শুরু হচ্ছে ‘আগন্তুক’ ছবি, প্রথম দৃশ্য— বেতের চেয়ারে সকালের কাগজ খুলে পড়ছেন দীপঙ্কর দে। ও দিকে ছোটদাদুর চিঠি এসেছে। ৩৫ বছর পরে সে ফিরছে। চিঠি পড়ে অবাক হয়ে মমতাশঙ্কর বসে পড়লেন, কাঠের ফ্রেমে বেতের কাজ করা চেয়ারে। আবার ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’তে যখন গানের সুর টেনে নিয়ে যাচ্ছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, শমিত ভঞ্জ, রবি ঘোষকে, তখন আপনমনে বেতের আরামকেদারায় দুলতে-দুলতে সুর বুনছেন পাহাড়ি সান্যাল। একটা যুগ, একটা অধ্যায়ের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে এই বেতের কাজ। আশি-নব্বইয়ের দশকে একটু সম্ভ্রান্ত বাড়িতে কাঠের পাশাপাশি বেতের কাজের আসবাবও ছিল গৃহসজ্জার অন্যতম অঙ্গ। ক্রমশ যুগের হাওয়ায় তা সরে গিয়েছিল কিছু কাল। আবার তা ফিরে এসেছে আধুনিক অন্দরসাজে, নতুন ভাবে।
বেত্র-পত্র
বেতের বুননের সঙ্গে রাটন ফার্নিচারও এখন ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক অন্দরমহলে। বেতের মতোই ক্লাইম্বিং পামের লতানে অংশ দিয়ে তৈরি হয় এই আসবাব। ইন্টিরিয়র ডিজ়াইনার ঊর্বশী বসু বললেন, “এখন বেতের কাজের সঙ্গে রাটনওয়ার্কের আসবাবও অনেক তৈরি হচ্ছে। বেতের আসবাবের ধরনও এখন অনেক বদলে গিয়েছে। পুরো বেতের আসবাব না করে, বিছানার পিছনে ক্রাউন এরিয়া, আলমারির মাঝের অংশে অনেকেই এই ধরনের কাজ করান। তবে আমরা চেষ্টা করি, কাঠ বা ফাইবারের প্যানেলের উপরে বসাতে, তা হলে অনেক দিন ভাল থাকে।”
রাটনওয়ার্কের চাহিদা বাড়ছে এর আর্দি লুকের জন্য। জাপানি ‘মিনিমালিজ়ম’-এর ধারণা অনুসরণ করে এখন অনেকেই অন্দরে ছিমছাম লুক পছন্দ করছেন। ফলে সেখানে রাটনওয়ার্ক একদম জুতসই।
অন্য দিকে, এই ধরনের আসবাব ক্রান্তীয় অঞ্চলের আবহাওয়ার জন্য খুব ভাল। এর কাজ ছিদ্রযুক্ত হওয়ায় হাওয়া চলাচল করে, বসলে আরাম পাওয়া যায়।
গরমে তেতে যায় না বলে বারান্দা, বাগান বা ছাদেও এই ধরনের চেয়ার-টেবল ব্যবহার করেন অনেকে। বৃষ্টির জল লাগলেও এই আসবাব নষ্ট হয় না। এই ধরনের আসবাবের যত্ন নেওয়াও কঠিন নয়। তাই সব দিক দিয়েই এর চাহিদা বাড়ছে।
আসবাব অনুযায়ী
চেয়ারে বেত বা রাটনওয়ার্ক বেশি প্রচলিত। কিন্তু বসার জন্যও এখন অনেক রকম বেতের আসবাব পাওয়া যায়। সোফা, ডাইনিং টেবলের চেয়ার, অটোমান, হাইব্যাক চেয়ার, রকিং চেয়ারে এই ধরনের কাজ বেশি হচ্ছে। তবে এখন এই ধরনের কাজ চেয়ারের চেয়েও বেশি হচ্ছে ওয়ার্ড্রোব, কাবার্ড ও চেস্টঅব ড্রয়ারে। এ ক্ষেত্রে কাঠেরফ্রেমের উপরেই এই রাটনওয়ার্ক বসানো হচ্ছে। এতে আসবাবের ভোলবদল হচ্ছে আবার টেকসই থাকছে।
সেন্টার টেবলের উপরেও এই ধরনের কাজ হচ্ছে। তবে খাবার টেবলে এই ধরনের কাজ না করানোই ভাল। করলেও উপরে কাচের কভার দিয়ে রাখতে হবে। খাটের ক্রাউন এরিয়া বা পায়ের কাছের উঁচু জায়গাতেও বেতের কাজ ভাল লাগে দেখতে। এই ধরনের কাজ করাতে চাইলে মানানসই ভাবে আসবাবের রং বাছতে হবে।
কী ভাবে করা হয়?
রাটনওয়ার্কের প্যাচ কিনতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন বুননের সেই প্যাচ কিনে কোন আসবাবের উপরে তা বসাবেন, সেটা ঠিক করে নিতে হবে। সেই মাপমতো অংশ কেটে নিয়ে ফ্রেমে সেট করে বসাতে হবে আসবাবের উপরে।
তবে আলাদা করে না বসিয়ে পুরো বেতের বোনা আসবাবও রাখতে পারেন বাড়িতে। সে ক্ষেত্রে ভরাট কাজ হবে। সাধারণত সোফা, টেবল, চেয়ারে এই ধরনের কাজ দেখতে পাওয়া যায়।
কী ভাবে ভাল রাখবেন?
চড়া রোদ আসে, এমন জায়গায় এই আসবাব রাখা যাবে না। রোদে এই ধরনের আসবাবের রং হালকা হয়ে যায়। তাই ঘরে এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে খুব রোদ পড়বে না।
এই ধরনের আসবাবে যেহেতু জালি কাজ থাকে, তাই ধুলো পড়ে নোংরা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাওবেশি। হেঁশেলের আশপাশে এই ধরনের আসবাব রাখবেন না। ধুলো জমার সম্ভাবনা বেশি থাকলে, কেনওয়ার্ক বা রাটনওয়ার্কের অংশটুকুর উপরে কাচের কভার করিয়ে নিতে পারেন। এতে দেখতেও ভাল লাগে, আবার কাজটাও সুরক্ষিত থাকবে।
আর এগুলো কাঠের আসবাবের চেয়ে অনেক হালকা হয় আর দামও তুলনামূলক কম। তা ছাড়া এগুলো পরিবেশবান্ধব। নকল ফাইবারের বদলে তাই ক্রমশ চাহিদা বাড়ছে এই ধরনের আসবাবের।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)