Advertisement
E-Paper

থাবা বসাচ্ছে ডায়রিয়া, অবশ্যই জল ফুটিয়ে খান

বর্ষার বদলে বসন্তেই ডায়রিয়ার উপদ্রব। পানীয় জল সংক্রমিত হয়ে পড়েছে কোনও ভাবে। আতঙ্কিত কলকাতার মানুষ। ভয়ে তটস্থ হয়ে অনেকেই বোতলবন্দী জল কিনে খাওয়া শুরু করেছেন। অন্য দিকে পেট খারাপ হলেই মানুষজন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্যে দৌড়চ্ছেন। অযথা আতঙ্কিত না হয়ে রোগ প্রতিরোধ করতে জল ফুটিয়ে পান করার পরামর্শ দিলেন গ্যাসট্রোএন্ট্রোলজিস্ট অভিজিত চৌধুরী। বর্ষার বদলে বসন্তেই ডায়রিয়ার উপদ্রব। পানীয় জল সংক্রমিত হয়ে পড়েছে কোনও ভাবে। আতঙ্কিত কলকাতার মানুষ। ভয়ে তটস্থ হয়ে অনেকেই বোতলবন্দী জল কিনে খাওয়া শুরু করেছেন। অন্য দিকে পেট খারাপ হলেই মানুষজন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্যে দৌড়চ্ছেন।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১২:৫৫
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রশ্ন: বর্ষার জীবাণুরা কি বসন্তেও সক্রিয় থাকে? অসময়েও এই ভাবে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণ কী?

উত্তর: চার্লস ডারউইনের সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট তত্ত্ব মেনে সব জীবাণুরাই এখন বলতে গেলে বছরভর সক্রিয়। নিকাশি জল কোনও ভাবে পানীয় জলে মিশে গিয়েই এই বিপত্তি বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। আর যে জীবাণু নিয়ে এত হইচই সেই ক্যালিফর্ম গ্রুপের ব্যাক্টিরিয়া আমাদের শরীরের মধ্যে চুপচাপ বসে থাকে। তবে জল বা খাবার বাহিত হয়ে শরীরে প্রবেশ করলেই ডায়রিয়া সহ অন্যান্য সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

প্রশ্ন: কী কী উপসর্গ দেখলে বুঝতে হবে ডায়রিয়া মারাত্মক হতে চলেছে?

উত্তর: অসুখ মারাত্মক হয় নিজেদের দোষে। ডায়রিয়ার উপসর্গ শুরু হলেই রোগীকে নিয়ম মাফিক ওআরএস খাওয়ালে অবস্থা গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছনো আটকে দেওয়া যায়। অনেক সময় অবশ্য বাড়িতে না রেখে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়। ব্যাকটেরিয়া ঘটিত ডায়রিয়ার প্রধান উপসর্গগুলো দেখা যায় তার শুরুতে-

হজম ক্ষমতা একেবারেই কমে যায় পেটের মধ্যে নানান শব্দ হয়, গ্যাসের জন্যে অস্বস্তি হয় পেটে ব্যথা ও বমি বমি ভাব খাবার খেতে অনীহা

এরপরেই শুরু হয় আসল লক্ষণ-

বমি একাধিক বার জলের মত পাতলা মলত্যাগ মলের সঙ্গে মিউকাস ( যাকে সাধারণ মানুষ আমাশা বলেন) ও রক্ত থাকতে পারে সামগ্রিক ভাবে রোগী অত্যন্ত অসুস্থ বোধ করেন জ্বর থাকতে পারে শরীরে জল কমে যায় বলে প্রস্রাব কমে যেতে পারে

প্রশ্ন: এরকম হলেই কি ডাক্তারের কাছে যেতে হবে?

