Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
pregnancy

গর্ভাবস্থায় ডায়াবিটিস ক্ষতি করে প্রসূতি ও শিশুর, কোন পথে মিলবে মুক্তি?

মূলত প্রেগন্যান্সি হরমোনের দৌলতেই হয় এ রকম। মেনে চলতে হয় বিশেষ কিছু নিয়ম।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবিটিসে কিন্তু ভাবী মা ও সন্তানের সমূহ বিপদ। ছবি: শাটারস্টক।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবিটিসে কিন্তু ভাবী মা ও সন্তানের সমূহ বিপদ। ছবি: শাটারস্টক।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৬:২১
Share: Save:

আগে সুগারের নামগন্ধ ছিল না, গর্ভাবস্থার ২৬–২৮ সপ্তাহে হঠাৎই বেড়ে গেল রক্তে শর্করার পরিমাণ। অনেক ক্ষেত্রেই এমন হয়। এর নাম জেস্টেশনাল ডায়াবিটিস৷

মূলত প্রেগন্যান্সি হরমোনের দৌলতেই হয় এ রকম। অনিয়ম করলে আশঙ্কা আরও বাড়ে। এ ছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই অসুখের প্রভাব বাড়ে। যেমন:

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম থাকলে এই রোগের শঙ্কা বাড়ে। আগের গর্ভাবস্থায় জেস্টেশনাল ডায়াবিটিস হয়ে থাকলেও ভয় থাকে। মায়ের বয়স ৩৫–এর বেশি হলে সাবধান হতে হবে। রক্তের সম্পর্কযুক্ত ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ডায়াবেটিস হলে আশঙ্কা থেকে যায়। আগের সন্তানের যদি জন্মগত ত্রুটি থাকে সে ক্ষেত্রে বা ৯ পাউন্ডের বেশি ওজন নিয়ে যদি সে জন্মে থাকে তা হলেও অসুখের সম্ভাবনা বাড়ে। হবু মায়ের হাইপ্রেশার থাকলে, অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বেড়ে গেলে, আগে অজানা কারণে গর্ভপাত হলে বা মৃত সন্তান জন্মালে এই রোগ ধেয়ে আসতে পারে। ভাবী মায়ের ওজন বেশি থাকলেও সতর্ক হতে হবে।

এক বার এই রোগ হওয়া মানে কিন্তু ভাবী মা ও সন্তানের সমূহ বিপদ। কাজেই কখন কী করবেন তা দেখে সতর্ক থাকা দরকার।

সুগার বাড়ার বিপদ

হাইপ্রেশার ও প্রি–একলাম্পশিয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। চোখ–কিডনির ক্ষতি হতে পারে। ইউরিন–ভ্যাজাইনাতে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে। প্ল্যাসেন্টা বড় হতে থাকে, বাড়ে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড। বাচ্চা যে থলির মধ্যে থাকে তা ছিঁড়ে সময়ের আগে প্রসবের আশঙ্কা বাড়ে। প্ল্যাসেন্টা ছিঁড়ে গেলে শুরু হয় প্রবল রক্তপাত, বাচ্চার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে এতে সিজারের সময় রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে৷ সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে। নবজাতকের রক্তে সুগার কমে যেতে পারে৷ বাড়াবাড়ি রকমের জন্ডিস বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

রোগের লক্ষণ

অধিকাংশ সময় এই রোগের উপসর্গ তেমন থাকে না৷ কিছু ক্ষেত্রে আবছায়া দেখা, ক্লান্তি, ইউরিন–ভ্যাজাইনা–ত্বকের সংক্রমণ, জলতেষ্টা, বার বার প্রস্রাব পাওয়া, গা–বমি, খিদে বাড়া সত্ত্বেও ওজন কমতে থাকা ইত্যাদি লক্ষণ কখনওসখনও থাকে৷

রক্ত পরীক্ষা

হবু মায়ের বা তাঁর পরিবারে কারও ডায়াবিটিস থাকলে গর্ভাবস্থার ১২–১৫ সপ্তাহে রক্ত পরীক্ষা করা হয়। না থাকলে করা হয় ১৬–২০ সপ্তাহে। ফাস্টিং সুগার ১১০–এর বেশি ও ভরপেট খাওয়ার দু–ঘণ্টা পর (পিপি সুগার) ১৪০–এর বেশি এলে ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার এক ঘণ্টা, দু–ঘণ্টা ও তিন ঘণ্টা পরে রক্তে সুগারের মাত্রা মাপা হয়। একে বলে ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট (ওজিটিটি)। তাতে গোলমাল এলে শুরু হয় চিকিৎসা।

ডায়েট ও চিকিৎসা

তেল–ঘি–মাখন–চর্ব একদম কমিয়ে দিন৷ প্রোটিনও আগের চেয়ে কম খান৷ শাক–সব্জি–ফল খান পর্যাপ্ত৷ সঙ্গে মাপমতো ব্রাউন ব্রেড, আটার রুটি, ভাত৷ চিনি, গুড়, মিষ্টি, কোল্ড ড্রিঙ্ক, আইসক্রিম, সরবৎ, ফলের রস, কেক, পেস্ট্রি খাবেন না৷ কোন খাবার কতটা খাবেন তা বুঝতে ডায়াটিসিয়ানের পরামর্শ নিতে পারেন৷ রোগ যদি ডায়াবেটিসের আগের পর্যায়ে থাকে, যাকে ইমপেয়ার্ড গ্লুকোজ টলারেন্স বলে, লো ক্যালোরির সুষম খাবার ও হালকা ব্যায়ামেই তা নিয়ন্ত্রণে থাকে বেশিরভাগ সময়৷ ডায়াবেটিস হয়ে গেলে এর পাশাপাশি ওষুধ বা ইনসুলিন লাগে৷ নিয়মিত রক্তপরীক্ষা করে ওষুধ ঠিক করতে হয়৷ গ্লুকোমিটার নামের যন্ত্রে ঘরেই এই রক্ত পরীক্ষা করা যায়৷ সামান্য কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করে নজরদারি করতে হতে পারে৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE