বাগান হবে এমন যা পঞ্চেন্দ্রিয়কে (চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, ত্বক এবং জিহ্বা) উজ্জীবিত করবে। সারা বিশ্বে এখন এমন উদ্যান গড়ার কাজে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে, যার পোশাকি নাম সেন্সরি গার্ডেন। বড় বড় শহরেরমাঝে গড়ে উঠছে এ রকম বাগান। এ দেশেও কিছু জায়গায় তৈরি করা হয়েছে এই ধরনের বাগান। নিজের বাড়িতেও তৈরি করতে পারেন সেন্সরি গার্ডেন।
সাধারণত ছাদ, বারান্দা বা বাড়ির সামনের জমিতে পছন্দের গাছপালা দিয়েই গড়ে ওঠে বাগান। মরসুমি ফুল ও ফলের দিকেই অধিকাংশের ঝোঁক থাকে। যাঁদের হাতে সময় কম, তাঁরা বেছে নেন কম পরিচর্যার ইন্ডোর প্লান্টস, সাকুলেন্টস, ক্যাকটাস জাতীয় গাছ। সেনসরি গার্ডেনের ব্যাকরণ বলছে, বাগান মানে বেছে বেছে কয়েকটা গাছ রাখা নয়, বরং এমন বাগান যেখানকার পরিবেশ পঞ্চেন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করা যাবে।
ফুলের সৌন্দর্য ও সুবাস
সেন্সরি গার্ডেনে সুগন্ধি ও গন্ধহীন ফুল, হালকা ও উজ্জ্বল রঙের ফুল মিলিয়েমিশিয়ে রাখা যায়। সব মরসুমেই বাগানে নানা রঙের, নানা গন্ধের ফুল ফুটবে। যেমন শীতে নানা রঙের গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরা, গ্ল্যাডিওলাস, প্যানজ়ি, কসমস, সূর্যমুখী ইত্যাদি। গরমে বেল, জুঁই আবার বর্ষায় গন্ধরাজ, টগর, মুসান্ডা, মাধবীলতা, নানা রঙের জবা, রেন লিলি, স্বর্ণচাঁপা, পদ্ম ইত্যাদি। বাগান সাজাতে জুড়ি নেই লতানে গাছের। লতানে ভেনেস্তা, মাধবীলতা, নীলমণিলতার সৌন্দর্যই আলাদা। ঝুলন্ত টবে ফ্যালেনপসিস, ডেনড্রোবিয়াম, ক্যাটলিয়া ইত্যাদি বাহারি অর্কিডও রাখতে পারেন। ফুলের রং দৃষ্টি আকর্ষণ করবে, সুগন্ধ মন শান্ত করবে। ফুলে মধু খাবে প্রজাপ্রতি, মৌমাছি। পাখিদের আনাগোনাও বাড়বে। এতে হ্রাস পাবে অবসাদ, একাকিত্ব। প্রজাপতির আনাগোনা বাড়ে নানা রঙের ল্যান্টেনা, নয়নতারা, রঙ্গন, লেবুগাছ থাকলে। জলের পাত্র ও বার্ডফিডার রাখলে চড়ুই, পায়রা, শালিক, ফিঙে, বুলবুলি ভিড় জমাবে। খাবারের সন্ধানে জুটে যাবে কাঠবিড়ালিও।
টক-মিষ্টি মরসুমি ফল