উত্তর: ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে রোগীকে ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন দেওয়া দরকার। এমন অবস্থা যেন না হয় ডাক্তারের জন্যে অপেক্ষা করতে করতে রোগীর ডিহাইড্রেশন শুরু হয়ে গেল। তাই বমি আর পাতলা পায়খানা শুরু হলেই ওআরএস খাওয়ানো শুরু করুন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন করা ওআরএস না পেলে বাড়িতে নুন চিনির জল তৈরি করে রোগীকে অল্প অল্প করে বারে বারে দিন। ওআরএস বাড়িতে বানানোর একটা নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। এক লিটার জল ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিন। বা পরিচ্ছন্ন পানীয় জলে চা চামচের আধ চামচ নুন ও ছয় চামচ চিনি ভাল করে গুলে নিন। এই জল বারে বারে রোগীকে দিতে হবে অল্প অল্প করে। ঘন ঘন বাথরুম যাওয়া কিছুটা কমলে তখন প্রয়োজন হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।

আরও পড়ুন: এত কম দামে দিচ্ছে কী ভাবে ‘মিনারেল জল’?

প্রশ্ন: বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও কি তাই?

উত্তর: দেখুন এই ধরনের অ্যাকিউট ডায়রিয়া শিশু ও বয়স্ক মানুষদের জন্য বেশি বিপজ্জনক। বিশেষ করে অপুষ্টিতে ভুগছে এবং ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম এবং বার বার সংক্রমণে ভোগে এই ধরনের শিশুদের ডায়রিয়া হলে বাড়তি যত্ন দরকার। বয়স্কদের জন্যও তাই। বেশি বয়সে এক দিকে শরীরে নানান অসুখ বিসুখ যেমন ডায়াবিটিস, হাই ব্লাড প্রেশার, হার্টের অসুখ, প্রস্টেটের সমস্যা ইত্যাদি থাকে, তার সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। ফলে এই বয়সেও ডায়রিয়া হলে রোগীকে সাবধানে রাখতে হবে।

প্রশ্ন: চিকিৎসা মানেই কি ওআরএস?

উত্তর: প্রাথমিক ভাবে তাই। একটা কথা মনে রাখবেন অ্যাকিউট ডায়রিয়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেলফ লিমিটিং, অর্থাৎ আপনা থেকেই সেরে যায়। কিন্তু ডিহাইড্রেশন হলেই বিপদ। তাই রোগীর রিহাইড্রেশনের দিকে নজর দেওয়া উচিত। তবে ব্যাক্টেরিয়ার কারণে ডায়রিয়া হলে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়, যাতে সংক্রমণ বেড়ে না যায়। এই প্রসঙ্গে আরও একটা কথা মনে রাখা দরকার যে ওভার দ্য কাউন্টার অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাবেন না। এর ফলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই ধরনের ডায়রিয়ায় নরফ্লক্সাসিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। কোন রোগীকে কী ডোজে ওষুধ দেওয়া হবে, তার অন্যান্য শারীরিক অবস্থা কেমন ইত্যাদি কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসক ওষুধ দেন। আর ডায়রিয়া সেরে গেলেই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করবেন না। কোর্স সম্পূর্ণ না করলে ড্রাগ রেসিস্ট্যান্স হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চেষ্টা করুন ডায়রিয়া প্রতিরোধ করার।

আরও পড়ুন: জলের আরও নমুনায় কলিফর্ম

প্রশ্ন: প্রতিরোধ করার উপায় কী?

উত্তর: রোগ ছড়িয়ে পড়ছে জলের মাধ্যমে। তাই পানীয় জল ফুটিয়ে খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। জল ফুটিয়ে ঠান্ডা করে পান করার পাশাপাশি থালা বাসন পরিষ্কার জলে ধুয়ে নিয়ে খাবার খেতে হবে। খাবার চাপা দিয়ে রাখবেন। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকলে মাছির উৎপাত থাকবে না। ডায়রিয়া হলে আতঙ্কিত না হয়ে ওআরএস পানের সঙ্গে সঙ্গে রোগীর সামগ্রিক অবস্থার ওপর খেয়াল রাখুন। অবহেলা করে বিপদ বাড়াবেন না, আর আতঙ্কিত হয়ে গেল গেল রবও তুলবেন না।

নিশ্চিন্তে থাকুন, ভাল থাকুন।

Health Tips Diarrhea Healthy Living
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy