনে নিতে হলেও চাই মনের যত্ন। এই ধাক্কা সামলানোর উপায় সম্পর্কেও জ্ঞান থাকা জরুরি।

বিবাহবিচ্ছেদ সামলান মন আর যুক্তির হাত ধরে। ছবি: শাটারস্টক।

বিবাহবিচ্ছেদ সামলান মন আর যুক্তির হাত ধরে। ছবি: শাটারস্টক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৯ ১৭:৪৪
Share: Save:

নিজের পছন্দ করা পাত্রকে বিয়ে হোক বা পরিবারের পছন্দে চার হাত এক— কয়েকটা দিন একসঙ্গে কাটানোর পর বিবাহবিচ্ছেদের ঝড়টা প্রায় সব সম্পর্কেই সমান প্রভাব ফেলে। দু’জনে মিলে খুব ঠান্ডা মাথায় ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিলেও সেই সিদ্ধান্তে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার কষ্টটা থাকেই। সঙ্গীর ইচ্ছায় হঠাৎই ডিভোর্সে বাধ্য হলে তখন অপ্রস্তুতির জন্য মনের চাপ বেড়ে যায় অনেকটাই। বিশেষ করে দিনের শেষে ঘরে ফিরে শূন্য ঘর ভাবলেই আঁতকে উঠতে হয়।

কখনও কখনও দেখা যায়, দু’জনের তিক্ততা এমন পর্যায়ে পৌঁছল যে ডিভোর্স ছাড়া উপায় থাকে না। ‘‘অনেকেই ভেবে থাকেন, আইনগত ভাবেই বিষয়টা জটিল, পদ্ধতিটি সারা হয়ে গেলে অনেকটাই ঝাড়া হাত-পা দু’জনে। এই ধারণাটাই ভুল। বরং বেশির ভাগ সময়ে দেখা যায়, ডিভোর্স যে উপায়েই হোক না কেন, আর যে যে কারণেই হোক না কেন, তা সেরে ওঠার পর নিজেকে সামলাতে অনেকটাই সময় লাগছে। আসলে কোনও একটি সম্পর্কে থাকা আর হঠাৎই তা ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় তফাৎ আছে বিস্তর। তাই নিজেকে সামলাতে না জানলে ডিভোর্সের রেশ কেটে যাওয়ার পর পরই অসহায়তা আর একাকীত্ব বোধ করতে পারেন।’’— বললেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অমিতাভ মুখোপাধ্যায়।

ডিভোর্সের আগে তাই খুব ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্তে আসা জরুরি। যদি ডিভোর্স নেওয়াই একমাত্র সমাধানের পথ হয়, তা হলে মনকেও সেই ভাবে তৈরি করাটা দরকার। অকস্মাৎ ডিভোর্সের খবর পাওয়ার পর তা মেনে নিতে হলেও চাই মনের যত্ন। এই ধাক্কা সামলাবেল কী করে? সন্ধান দিচ্ছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অমিতাভবাবু।

আরও পড়ুন: ডিম খেতে ভালবাসেন? প্রতি দিন ক’টা করে খেলে কোনও ক্ষতি হবে না জানেন?

মাথা ঠান্ডা রাখুন: মাথা ঠান্ডা রাখাই ডিভোর্স সামলানোর প্রথম ধাপ। ভেঙে পড়লে তার রেশ সামাজিক ও পেশাগত জীবনেও পড়বে। তাই প্রথমেই মনকে বোঝান, যে মানুষ আপনার সঙ্গে থাকতে চাইছেন না, তাঁকে জোর করে আঁকড়ে ধরে রাখায় কোনও গরিমা নেই। ভুল বোঝাবুঝি থেকে সঙ্গী কোনও চরম সিদ্ধান্তে পৌঁছলে অবশ্যই মুখোমুখি বসুন। আলোচনা করুন। কিন্তু তাতে কাজ না হলে ভেঙে পড়বেন না। এই সময় মন ভাল রাখা কঠিন, তবু বিষাদকে খুব চেপে বসতে দেওয়া যাবে না। তাই মনের সঙ্গে শরীরকেও রাখতে হবে চাঙ্গা। দরকারি পরীক্ষাগুলো সময়ে করান। অভ্যাসের শরীরচর্চা বন্ধ করে দেবেন না, এতেও মনে চাপ পড়ে। যে সব সঙ্গ আপনাকে বার বার পুরনো কথা মনে করায় বা ডিভোর্সের প্রসঙ্গে নানা কথা বলে, তাদের সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন কয়েকটা দিন।

এই সময় মন ভাল রাখা কঠিন, তবু বিষাদকে খুব চেপে বসতে দেওয়া যাবে না।

স্মৃতি এড়ান: পুরনো উপহার, বিয়ের চিহ্ন এগুলো কষ্ট দিলে সে সব কিছু দিনের জন্য সরিয়ে ফেলুন অন্যত্র। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শোক সামলানোর পর সামনে আনুন সে সব। কেন সম্পর্ক টিকল না তা ভাবুন, ভুল থেকে শিক্ষাও নিন। কিন্তু সে সব পোস্টমর্টেম করতে বসে অনিচ্ছুক সঙ্গীকে ঘন ঘন ফোন বা টেক্সট একেবারেই নয়।

