প্রথমেই মনে হতে পারে বাড়িতে রুদ্রাক্ষের গাছ রাখবেন কেন! রুদ্রাক্ষ, যা কি না হিন্দু আধ্যাত্মবাদে পবিত্র বলে গণ্য হয়, তা কি বাড়িতে রাখলে কোনও উপকার হবে? আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের কথা শুনেই মূলত চলে। তাই রুদ্রাক্ষের এমন কিছু গুণের কথা বলাও সম্ভব নয়, যার বৈজ্ঞানির প্রমাণ হাতে নেই। তবে আয়ুর্বেদ, যা ভারতীয় প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতি বলে পরিচিত এবং ভারতের বাইরে কিছু কিছু প্রথম বিশ্বের দেশেও ইদানীং আগ্রহের কেন্দ্রে, তাতে শুধু রুদ্রাক্ষের ফল নয়, রুদ্রাক্ষ গাছের ছালও ইনসমনিয়া, হাইপারটেনশন, ত্বকের চিকিৎসা এবং স্নায়ু সংক্রান্ত কিছু রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। আয়ুর্বেদের সেই তত্ত্ব সত্যি কি না জানতে রুদ্রাক্ষ গাছের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তাতে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টস, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল, প্রদাহনাশক উপাদানের উপস্থিতি রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
তবে উপকার থাক বা না থাক, আধ্যাত্মিত তত্ত্বে বিশ্বাস করুন বা না করুন, বাড়িতে কারও রুদ্রাক্ষের গাছ রাখার ইচ্ছে হতেই পারে। রুদ্রাক্ষ গাছের ফুলও দেখতে সুন্দর। সাদা রঙের সেই ফুলের নীল রঙের ফলে বদলে যাওয়া দেখতে ভাল লাগবে গাছপ্রেমীদের।
তবে শুধু ভাল লাগলেই তো হল না। ইচ্ছে পূরণ করতে চাইলে জানতে হবে রুদ্রাক্ষের গাছ কোন পরিবেশে ভাল থাকে। কোন পরিবেশে তা স্বচ্ছন্দে বাড়তে পারে। কী ভাবে সেই গাছের যত্ন নিতে হবে।
কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে?
১। বীজ: ভাল গাছের ভিত লুকিয়ে তার বীজেই। কেনার সময় ভাল এবং বিশ্বস্ত জায়গা থেকে বীজ কিনুন। ভাল বীজ কি না তা নিজে পরীক্ষা করে দেখতেও পারেন। যদি বীজ জলে ভাসে, তবে বুঝতে হবে বীজ অঙ্কুরিত হওয়ার আশা কম। বীজ জলে ডুবলে বুঝতে হবে সেটি ভাল। আরও একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে বীজ বপনের আগে সেটি ২৪-৪৮ ঘণ্টা ঈষদোষ্ণ জলে ভিজিয়ে রাখুন।
২। আবহাওয়া: উষ্ণ, আর্দ্র আবহাওয়ায় সবচেয়ে ভাল বাড়ে রুদ্রাক্ষের গাছ। ২০-৩০ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড তাপমাত্রা উপযুক্ত। রুদ্রাক্ষের গাছের জন্য রোদও প্রয়োজন। তবে দিনের সর্বক্ষণ রোদ পড়ে এমন জায়গায় না রেখে দিনের কিছুটা সময় রোদ আসবে এমন জায়গায় থাকলে ভাল।
৩। মাটি: বেলে মাটিতে ভাল হয় রুদ্রাক্ষের গাছ। জল জমে থাকে এমন মাটিতে গাছ না-ও বাড়তে পারে বা খারাপ হয়ে যেতে পারে। মাটির পিএইচ লেবেল ৬-৭.৫ হলে ভাল।
৪। রোপন: টবে রুদ্রাক্ষ গাছ পুঁতলে মাটির সঙ্গে সার মিশিয়ে তাতে ১-২ ইঞ্চি গভীরে বীজ পুঁতে মাটি চাপা দিন। বেশি জল না দিয়ে মাটি ভিজে থাকে সেই ব্যবস্থা করুন। অতিরিক্ত জলে বীজ পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। টবে যাতে জল না জমে সে দিকেও নজর রাখতে পারেন। সাধারণত রুদ্রাক্ষের বীজ অঙ্কুরিত হতে ১-২ মাস সময় লাগে। তাই ধৈর্য ধরতে হবে।
৫। বড় টবে সরানো: অঙ্কুরিত হয়ে যাওয়ার পরে গাছ ৬-১২ ইঞ্চি লম্বা হলে তার পরেই অন্য বড় টবে স্থানান্তর করুন। বা মাটিতেও সরাসরি পুঁততে পারেন। রুদ্রাক্ষ গাছ ৫০-৮০ ফুট পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। তবে টবে পুঁতলে ডালপালা ছাঁটতে হবে।
৬। জল: নিয়মিত গাছে জল দিন। বিশেষ করে গাছ অঙ্কুরিত হওয়ার শুরুর দিকে রোজ জল দেওয়া প্রয়োজন। তবে অতিরিক্ত জল নয়। তাতে শিকড়ে পচন ধরার সম্ভাবনা থাকে।
৭। কীটনাশক: অন্যান্য গাছের মতো রুদ্রাক্ষ গাছেও পোকা ধরার সম্ভাবনা থাকে। ছত্রাকের সংক্রমণের আশঙ্কাও থাকে। তাই নিয়মিত খেয়াল রাখুন। গাছে পোকা মাকড় বা ছত্রাকের সংক্রমণের আশঙ্কা দেখলেই ব্যবস্থা নিন। নিমের তেলের মতো প্রাকৃতিক কীটনাশকও ব্যবহার করা যেতে পারে।
৮। ফুল-ফল: রুদ্রাক্ষের গাছে ফুল ধরতে সাধারণত ৩-৪ বছর সময় লেগে যায়।