Advertisement
E-Paper

বৃন্দাবনে হোলি, বৈধব্যের শ্বেতবস্ত্র ঢেকে দিল ফাগে

বিব্রত, লজ্জিত সুকুমারী মুহূর্তের বিহ্বলতা কাটিয়ে চোখ মেলে তাকালেন। ভুরুর চকিত ওঠা নামাতেই প্রকাশ পেল তাঁর আপাত বিরক্তির মাত্রা। আলুথালু কাপড় সামলে উঠে পড়তেই তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন অন্যরা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৫:৩১
নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব চিত্র।

কুমারী দাসী। বছর চল্লিশেক বয়স। শরীরটা সে দিন বিশেষ জুতের ছিল না। তাও ঘরে বসে না থেকে, গোপীনাথ মন্দিরে চলে এসেছিলেন আশ্রমের অন্য বিধবাদের সঙ্গে। হোলির উৎসবে। তবে দাঁড়িয়ে ছিলেন ভিড়ের থেকে একটু দূরে।

শ্রীরাধা ও শ্রীকৃষ্ণের ভজন শেষ হতেই বেজে উঠল ‘রং বরসে ভিগে চুনর বালি...’। জিন্স ও টপ পরা হাল ফ্যাশনের দুটি ফিচকে মেয়ে নাচতে নাচতে এগিয়ে গেল মোটা থামের আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা সুকুমারীর দিকে। টানতে টানতে তাঁকে নিয়ে এল মন্দিরের মাঝখানে। সেখানে গোলাপ গাঁদা চন্দ্রমল্লিকার পাপড়ির, পা ডুবে যাওয়া নরম গদিতে নাচছেন শতাধিক বিধবা। আশ্রমের চারদিকে ঘোরানো ছাদের ব্যালকনি থেকে ঝরে পড়ছে ফুলের পাপড়ি, উড়ছে নানা রকমের ভেষজ রঙ। সুগন্ধে ম-ম করছে শতাধিক প্রাচীন গোপীনাথ মন্দির।

মঙ্গলবার এখানে হোলি উত্সবের আয়োজন হয়েছিল। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই বৃন্দাবনের বিভিন্ন আশ্রমে থাকা বিধবাদের নিয়ে এই রঙের উৎসবের আয়োজন করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সুলভ ইন্টারন্যাশনাল। বৃন্দাবনের আশ্রমগুলিতে বিধবাদের মধ্যে বাঙালির সংখ্যাই বেশি। কেউ দারিদ্র, কেউ সাংসারিক অবহেলা, কেউ বা ধর্মকর্মের জন্য বৃন্দাবনে এসে রয়েছেন।

আরও পড়ুন: রঙের উত্সবে কোন কোন দিকে খেয়াল রাখবেন...

দারিদ্রেই দিন কাটে। কিন্তু দারিদ্র বা কষ্ট যতই থাকুক, ছেলের বৌয়ের মুখ ঝামটা নেই এখানে। নেই অমানুষ ছেলের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার যন্ত্রণা। আর এখানকার গতানুগতিক জীবনেও কখনও কখনও তো ছোঁয়া লাগে রঙের। তাঁরা দল বেঁধে দীপাবলির প্রদীপ ভাসিয়েছেন যমুনার জলে। দুর্গা পুজোয় বেড়িয়ে গিয়েছেন কলকাতায়, যে শহর তাঁদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল বহু বছর আগেই।

এ ভাবেই হোলিতে মাতলেন তাঁরা। রঙের উৎসবে। ঊর্ধ্ববাহু হয়ে নিজেকে রঙের নেশায় ভাসিয়ে দেওয়ার উচ্ছ্বাস। শরীর আর মনের জড়তা ঝেড়ে ফেলে, কিশোরী মেয়ের মতো নেচে উঠলেন সবাই। এ দিন তাঁদের পরিচয় স্বামীহীন, নিঃসহায়, অবলা ঠাকুমা-দিদিমা-পিসিমা নয়— তাঁদের বহুদিনের অবদমিত নারীত্বের থেকে সামান্য হলেও মুক্তির দিন। সাদা শাড়ির ভিড়ে রঙের ছোয়া পড়তেই যেন এক একটি শরীর মোহময়ী হয়ে ওঠে কোনও এক জাদুর স্পর্শে।

আরও পড়ুন: দোল-স্পেশ্যাল রকমারি

জিন্স পরা মেয়ে দুটি এক ঝটকায় সুকুমারিকে টেনে ফেলল ফুলের বিছানায়। অযত্নের শরীর। তবু তীক্ষ্ণ নাক, টানা চোখ, সুগঠিত চিবুকের উপর মধ্যাহ্নের তীব্র রোদ্দুর ঠিকরে পড়তেই, রঙে রঙে যেন ফিরে গেল অনেক বছর আগের সজীবতায়। বিব্রত, লজ্জিত সুকুমারী মুহূর্তের বিহ্বলতা কাটিয়ে চোখ মেলে তাকালেন। ভুরুর চকিত ওঠা নামাতেই প্রকাশ পেল তাঁর আপাত বিরক্তির মাত্রা। আলুথালু কাপড় সামলে উঠে পড়তেই তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন অন্যরা। নিমেষে ঝাঁপিয়ে পড়ল ক্যামেরা হাতে দেশ বিদেশ থেকে আসা কয়েক ডজন ফটোগ্রাফারও।

খোল করতাল খঞ্জনি আর উলুধ্বনির শব্দ ঢেকে দিল বৈধব্যের বিবর্ণ ছবিকে। হোক না একদিনের জন্য। সেটাও তো এ সমাজের অনেক বিধবার কাছে আজও দিবাস্বপ্নের মতোই।

Holi Dol Festival
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy