সন্তানের লালনপালন, তার পর অফিস। অহনার মনে হয়, নিশ্চিন্তে পাঁচ মিনিট বসতে পারা বা আয়েস করে এক কাপ কফি খাওয়ায় বিলাসিতা। মনে হয়, ২৪ ঘণ্টায় দিন না হয়ে যদি তা ২৮ ঘণ্টা হত, তা হলে বুঝি একটু ফুরসত পেতেন।
অতিরিক্ত ব্যস্ততাই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জীবনে প্রভাব ফেলছে। স্কুলপড়ুয়ারাও পেষাই হচ্ছে সময়ের জাঁতাকলে।আর তাতেই কি হারিয়ে যাচ্ছে নিজস্ব ইচ্ছা, ভাললাগা? হারিয়ে ফেলছেন নিজেকেই?
আরও পড়ুন:
যখন আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসগুলি শুধু রুটিন না থেকে সচেতন সিদ্ধান্তে পরিণত হয়, তখন বুঝতে হবে আমরা ঠিক পথে এগোচ্ছি। আমাদের দৈনন্দিন ক্যালেন্ডারে বদলের সময় হয়েছে। বলছেন দুবাই এবং মুম্বইয়ে কর্মরত আমেরিকান সহবত প্রশিক্ষক টেলর এলিজ়াবেথ।
নিজের যত্নের জন্য যে এক ঘণ্টাই সময় লাগবে, বিষয়টি কিন্তু তা নয়। বরং কাজের ফাঁকে কখনও ছোট বিরতিও ক্লান্তি কাটাতে পারে। নিজের যত্নের অর্থে, বাড়ির যে বারান্দায় রোদ আসে, সেখানে চেয়ারে বসে এক কাপ চা খাওয়া বা নিছক একটু বসে থাকাও হতে পারে। কিন্তু সেই সময় ল্যাপটপ বা মোবাইলের স্ক্রিনে নজর থাকবে না। এলিজাবেথের কথায়, ঘড়ির দিকে তাকিয়েই সবটা করতে হবে, এমন নয়। বরং দৈনন্দিন জীবনে নিজের ইচ্ছা, ভাললাগাকেও গুরুত্ব দেওয়া অভ্যাসে পরিণত করা প্রয়োজন।
দিনের পর দিন একই রকম জীবনযাত্রা বড় একঘেয়ে হয়ে ওঠে। অল্পেই বড় ক্লান্তি বোধ হয় অনেকের। তার কারণ হতে পারে, নিঃশব্দে অন্যের দাবি, প্রয়োজনীয়তাকেই গুরুত্ব দেওয়া, কোনও বিষয়ে অসম্মতি জানাতে না পারা। বদল দরকার এমন বেশ কিছু ভাবনাতেও।
'নিজের জন্য সময় দেওয়া' ঠিক কী?
নিজের শর্তে, একেবারে নিজের মনের মতো করে কিছুটা সময় কাটানো। সেটা কিন্তু ঘুমও হতে পারে। নিজের ভাললাগাকে মর্যাদা দেওয়া। নিজেকে সময় দেওয়ার অভ্যাস শুধু মন ভাল রাখে না, বরং কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতাও বাড়ে এতে। কাজের মান ভাল হয়।
১। মনের কথা বলতে পারাও জরুরি। অফিসের পর সংসারে মন দিতে গিয়ে ফাঁক পড়ে নিজের ভাললাগাতেও। দিনের পর দিন এমনটা চলতে থাকলে, নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ব্যক্তিবিশেষের মনোজগতে। দায়িত্ব-কর্তব্যের ফাঁকেও নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করাটা জরুরি।
২। সন্তানকে দিনভর সময় দেওয়া হয় না, তাই নিজের ক্লান্তি ভুলে যেটুকু সময় মিলছে, সেখানেই দিচ্ছেন। না হলেই শুরু হয় অপরাধবোধ। নিঃশব্দে এক বার নিজেকেও প্রশ্ন করা যায়, এই অপরাধবোধ কতটা যৌক্তিক?
৩। সকলের সব ইচ্ছা বা চাহিদাই পূরণ করা সম্ভব নয়, সেটাও বোঝা দরকার। অনেকেই না বলতে পারেন না বলে বাড়তি কাজের দায়িত্ব ঘাড়ে চেপে বসে। নম্র, শান্ত ভাবেও না বলতে পারা অভ্যাস করা জরুরি।
৪। সপ্তাহে এক দিন বা দু'সপ্তাহে একটি দিনের কয়েক ঘণ্টা নিজের জন্য বরাদ্দ করা যেতে পারে। যেখানে নিজের সঙ্গে, নিজের শর্তে সময় কাটানো যায়। সেই সময়টা যে সর্বদা সঙ্গী, সন্তান বা পরিবারের লোকেদের সঙ্গেই কাটাতে হবে, তা কিন্তু নয়। তেমন ভাবে একই সুযোগ বাকিদেরও দেওয়া দরকার।
৫। কর্মজগতে চাপ থাকবেই। কিন্তু জীবনের একটি বাস্তবসম্মত ছন্দ থাকা দরকার। অফিস-বাড়ির কাজের মধ্যে সূক্ষ্ম সীমারেখা না থাকলেই সমস্যা। তাই কাজের লক্ষ্যেও বাস্তবতার বোধ থাকা দরকার।