সাহসী হোন: মনে মনে সাহসী হতেই হবে। অন্যের বাঁকা কথা বা ইঙ্গিতের উপযুক্ত জবাব দিন। কাছের মানুষরা ছাড়া আর কেউ যেন আপনার ভিতরের ক্ষত বুঝতে না পারেন। সকলের কাছে নিজের মনের অবস্থা প্রকাশ করতে গেলে বার বার দুঃখের প্রসঙ্গগুলো উঠে আসবে যা মনের জন্য ভাল নয়। এ ছাড়া অনেকেই আপনার নরম অবস্থার কথা জেনে আঘাত করতে পারেন।

নিজের যত্ন: আপনারই প্রথম ডিভোর্স হচ্ছে না, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে অনেকেই গিয়েছেন। তাই নিজেকে কোনও ভাবে কষ্ট দেবেন না। নিজের সিদ্ধান্তে ডিভোর্স করলেও অনেক সময় পুরনো সুখের দিনগুলো ঘুরেফিরে এসে কষ্ট দেয়। এই সময় বরং নিজেকে একটু ব্যস্ত করে ফেলুন। নিজের কোনও শখ ঝালিয়ে নিতে শুরু করুন নিজের মতো করে। মন খুব অশান্ত হলে লিখে ফেলুন মনের সব কথা। কাউকে দেখানোর দরকার নেই। এক সময় মন শান্ত হয়ে এলে ইচ্ছে করলে সে সব আর না-ও জমিয়ে রাখতে পারেন। অন্য কিছু ভাল লাগলে শুরু করুন তা। কোনও সংস্থার সঙ্গে জড়িত থেকেও সাংস্কৃতিক চর্চা করতে পারেন। একান্তই সে সবে মন না থাকলে খুব কাছের বন্ধু বা পরিজনদের সময় দিন। বেড়িয়ে আসুন কোথাও। বাইরে খেতে যান। কেনাকাটা করুন। মোদ্দা কথা, মন একটু অন্য দিকে থাকে এমন কাজে ব্যস্ত রাখুন নিজেকে।

আরও পড়ুন: ঘন ঘন কটন বাডস দেন কানে? বড় বিপদ ডেকে আনছেন অজান্তেই

সন্তানের যত্ন ও নিরাপত্তার দায়িত্ব নিন দু’জনেই।

সম্পর্কের জন্য ব্যস্ততা নয়: ডিভোর্স হল মানেই নতুন সম্পর্ককে এখনই খুঁজে বার করে ফেলতে হবে, এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন। একা থাকতে পারেন না বলেই এমনটা হচ্ছে, নইলে একটা সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নতুন সম্পর্ক— এমনটা সব সময় হয় না। এতে বরং প্রেমের বদলে একটা আঁকড়ে ধরার, অবলম্বন খুঁজে পাওয়ার ইচ্ছে কাজ করে। তাই নতুন সম্পর্কে জড়ানোর আগে নিজেকে কিছুটা সময় দিন। কোনও নতুন মানুষ জীবনে এলেও কিছুটা সময় দিন আগে নিজেকে। শান্ত হয়ে আসার পরেও যদি সেই মানুষটির সঙ্গে ভাল লাগে, প্রয়োজনীয় মনে হয়, তবেই এগোন।

সন্তানের দিক ভাবুন: ডিভোর্সের পর সন্তান কার কাছে থাকবে এ নিয়ে জলঘোলা কম হয় না। নানা সময় এর প্রভাব এত তিক্ত হয় যে সন্তান নিজেকে অপ্রয়োজনীয় ভাবতে শুরু করে। নিজেরা ডিভোর্স করলেও সন্তানের কথা প্রথম থেকে ভাবুন। চেষ্টা করুন ওর কথা ভেবে আর একটু মানিয়েগুছিয়ে একসঙ্গে থেকে যাওয়া যায় কি না। সেটা একান্তই না পারলে প্রথম থেকেই একসঙ্গে মিলে ঠিক করুন, সন্তান কার কাছে থাকবে। অবশ্যই সন্তানের মতামত তথা ইচ্ছেটাও জানুন। চেষ্টা করুন বাকি জীবনটা তার সঙ্গ ও দায়িত্ব দু’জনেই ভাগ করে নিতে। সন্তানের প্রশ্নে একেবারেই ইগোকে সামনে আনবেন না।

আর্থিক দিক: আইনগত ভাবে আর্থিক ভাগ বাঁটোয়ারার পথ তো রইলই, তা ছাড়াও যদি আর্থিক দিক থেকে পরনির্ভরশীল হন, তা হলে নিজের খরচে রাশ টানুন। যে সব খরচ আগে অতিরিক্ত ছিল, সে সব ছেঁটে ফেলুন। বরং সেই টাকা ব্যয় করে এমন কিছু শিখে ফেলুন, যা আপনাকে আনন্দও দেবে আবার কিছুটা আত্মনির্ভরশীল হতে শেখাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE