বৃষ্টির জল পেয়ে তারার মতো ফুটে ওঠে গোলাপি, সাদা, হলুদ, লাল নানা রঙের রেন লিলি। বর্ষার বাগানে রঙিন লিলির বাহারে মন ভাল হয়ে যায়। আর বৃষ্টির জল পেলে টব ভরে যায় রেন লিলিতে, প্রতিটি স্টিকের মাথায় একটি করে ফুল। অনেকে রেন লিলিকে বাংলায় ডাকে ভুঁই লিলি নামেও। রেন লিলির জন্য খুব বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।
রোপণের আগে তোড়জোড়
বর্ষা আসার আগে যে কোনও সময়ে রোপণ করা যায় রেন লিলির কন্দ বা বাল্ব। কন্দ বা রেন লিলির চারা পাওয়া যায় নার্সারিতে। প্রয়োজনে অনলাইন থেকেও আনিয়ে নিতে পারেন রেন লিলির কন্দ। এ ছাড়া ঘরেও বীজ থেকে চারা তৈরি করে নেওয়া যায়। এর জন্য সিডলিং ট্রে বা ছোট-ছোট কাগজের কাপে সিক্ত কোকোপিটের গুঁড়োয় বীজ পুঁতে দিন। তিন-চার দিনের মধ্যেই চারা বেরিয়ে যাবে। অবশ্য রোজ জল স্প্রে করতে হবে। চারা কিছুটা বড় হলে রোপণ করে দিন বড় টবে। তবে বীজ থেকে চারা তৈরি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই নার্সারি থেকে এক বছরের পুরনো কন্দ বা কন্দ থেকে তৈরি চারা কিনে নেওয়াই ভাল। বাগান সাজানোর নানা রঙের কন্দ কিনুন। ফুল ফুটলে একাধিক রঙের সমাবেশ দেখতে ভাল লাগবে।
বাগানের এক ধার দিয়ে রেন লিলি রোপণ করতে পারেন, অনেকটা বেড়ার মতো করে। ফুল ফুটলে দেখতে বেশ লাগবে। অন্য সময়ে ফুল না ফুটলেও সবুজ লম্বা ঘাসের মতো এর পাতার বাহার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। গাছ রোপণের আগে ভাল করে বাগানের মাটি কুপিয়ে নিন। বাগানে এমন জায়গা নির্বাচন করবেন যেখানে পর্যাপ্ত রোদ আসে। ছোট গ্রিন জ়োনের জন্য এই গাছ আদর্শ। বারান্দা বা ছাদবাগানে টব, গামলা বা গ্রো ব্যাগে রোপণ করা যায় রেন লিলি। তবে কম গভীর অথচ চওড়া মুখের টব বা বড় পরিধিওয়ালা পাত্র এই গাছের জন্য আদর্শ।
যে কোনও মাটিতে এই গাছ হয়। তবে ঝুরঝুরে মাটি এই গাছের পছন্দ। মাটি তৈরির জন্য বাগানের মাটির সঙ্গে মেশাতে হবে ভার্মিকম্পোস্ট বা কেঁচো সার। কম্পোস্টের পরিবর্তে দিতে পারেন এক বছরের পুরনো গোবর সার বা পাতাপচা সার। এর সঙ্গে মিশিয়ে দিন দু’চামচ হাড় গুঁড়ো, দু’চামচ শিং কুচি ও এক চামচ নিমখোল। অনেকে মাটি তৈরির সময়ে ছত্রাকনাশকও দেন, যদিও রেন লিলিতে খুব একটা রোগপোকার উৎপাত নেই। মাটি যদি খুব ভারী হয়, তা হলে তার সঙ্গে নদীর সাদা বালি মিশিয়ে নেওয়া যায়। গাছ রোপণের আগে টবে বা বাগানে মাটি তৈরি করে তাতে এক-দু’দিন জল স্প্রে করুন। তার পর চারা বা কন্দ রোপণ করা ভাল।
রোদ-জল-সার
পর্যাপ্ত রোদ পেলে এই গাছ ফুলে ভরে যায়। তবে গ্রীষ্মের মধ্য দুপুরের কড়া রোদ এর জন্য ক্ষতিকর। তাই গ্রীষ্মের দিনগুলো সেমি শেডে রাখলেই ভাল। জল দিতে হবে পর্যাপ্ত। বিশেষ করে বৃষ্টির সময়ে টবগুলো এমন জায়গায় রাখতে হবে, যাতে গাছ বৃষ্টির জল পায়। তবে টবের জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল হতে হবে। মাটিতে গাছ করলে ঢাল ভাল হওয়া জরুরি, যাতে বৃষ্টির জল না দাঁড়াতে পারে। ফুল আসার আগে এর লম্বা পাতা ছেঁটে দিন। পাতা যত ছেঁটে দেবেন, তত ভাল ফুল আসবে। তবে শুকনো ফুল, হলুদ হয়ে যাওয়া পাতা ও আগাছাও ছেঁটে দেবেন।
একবার রেন লিলির কন্দ রোপণ করলে কয়েক বছর প্রতি বর্ষায় ফুল হবে। ঘনঘন রি-পটিংয়ের প্রয়োজন নেই। সারা বছর এই গাছে সার দেওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। অবশ্য ভাল ফুলের জন্য মাসে একবার করে তরল জৈব সার দিতে পারেন মার্চের শেষ থেকে মে-জুন পর্যন্ত। আবার অক্টোবর-নভেম্বরে। শীতের সময়ে শুধু জল ও রোদ। ফুলের মরসুম শেষে এর ফুল শুকনো হয়ে ঝরে পড়ার সময়ে তার বীজথলি বা সিডপট থেকে বীজ ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। তাই ফুল শুকিয়ে গেলে তা ছেঁটে ফেলার আগে বীজ সংগ্রহ করে টবে বা মাটিতে ছড়িয়ে দিতে পারেন। তার থেকে আবার নতুন গাছ হবে, গাছ থেকে ফুল।
ঊর্মি নাথ
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)