সেন্সরি গার্ডেন করতে হলে বাহারি ফুলের সঙ্গে রাখতে হবে ফল ও আনাজপাতির গাছ। বাড়ির বাগান থেকে জামরুল, লেবু, পেয়ারা, আম, বাতাবি ইত্যাদি পেড়ে খাওয়ার আনন্দই আলাদা। ফলের রং ও স্বাদ চক্ষু ও জিহ্বাকে সন্তুষ্টি দেবে। বড় জায়গা না থাকলে ছোট ছোট টবে বেগুন, টম্যাটো, স্ট্রবেরি, ধনেপাতা, পালংশাক করতে পারেন। পার্সলে, রোজ়মেরির মতো হার্বসের গাছও করা যায়। তুলসী, ঘৃতকুমারী জাতীয় ভেষজ উদ্ভিদ রাখুন। বড় টবে রোপণ করতে পারেন বাতাবি, আম, জামরুল বা লেবুর গাছ। টবে কলামের গাছ রোপণে ফল আসবে তাড়াতাড়ি। রাখা যেতে পারে লাউ, কুমড়ো, উচ্ছে, শসার মতো লতানে গাছ। ফলের সঙ্গে এদের লতানে পাতা ও ফুলের বাহারও মুগ্ধ করে।
টবের সাজও জরুরি
সেন্সরি গার্ডেনে শুধু গাছ নয়, টব সাজানো, টবের আকার, রং মনের উপরে প্রভাব ফেলে। মাটির সাধারণ টবের পাশাপাশি ব্যবহার করতে পারেন সুদৃশ্য সেরামিক, মেটাল, বাঁশ, বেত বা টেরাকোটা টব। হ্যাঙ্গিং টবে রাখতে পারেন মানিপ্লান্ট, কয়েন প্লান্ট, পার্পল শ্যামরক, ব্রোকেন হার্ট ইত্যাদি পাতাবাহার। টব রাখার জন্য প্লান্টার স্ট্যান্ড ব্যবহার করতে পারেন, এতে এক জায়গায় অনেক গাছ রাখা যায়, ছাদ বা বারান্দা পরিষ্কার থাকে এবং হাঁটাহাঁটি করার পর্যাপ্ত জায়গাও পাওয়া যায়। বাড়ির বাগানে জায়গা থাকলে লন তৈরি করে নিন। সকাল-সন্ধে খালি পায়ে লনের উপরে হাঁটতে ভালই লাগে। বাহারি পাত্রে ডেকোরেটিভ মস ছোট্ট গ্রিনজ়োনের জন্য আদর্শ। বিশ্বজুড়ে এখন মস ডেকোরেশন বেশ জনপ্রিয়। অনলাইনেও পাওয়া যায়। তবে চিরপরিচিত মসের চেয়ে আলাদা স্প্যানিশ মস। সুতোর মতো, ফিকে সবুজ বা ছাইরঙা। এই মস বারান্দা বা জানলার উপর থেকে ঝুলিয়ে দিলে সুন্দর দেখায়।
বাগানের সাজসঙ্গী
চুপচাপ একান্তে বসে ঝরনার আওয়াজ শুনলে সারা দিনের ক্লান্তি কেটে যায়। বাগানের এক কোণে বা বসার জায়গার কাছাকাছি রাখতে পারেন ছোট ফাউন্টেন। তার চারপাশ সেজে উঠুক রঙিন নুড়ি পাথর, বুদ্ধমূর্তি, হাঁস, পাখি, মাছের ফিগারাইন দিয়ে। হাতের নাগালে রাখুন এমন কিছু পাতাবাহার, যার পাতা স্পর্শ করতে পারবেন। বাগানে গাছের ডালে ঝোলাতে পারেন উইন্ডচাইম। এর টুংটাং শব্দ মন ভরিয়ে দেবে। রাতের বাগানে মনোরম পরিবেশ তৈরি করতে বিশেষ দিনে ব্যবহার করা যেতে পারে স্ট্রিং লাইটস, প্লান্টার লাইটস, বটল সোলার ল্যাম্প, ঝুলন্ত কাগজের লণ্ঠন ইত্যাদি। তবে রোজ বাগানে আলো না জ্বালানোই ভাল। কারণ সেটা গাছের নিভৃতির সময়।
ছোট কিংবা বড় যে কোনও পরিসরে বাগান করার জন্য সেন্সরি গার্ডেনের পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। আপনার ভালবাসার বাগানই একটু উদ্যোগ নিয়ে সাজিয়ে ফেলতে পারেন এমন ভাবে, যেখানে দাঁড়ালে শত ব্যস্ততার মধ্যেও শান্তি খুঁজে পাবেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)