Advertisement
E-Paper

এক মাসে ৪১ প্রসূতির মৃত্যু, প্রশ্নে শহরের পাঁচ মেডিক্যাল

এক মাসে একচল্লিশ! খাস কলকাতা শহরের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে গত মার্চ মাসে প্রসূতি-মৃত্যুর এমন নজিরবিহীন সংখ্যাবৃদ্ধিতে চমকে গিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। সাধারণত এই মেডিক্যাল কলেজগুলিতে মাসে এক থেকে দু’জন অর্থাৎ বছরে ১০-১২ জন মা সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৮

এক মাসে একচল্লিশ!

খাস কলকাতা শহরের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে গত মার্চ মাসে প্রসূতি-মৃত্যুর এমন নজিরবিহীন সংখ্যাবৃদ্ধিতে চমকে গিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। সাধারণত এই মেডিক্যাল কলেজগুলিতে মাসে এক থেকে দু’জন অর্থাৎ বছরে ১০-১২ জন মা সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। ২০১৫ সালে পৌঁছে সেটুকুও যাতে না হয়, সে জন্য গত কয়েক বছর যাবৎ কেন্দ্রের জননী সুরক্ষা যোজনা, জননী শিশু সুরক্ষা যোজনার মতো প্রকল্পে অন্তঃসত্ত্বাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ানো, টিকাকরণ এবং বাড়ির বদলে হাসপাতালে প্রসব নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু কলকাতায় মেডিক্যাল কলেজ স্তরের হাসপাতালেই মার্চ মাসে সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে বা জন্মের ঠিক পরেই মায়ের মৃত্যুর সংখ্যার এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি স্বাস্থ্যকর্তাদের দিশাহারা করে দিয়েছে।

দফতরের দেওয়া পরিসংখ্যানই বলছে, এই এক মাসে কলকাতার পাঁচ মেডিক্যাল কলেজে মোট ৪১ জন সদ্যপ্রসূতি মারা গিয়েছেন! নিকট অতীতে এক মাসে রাজ্যের কোথাও এত প্রসূতির মৃত্যু হয়নি। এর মধ্যে এসএসকেএম হাসপাতালে মার্চ মাসে ৮ জন সদ্যপ্রসূতি, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ৫ জন, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ৯ জন, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ৯ জন, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ১০ জন প্রসূতি মারা গিয়েছেন। স্বাস্থ্যকর্তারা স্বীকার করেছেন, এমন নয় যে এই হাসপাতালগুলিতে মার্চ মাসে হঠাৎ বেশি প্রসূতি প্রসবের জন্য ভর্তি হয়েছেন বলে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। তা হলে এর কারণ কী? প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে এই মৃত্যুর কারণ নিয়ে আলাদা-আলাদা কমিটি গড়ে তদন্ত হয়েছে। কিন্তু কী কারণে এত জন মা মারা গেলেন, কোনও কমিটিই সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।

এর পরে এপ্রিল মাস শেষ হতে চললেও এত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় স্বাস্থ্য দফতর আলাদা কেন্দ্রীয় কমিটি গড়ে তদন্ত শুরু করেনি, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘‘এই যুগে কলকাতা শহরে মেডিক্যাল কলেজগুলির মতো চিকিৎসা পরিষেবার তথাকথিত সর্বোৎকৃষ্ট জায়গায় এক মাসের মধ্যে ৪১ জন প্রসূতি মারা যাচ্ছেন আর স্বাস্থ্য দফতরের কোনও হেলদোল নেই! আমরা অবিলম্বে এর উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করছি।’’

স্বাস্থ্য দফতরের পরিবার কল্যাণ কমিশনার সঙ্ঘমিত্রা ঘোষকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রতিটি শিশুমৃত্যু সম্পর্কে আমরা অবগত রয়েছি। কিন্তু শুধু আলাদা করে মার্চ মাসে কলকাতার পাঁচ মেডিক্যাল কলেজে কত প্রসূতি মারা গিয়েছেন, এখনই বলতে পারব না। কিছু বেশি মারা গিয়েছেন হয়তো। আমরা খতিয়ে দেখছি।’’ স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরেই অবশ্য প্রশ্ন উঠেছে, কোনও বিশেষ ব্যাচের ওষুধ বা স্যালাইন থেকে এমন হল কি না, স্বাস্থ্য ভবন থেকে তা দেখার চেষ্টা এত দিনেও হল না কেন? কেনই বা শো কজ করা হল না সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকটি মেডিক্যাল কলেজকে?

প্রসূতি ও শিশুর স্বাস্থ্য পরিষেবার উপরে নজরদারির জন্য গঠিত স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘মার্চ মাসে প্রসূতি-মৃত্যু একটু বেড়েছে কলকাতায়। আমরাও চিন্তিত। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, সব হাসপাতালেই ওই মাসে শারীরিক ভাবে অত্যন্ত অসুস্থ মায়েদের জেলা থেকে রেফার করা হয়েছিল। কলকাতায় পৌঁছতে-পৌঁছতেই তাঁদের অবস্থা আরও খারাপ হয়। ফলে প্রসবের সময়ে আপ্রাণ চেষ্টা করেও তাঁদের বাঁচানো যায়নি।’’ কিন্তু জেলাস্তরে অনেক জেলা হাসপাতাল, স্টেট জেনারেল, মহকুমা হাসপাতাল এমনকী মেডিক্যাল কলেজও আছে। তা হলে অসুস্থ প্রসূতিদের এত দূরের রাস্তা উজিয়ে কলকাতায় রেফার করা হল কেন? যে সব হাসপাতাল তাঁদের রেফার করেছে, তাদের কাছে কি রেফারের কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে? এ রাজ্যে প্রসূতিদের প্রসবের জন্য সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে নিশ্চয়যান অধিকাংশ সময়েই মেলে না বলে অভিযোগ। ওই কেসগুলির ক্ষেত্রে তা পাওয়া গিয়েছিল কি না, তা জানা হয়েছে কি?

ত্রিদিববাবুর উত্তর, ‘‘এ সব বিষয়ে জানতে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলিতে আমরা তদন্ত দল পাঠাচ্ছি। তা ছাড়া আগামী সপ্তাহে স্বাস্থ্যভবনে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকও বসছে। তবে এপ্রিল মাসে এখনও পর্যন্ত ওই হাসপাতালগুলিতে প্রসূতি মৃত্যুর স্বাভাবিক হারে কোনও বৃদ্ধি হয়নি, এটাই যা স্বস্তির কথা।’’

Parijat Bandopadhyay Kolkata Health department Pregnant Medical college
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy