Advertisement
E-Paper

মালদহে জ্বর ছড়ানোর কথা মানল সরকারও

এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ এ বার ছড়াল মালদহের দিকে। শিলিগুড়ির পাশাপাশি জ্বরও এ বার হানা দিল সেখানে। এত দিন দু-এক জন জ্বরের রোগী পাওয়া যাচ্ছিল মালদহে। আচমকা বেড়েছে সংখ্যাটা। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ইতিমধ্যেই এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ-সহ রোগীরা ভর্তি হয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। কিন্তু ব্যাপক হারে রোগ ছড়ায়নি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২৬
বিহারের কিষাণগঞ্জ থেকে জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে নিয়ে আসা হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

বিহারের কিষাণগঞ্জ থেকে জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে নিয়ে আসা হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ এ বার ছড়াল মালদহের দিকে। শিলিগুড়ির পাশাপাশি জ্বরও এ বার হানা দিল সেখানে। এত দিন দু-এক জন জ্বরের রোগী পাওয়া যাচ্ছিল মালদহে। আচমকা বেড়েছে সংখ্যাটা।

দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ইতিমধ্যেই এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ-সহ রোগীরা ভর্তি হয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। কিন্তু ব্যাপক হারে রোগ ছড়ায়নি। জ্বরের কারণ জানা না গেলে এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে ওই জ্বর এ বার আরও নীচের দিকে, অর্থাৎ দক্ষিণবঙ্গে ছড়ানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না জীবাণু-বিজ্ঞানীরা।

শুক্রবার উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ও মালদহে জ্বর ছড়ানোর কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “যে রিপোর্ট পেয়েছি, তাতে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি বা কোচবিহারে রোগী-ভর্তির রেখাচিত্র নিম্নমুখী। একমাত্র মালদহতেই রোগীভর্তির হার কিছুটা বেড়েছে।” তা সত্ত্বেও তাঁর দাবি, “সামগ্রিক ভাবে রোগ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।” জীবাণু-বিজ্ঞানীদের বড় একটা অংশ মনে করছেন, এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ-সহ রোগটির জীবাণু এখনও চিহ্নিত না হওয়ায় জেলাগুলিতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের উপরে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার।

স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মালদহ মেডিক্যালে গত ৬ অগস্ট চার জন রোগী এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হন। পর দিন জ্বর নিয়ে হাসপাতালে যান ১০ জন। এ দিন জ্বর এবং এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে সাত জন ভর্তি হন। উপসর্গ নিয়ে এ দিন ১৩ বছরের বিজয় কিস্কুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মৃতের বাড়ি গাজলের জগদলা গ্রামে। তার বাবা বীরেন কিস্কু বলেন, “মঙ্গলবার স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর ছেলের প্রচণ্ড কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। সঙ্গে বমি ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল।” মৃত্যুর পরে ওই কিশোরের রক্ত সংগ্রহ করেন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। মেডিক্যালের সুপার মহম্মদ আব্দুর রসিদ বলেন, “কী কারণে ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে, রক্ত পরীক্ষা না হলে বলা যাবে না।”

এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে মালবাজারের বাসিন্দা মিনু সান্তালির (২২) মৃত্যু হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালেও। উপসর্গ এবং জাপানি এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২১ জন ভর্তি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জন সিসিইউতে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চার জনের পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। ওদলাবাড়িতে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতেই এক্কা শৈব্য (৩১) নামে এক জনের মৃত্যু হয়েছে এ দিন। তাঁর পরিবার ও পড়শিদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করবে স্বাস্থ্য দফতর। সব মিলিয়ে, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে উত্তরবঙ্গে এনসেফ্যালাইটিসজনিত উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১৩৬।

শিলিগুড়ি শহরেও জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ শুরু হয়েছে। শিলিগুড়ির ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিল দীপায়ন রায়ের বাবা বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। তাঁর রক্তে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মিলেছে বলে বাড়ির লোকজন জানান। সেই সঙ্গে শহরের দু’টি নার্সিংহোমে জ্বর নিয়ে ভর্তি দু’জন রোগীর শরীরে ডেঙ্গির উপসর্গ দেখা যাচ্ছে বলে সন্দেহ করছেন চিকিৎসকেরা। নিশ্চিত হতে রক্ত পরীক্ষা করানো হচ্ছে। বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরাও।

শিলিগুড়ির বেশ কয়েকটি নার্সিংহোমে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের পরীক্ষা চলছে। কয়েকজনের রক্তে রোগের জীবাণুুও মিলেছে বলে দাবি। যদিও, সরকারি ভাবে সেই পরীক্ষার রিপোর্ট যথাযথ নয় বলে দাবি করা হয়েছে। রোগ পরীক্ষায় যাতে খামতি না থাকে, সে কারণে নাসির্ংহোমগুলিকে সরকারি কিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে শিক্ষা-স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব অনুযায়ী ,চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত ১০৯১ জনের রক্ত পরীক্ষা হয়েছে। জাপানি এনসেফ্যালাইটিস মিলেছে ২৩২ জনের রক্তে। যার মধ্যে ১০৫ জনই জলপাইগুড়ি জেলার বাসিন্দা।

government encephalitis malda
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy