Advertisement
E-Paper

ছিল হাতে তৈরি কার্ড, হল রিসর্ট, সালোঁর ভাউচার! প্রেম দিবসে উপহারের সে কাল-এ কাল

মনে পড়ে সেই নব্বইয়ের দশকের কথা? তখন কলকাতায় সবে সবে প্রেম দিবস উদ্‌যাপন শুরু হয়েছে। এখন ছবিটা একেবারে অন্য! ভালবাসায় কি কোনও রকম খামতি এল?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:২১
ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র প্রস্তুতিতে মেতে উঠেছেন তরুণ-তরুণীরা।

ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র প্রস্তুতিতে মেতে উঠেছেন তরুণ-তরুণীরা। ছবি: শাটারস্টক।

বাবা-মা যখন কলেজে ছিলেন, তখনও প্রেম দিবস পালন করতেন। একে অপরকে পছন্দের বই, হাতে তৈরি কার্ড দিতেন। চতুর্থ শ্রেণির কন্যা তাঁদের এখন। স্কুলের ‘ক্রাশ’-কে ‘ভ্যালেন্টাইস ডে’-র বিশেষ উপহার দিতে চায়। তাই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুই খুদের ‘প্লে ডেট’ আছে। দুই শিশুর বাবা-মায়েরা আয়োজন করেছেন। সে সব হয়ে গেলে নিজেরা যাবেন নামী হোটেলের বিশেষ বুফে খেতে। ওটা বাবার উপহার। মায়ের জন্য!

চারদিকে বসন্তের আমেজ। কেমন যেন প্রেম প্রেম ভাব। ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র প্রস্তুতিতে মজে উঠেছেন তরুণ-তরুণীরা। প্রেম দিবসের সঙ্গে উঠে আসে উপহারের প্রসঙ্গও। মনের কাছাকাছি থাকা মানুষটির জন্য ভালবাসার ছোঁয়াচ মাখানো উপহার দিয়েই যে ভালবাসা প্রকাশ করেন অধিকাংশে। যদিও ১৪ ফেব্রুয়ারি উপহার বিনিময়ের রীতি মূলত পাশ্চাত্য সংস্কৃতির একটি অঙ্গ। কবে যে তা ঢুকে পড়ল এ দেশের অভ্যাসে, তা হয়তো এখন কেউ মনেও রাখেন না।

মনে পড়ে সেই নব্বইয়ের দশকের কথা? তখন কলকাতায় সবে সবে প্রেম দিবস উদ্‌যাপনের চল শুরু হয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি কলেজ থেকে বেরিয়ে পড়ন্ত বিকেলে একে অপরের হাতে হাত রেখে প্রিন্সেপ ঘাট। প্রিয়জনকে গোলাপ, ‘আর্চিজ়’-এর কার্ডে বাংলা হরফে লেখা মনের কথা! অনেকে আবার বান্ধবীর জন্য নিয়ে আসতেন শোপিস, টেডি কিংবা হাতে বানানো ছোট্ট কোনও উপহার। তা-ই ছিল দস্তুর। এর পর আনন্দ ও উত্তেজনা মেশানো আলিঙ্গন। পিলারের আড়ালে ঠোঁটে ঠোঁট। তার পর গঙ্গার ধারে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রেম বিনিময়। কারও মনে কেউ দেখে ফেলার ভয়, কেউ আবার একেবারে অকুতোভয়! তার পর বড়জোর মিত্রা কিংবা মিনারে সিনেমা দেখা, ছোট-বড় রেস্তরাঁয় ভূরিভোজ।

দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে প্রেমের দিন প্রেম প্রকাশের ধরনেও বদল এসেছে।

দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে প্রেমের দিন প্রেম প্রকাশের ধরনেও বদল এসেছে। ছবি: শাটারস্টক।

সেই সময়ে প্রেম দিবসের প্রাক্কালে কার্ডের দোকানগুলিতে ভিড় থাকত চোখে পড়ার মতো। দিন সাতেক আগে থেকেই পার্ক স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিটের রাস্তায় বসত কার্ডের দোকান। কেবল কার্ড নয়, সেখানে স্বল্প টাকায় মিলত বাহারি উপহারও। প্রেমিকার জন্য তাঁর পছন্দ-অপছন্দের কথা মাথায় রেখে উপহার কেনা ছিল গুরুদায়িত্ব!

দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে প্রেমের দিনে প্রেম প্রকাশের ধরনেও বদল এসেছে। এখন আর প্রেম দিবসে প্রিয়জনের জন্য কার্ড কেনার বহর তেমন চোখে পড়ে না। সকালে উঠে ওয়াট্‌সঅ্যাপে টুং করে একটা শব্দ। ঘুম চোখে মেসেজ খুলে দেখা গেল তাতে লেখা ‘এইচভিডি’। অর্থাৎ, ‘হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে’। সঙ্গে সঙ্গে অনেক অনেক চুমুর ইমোজি-সহ বার্তা ফেরত গেল। লেখা হল ‘সেম টু ইউ’। ব্যস্, ওইটুকুই। খুব বেশি শব্দ খরচ করার পক্ষপাতী নয় এখনকার প্রজন্ম!

আর উপহার? সেটার কী হবে? চিন্তা কী? অ্যামাজ়ন, মিনত্রা আছে তো। অনলাইনে কিছু একটা অর্ডার করে দিলেই হল। স্মার্ট ওয়াচ, ইয়ার পড, এয়ার বেড, ঘড়ি, পার্স, হ্যান্ড ব্যাগ— সবই তো হাতের নাগালে! এখনও অনেক প্রেমিক-প্রেমিকা আছেন, যাঁরা সত্যিই কিছু বিশেষ উপহার দিতে চান তাঁদের প্রিয়জনকে। তবে বই কিংবা টেডি নয়— উপহার বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও এখন অভিনবত্ব এসেছে। কেউ বান্ধবীকে দিচ্ছেন স্পা ভাউচার, কেউ আবার প্রেমিকের সঙ্গে একটি সুন্দর সন্ধ্যা কাটানোর জন্য ম্যারিয়টের বুফে স্লট বুক করে রাখছেন আগে থেকেই। কেউ ‘ইনস্টাগ্রাম ফ্রেন্ডলি’ ক্যাফেতে গিয়েই পালন করতে চান প্রেম দিবস। কেউ আবার কোনও বড় হোটেলে একান্তে সময় কাটাতেই বেশি উৎসাহী। তাঁদের কথা মাথায় রেখে তৈরি হচ্ছে রকমারি প্যাকেজ। কোথাও ভ্যালেন্টাইনের জন্য বিশেষ মাসাজ, কোথাও বা প্রিয়তমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য রঙিন বুফে। প্রেম দিবসের উপহার এখন এমন। উপহারের হাত ধরে এ ভাবেই যেন বদলে গিয়েছে ভালবাসার মেজাজ।

Valentine’s Day Gift Ideas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy