বৈভব, প্রাচুর্য, চোখধাঁধানো অন্দরসজ্জা— তারকাদের বাড়ির জাঁকজমকের কোনওটাই নেই। তবু তাঁর বাড়ির ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ভাগ করেন হর্ষ গোয়েঙ্কার মতো শিল্পপতি। সে বাড়ির এক ঝলক দেখলে মুগ্ধ হবেন না, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কথা হচ্ছে বিশ্বনাথন আনন্দকে নিয়ে। পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তিনি।
চেন্নাইয়ে তাঁর বাড়ির অন্দরমহলের ঝলক প্রকাশ্যে আসতে তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। সেখানে উঁকি দিলে কী দেখা যাবে?
চেন্নাইয়ের বাড়িতে বিশ্বনাথন আনন্দ। ছবি:ইউটিউব।
স্ত্রী অরুণা এবং ছেলে অখিল আনন্দের সঙ্গে থাকেন বিশ্বনাথন আনন্দ। সেই বাড়ির চার দেওয়াল গল্প বলে এক জন দাবাড়ুর পরিশ্রমের, সাফল্যের, পরিবারের। অজস্র স্মৃতি দিয়ে সেই বাড়ি সাজিয়ে তুলেছেন দাবাড়ু এবং তাঁর স্ত্রী।
বিশ্বনাথনের বাড়ির প্রবেশদরজা খুললে, কোনও নিপুণ সজ্জার বৈঠকখানা নয়, বরং চোখে পড়বে দেওয়ালজোড়া দাবার সংগ্রহ। খোপে খোপে সাজানো বোর্ড থেকে ঘুঁটি। একটি অন্যটির থেকে একেবারে আলাদা। সচরাচর যেমন দাবার বোর্ড দেখা যায়, তার চেয়ে ফারাক অনেকটাই। প্রতিটিরই নিজস্বতা আছে। আছে গল্পও। এর কোনওটি উপহার, কোনওটি ব্যক্তিগত সংগ্রহের, কোনওটি সাফল্যের স্মারক।
২৭ কেজির দাবা
তামা এবং ব্রোঞ্জের ঘুঁটি। মেক্সিকো থেকে আনা বোর্ড। ছবি: ইউটিউব।
তবে সকলের যেটি নজর কাড়ে, সেটি হল ২৭ কেজি ওজনের দাবার বোর্ড। মেক্সিকো থেকে আনা। তামা এবং ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি তার ঘুঁটি। আনন্দের স্ত্রীর কথায় জানা যায়, এমন সুদৃশ্য দাবার বোর্ড নাকি ভারী বলে বয়ে আনতে চাননি দাবাড়ু। উপহার পাওয়া বোর্ডটি ফেলে রেখে যেতে রাজি হননি তাঁর স্ত্রী। বলেছিলেন, আনন্দকে সেখানে রেখে ফিরতে পারেন, তবে এই দাবার বোর্ড নয়। সেই দাবার বোর্ডের ঝলক মুগ্ধ করেছে অনেককেই।
মুখ্যমন্ত্রীর উপহার
দাবাড়ুর দাবার সংগ্রহ দেখার মতোই। ছবি:ইউটিউব।
বিশ্বনাথন যখন প্রথম বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তামিলনাড়ুর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী স্মারক হিসেবে দাবার বোর্ড উপহার দিয়েছিলেন। সেই শৌখিন ৬৪ ঘরের বোর্ডও শোভা পায় সংগ্রহে। এর প্রতিটি ঘুঁটি যেন কোনও জিগ্স পাজ়লের অংশ।
মোয়াই মূর্তির আদলের ঘুঁটি
ল্যাপিস লাজ়ুলি পাথর দিয়ে তৈরি দাবার ঘুঁটি এবং বোর্ড।
এমন একটি দাবার বোর্ড আছে যা চিলেতে তৈরি। কারুকাজ করা দাবার বোর্ডের ঘুঁটি তৈরি হয়েছে ইস্টার আইল্যান্ডের মোয়াই মূর্তির আদলে। সেগুলি তৈরি ল্যাপিস লাজ়ুলি পাথর দিয়ে।
এ ছাড়াও স্পেন-সহ বিভিন্ন দেশের উপহার, ব্যক্তিগত দাবার সংগ্রহ শোভা পায় বিশ্বনাথনের ঘরে। কোনও বোর্ডের ঘুঁটি নিখুঁত রাজা, মন্ত্রীর মতোই। কোনওটি তৈরি অরিগ্যামির আদলে।
শিল্পের ছোঁয়া
বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে হাজারো স্মৃতি। সন্তানের বড় হওয়া, বিভিন্ন মুহূর্ত। ছেলের আঁকা অজস্র ছবি শোভা পাচ্ছে সেখানে। রয়েছে বিদেশের কিছু বিখ্যাত চিত্রও। নানা রকম ভাস্কর্য, শৈল্পিক ছোঁয়া রয়েছে বাড়ির আনাচকানাচে।
পুরস্কারের ঝুলি
বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মেডেল। ছবি:ইউটিউব।
দেশ এবং বিদেশে দাবাড়ু জিতেছেন অজস্র পুরস্কার। সেই মেডেল, শংসাপত্র— সবই সাজিয়ে রাখা হয়েছে দেওয়ালে। বিশ্বনাথনের কাজের ঘর, বসার ঘরের কাচের আলমারি জুড়ে সাফল্যের স্মারক সাজানো। রয়েছে পুরস্কারের ট্রফি, কাপও।