বাঙালি বাড়িতে পুজোর আগে ঘরদোর পরিষ্কার করা বা ঘর সাজানোর একটা পর্ব চলে। বিছানার চাদর, পর্দা, কুশন কভার— সব কিছু নতুন কিনতে পছন্দ করেন অনেকেই। আবার দামি আসবাব বা ঘর সাজানোর জিনিস কেনার সাধ্য সকলের নেই। কিন্তু কম খরচেও ঘর সাজানো যায় মনের মতো করে। বেছে নিতে হবে অন্দরসাজের টুকিটাকি এমন সব জিনিস, যাতে রুচি ও আভিজাত্যের ছাপও থাকবে, আবার সাধ ও সাধ্যের মধ্যে ভারসাম্যও বজায় থাকবে।
বসার ঘরের সাজ
বাড়ি মানে তো শুধু আসবাব, মেঝে, দেওয়ালের সমষ্টি নয়, বাড়ির প্রাণপ্রতিষ্ঠা করতে প্রয়োজন তাকে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা। আর এখানেই আসে ‘ডেকর আইটেম’-এর কথা। ঘর সাজানোর জন্য এখন সেরামিক ও চিনেমাটির হরেক জিনিসপত্র পাওয়া যায়। সেরামিকের চায়ের কাপ ও প্লেটও হয়ে উঠতে পারে অন্দরসাজের সামগ্রী। হালকা রঙের দেওয়ালের প্রেক্ষিতে গাঢ় রং ভাল লাগবে। দেওয়ালের কোনও তাক বা শো-কেসে সাজিয়ে রাখতে পারেন সেরামিকের কাপ-ডিশ। অল্প খরচেই হয়ে যাবে বসার ঘরের সাজ। চিনেমাটির তৈরি ঘর সাজানোর জিনিসের বিপুল সম্ভার এখন শহরের দোকানে দোকানে। বাসনপত্র থেকে শুরু করে ফুলের টব, দেওয়া সাজানোর সামগ্রী, ফুলদানি, কারুকাজ করা মূর্তি, আরও কত কী! অন্দরসজ্জায় শৈল্পিক স্পর্শ আনতে চাইলে চিনেমাটির কাপ, প্লেট, ট্রে, টব দিয়ে সাজাতে পারেন ঘর।
সুন্দর করে সাজিয়ে নিন বসার ঘর। ছবি: সংগৃহীত।
দেওয়াল জুড়ে স্মৃতি
দেওয়ালের সাজ। ছবি: সংগৃহীত।
সুখের মুহূর্তগুলিকে ফ্রেমবন্দি করে সাজিয়ে তুলতে পারেন ঘর। শোয়ার ঘর হোক কিংবা বসার ঘরের কোণের দেওয়ালটি— পছন্দের বেশ কিছু ছবি ফ্রেমে বাঁধিয়ে ঝুলিয়ে দিন দেওয়ালে। নানা মাপের ফোটোফ্রেম হলে দেখতে বেশি ভাল লাগবে। ওয়ালপেপার দিয়ে দেওয়াল সাজানোর চল নতুন নয়। তবে এখন বাজারে রকমারি ওয়ালপেপার পাওয়া যায়। দেওয়ালের আকৃতি এবং ঘরের সাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ওয়ালপেপার পেছে নিতে পারেন। যদি অন্য রকম সাজ চান, তা হলে আয়না ব্যবহার করতে পারেন। সেকেলে ডিজ়াইন থেকে সাম্প্রতিক মিনিমালিস্ট কায়দা— পছন্দ মাফিক কিনে নিতে পারেন নানা রকমের আয়না।
বয়স্কদের ঘর সাজান যত্ন নিয়ে
বয়স্কদের ঘর সাজানোর সময়ে কিছু জিনিস খেয়াল রাখুন। ছবি: সংগৃহীত।
নিজেদের ঘরের কোণ যতই দামি আসবাব বা গাছ দিয়ে সাজান না কেন, বয়স্কদের ঘরের কোনায় এমন কিছু রাখবেন না, যাতে চলতে ফিরতে ধাক্কা খেতে হয়। আসবাব রাখলেও তার ধারগুলি যাতে গোল হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ফ্ল্যাটবাড়িতে অনেক সময়েই বয়স্কদের ঘরের ভিতরেই পুজোর জায়গা করা হয়। তেমন হলে, ঘরের সবটুকু জুড়ে পুজোর জায়গা করবেন না। ঘরের একধারে কাঠের বা মার্বেলের সিংহাসন রাখতে পারেন। কাজে লাগান দেওয়ালকে। সেখানে কাঠ বা প্লাই দিয়ে সিংহাসন বানিয়ে দেওয়া যেতে পারে, যাতে ঘরেও অনেকটা জায়গা থাকে। ঘরের সঙ্গে লাগোয়া যদি বারান্দা থাকে, তা হলে সেখানে আরামকেদারা পেতে দিন। বারান্দা সাজিয়ে দিন সবুজ গাছে। যদি বারান্দা না থাকে, তা হলে ঘরে জানলার কাছে রেখে দিন আরামকেদারা বা গদি আঁটা চেয়ার। কাছেই ছোট টেবিলে রাখুন ডায়েরি-পেন। চা খাওয়ার জায়গা করে দিন। টেবিলের উপর আপনাদের সকলের ছবি বাঁধিয়ে রেখে দিন। পাশে রাখুন ফুলদানি। সম্ভব হলে টাটকা ফুলে সাজিয়ে দিন।
শোয়ার ঘর থাকুক ছিমছাম
শোয়ার ঘরের সাজ। ছবি: সংগৃহীত।
অন্দরসজ্জার প্রয়োজনীয়তা শুধু রুচির প্রদর্শন নয়, বরং তার চেয়েও জরুরি নিজেকে ভাল রাখা। শোয়ার ঘরের সাজসজ্জা এমন হতে হবে যাতে সারাদিনের পর ঘরে ঢুকলে মন ভাল হয়ে যাবে। দিনভর ধকল কাটে। সবার আগে প্রয়োজন কিছু ছোট গাছ। সকালে ঘুম থেকে উঠে সবুজ কিছু দেখলে মনের উপরে তার ভাল প্রভাব পড়ে। তার সঙ্গেই হালকা রঙের দেওয়ালে ঝুলিয়ে নেওয়া যায় পছন্দের কিছু ছবি। একসঙ্গে কোলাজ বানানো যায় বেশ রঙিন কয়েকটি ছবি দিয়ে। নানা ধরনের আলো রাখার চল এখন বেশ। পছন্দ হলে কিছু টুনি বাল্বের ব্যবহারও করা যায় শৈল্পিক ঢঙে। নিজের মতো করে সাজিয়ে নেওয়া যায় একটি টুনির চেনও।
ইদানীং বাড়িতে পড়ে থাকা পুরনো কাচের বোতলের গায়ে ছবি বা নকশা এঁকে ফুলদানি হিসেবে ব্যবহারের খুব চল। আপনিও করে দেখুন না! বাড়িতে খুদে সদস্য থাকলে তাকেও এই কাজে সঙ্গী করতে পারেন, খুব আগ্রহী হবে। পুরনো প্লাস্টিক বোতল দিয়ে বানিয়ে নিন ঝুলন্ত টব, কাচের বোতল অর্ধেক করে নিয়ে ছাদ বা ব্যালকনির জন্য ঝুলন্ত বাতিও বানাতে পারেন। দামি জিনিস না কিনে, সাধারণ উপকরণেই ভোল বদলে দিন ঘরের।