Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

দূরে থাকুক নিউমোনিয়া

একটু ঠান্ডা লেগেছে ভেবে কিন্তু এড়িয়ে যাবেন না। অসুখ বেড়ে গেলে নিউমোনিয়াও হতে পারে। আর কিছু ক্ষেত্রে এই অসুখ প্রাণঘাতীও বটে। তাই ঠান্ডা লাগলেই সতর্কতা জরুরিসামান্য সর্দি-কাশি সারতেও সময় লাগছে অনেক দিন। তবে কখন বুঝবেন তা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে?

সুদীপ পাকড়াশি
শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

শীতকালেই মূলত এই অসুখ শরীরে বাসা বাঁধে, যার নাম নিউমোনিয়া। ৬০ থেকে ৬৫ বছরের বেশি বয়স হলে অথবা চার বছরের কম বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ভয় বেশি। ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে এই রোগ হয়। অল্প থেকে ক্রমশ গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে নিউমোনিয়া, যার কারণে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। মূলত ফুসফুসের সংক্রমণই এর কারণ বলে ধরা হয়, তবে কখনও ফুসফুসে জল জমেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে দূষণও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। ফলে সামান্য সর্দি-কাশি সারতেও সময় লাগছে অনেক দিন। তবে কখন বুঝবেন তা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে?

ফুসফুসে সংক্রমণ হয় কী ভাবে?

এর জন্য ব্যাকটিরিয়া বা ভাইরাসই মূলত দায়ী। জেনারেল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুবীর মণ্ডল বললেন, ‘‘শীতকালে জীবাণুর দ্রুত সংখ্যাবৃদ্ধি হয় বলে এই সময়ে নিউমোনিয়ার প্রকোপে বেশি মানুষ আক্রান্ত হন। নিউমোনিয়া মূলত তিন ধরনের। কমিউনিটি অ্যাকুয়ার্ড নিউমোনিয়া (ক্যাপ), হসপিটাল অ্যাকুয়ার্ড নিউমোনিয়া (হ্যাপ) আর ভেন্টিলেটর অ্যাকুয়ার্ড নিউমোনিয়া (ভ্যাপ)।’’ এর মধ্যে হ্যাপ এবং ভ্যাপে আক্রান্ত হওয়া মানুষের শরীরের দ্রুত অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

হ্যাপের ক্ষেত্রে দেখা যায়, হাসপাতালে বিভিন্ন অসুখ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের জীবাণুর গতিবিধি অবাধ। সেখান থেকে কোনও রোগীর শরীরে নিউমোনিয়ার জীবাণু প্রবেশ করে সহজেই।

অন্য দিকে ভ্যাপ হচ্ছে, গুরুতর অসুস্থ হওয়া যে সব রোগীকে হাসপাতালের ভেন্টিলেটরে রাখার ফলে সেখান থেকে তার শরীরে নিউমোনিয়ার জীবাণু প্রবেশ করে। ফলে সেই ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হন। ডা. মণ্ডল জানাচ্ছেন হ্যাপের মতো ভেন্টিলেটরেও বিভিন্ন রকমের অসুখে আক্রান্ত হওয়া রোগী থাকায়, অন্য অসুখের জীবাণুও সহজেই রোগীদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। যে কারণে ভেন্টিলেটরে রাখা অসুস্থদের মধ্যেও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা বিরল নয়।

এই তিন ধরনের নিউমোনিয়ার বাইরেও আরও এক ধরনের নিউমোনিয়ার কথা বলেন চিকিৎসকেরা। সেটা হল অ্যাস্পিরেশন নিউমোনিয়া।

সাধারণত বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই ধরনের নিউমোনিয়া হতে দেখা যায়। ধরুন, কোনও অসুস্থ মানুষ শয্যাশায়ী অবস্থায় রয়েছেন। খাওয়ার জন্য তার পক্ষে উঠে বসাও হয়তো সম্ভব হয় না। এই পরিস্থিতিতে শোয়া অবস্থায় খেতে গিয়ে সেই ব্যক্তির শরীরে নিউমোনিয়ার জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। আমাদের নাকের উপরে একটি ভালভ থাকে। বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ভালভ দুর্বল হতে থাকে। খাবার খাদ্যনালীতে যাওয়ার সময়ে খাবারের কণা খাদ্যনালীতে না পৌঁছে ঢুকে পড়ে শ্বাসনালীতে। আর বারবার সেটা হতে থাকলেই কিন্তু শরীরে ঢুকে পড়তে পারে নিউমোনিয়ার জীবাণু। ফলে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও সেই ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারেন নিউমোনিয়ায়।

নিউমোনিয়ার লক্ষণ

এই রোগের প্রথম এবং প্রধান লক্ষণ অস্বাভাবিক জ্বর। জ্বর ক্রমশ বাড়তে থাকা নিউমোনিয়ার অন্যতম লক্ষণ। তাই জ্বর যদি ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং কিছুতেই না কমে, তখন অবশ্যই সাবধান হতে হবে। একই সঙ্গে কাশিও হতে থাকবে এবং বুকে ব্যথাও হবে। কখনও এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে, সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। মনে রাখবেন, নিউমোনিয়া কিন্তু খুব দ্রুত শরীরকে দুর্বল করে দেয়।

হাসপাতালে কখন ভর্তি করতে হবে?

কাশি না কমলে প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বুকের এক্স-রে করে নিতে হবে। একই সঙ্গে জ্বরের মাত্রা না কমলেও রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়াই শ্রেয়।

যখন নিউমোনিয়া ভয়ের

ডা. সুবীর মণ্ডল বললেন, ‘‘যে সব মানুষের শরীরে ইতিমধ্যে অন্য রোগ বাসা বেঁধেছে, সেই সব মানুষের শরীরে নিউমোনিয়ার সংক্রমণ দ্রুত হওয়ার একটা আশঙ্কা থেকেই যায়। যেমন ডায়াবিটিস, আর্থ্রাইটিস এবং এইচআইভি পজ়িটিভে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে নিউমোনিয়ার ভাইরাস ঢুকলে দ্রুত সংক্রমণের ভয় বেশি থাকে।’’

আসলে বিভিন্ন রোগের কারণে যখন শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, তখন এই অসুখের জীবাণু শরীরের মধ্যে দ্রুত ছড়াতে থাকে। তাই অন্য রোগ থাকলে এ রকম লক্ষণ দেখলে আগেভাগে সাবধান হতে হবে।

সাবধানতা অবলম্বনে কী কী করা যেতে পারে

শীতকালে ঠান্ডা যাতে না লাগে তার জন্য গরম জামাকাপড় পরে থাকতে হবে। রাতের দিকে রাস্তায় বেরোতে হলে বয়স্ক ও শিশুদের কানঢাকা টুপি পরতে হবে। নিয়মিত ধূমপান, মদ্যপান বন্ধ করে দেওয়া উচিত। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হল, বয়স্কদের উচিত নিউমোনিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে টিকা নেওয়া। শিশুদের চেয়েও এই টিকা বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে বেশি প্রয়োজনীয়। কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের সহজাত প্রতিরোধ

ক্ষমতা কমতে থাকে। পাশাপাশি ‘ভিটামিন সি’-ও নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে। রোজ একটি করে সিট্রাস ফল খেতে পারেন।

মডেল: ভারতী লাহা

ছবি: অয়ন নন্দী

মেকআপ: দীপ্তি বন্দ্যোপাধ্যায়

লোকেশন: লাহাবাড়ি, বেচু চ্যাটার্জী স্ট্রিট

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Pneumonia Winter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE