Advertisement
E-Paper

জ্বরে আক্রান্ত ছাত্রের মৃত্যু, সন্দেহ ডেঙ্গি

ডেঙ্গি এবং জলবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের মৃত্যু হল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। রবিবার ভোর রাতে জলপাইগুড়ি শহরের একটি নার্সিংহোমে তিনি মারা যান। নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ছাত্রের নাম রৌনক হালদার (১৮)।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:৫২

ডেঙ্গি এবং জলবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের মৃত্যু হল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। রবিবার ভোর রাতে জলপাইগুড়ি শহরের একটি নার্সিংহোমে তিনি মারা যান। নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ছাত্রের নাম রৌনক হালদার (১৮)। কলকাতার মৌলানা আজাদ কলেজের ইতিহাস অনার্সের প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়া পুজোর ছুটিতে জ্বর নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শিরিষতলার বাড়িতে ফিরে আসেন। শুক্রবার শহরের এক চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁর রক্ত নমুনা পরীক্ষা করা হলে ডেঙ্গি ও টাইফয়েড ধরা পড়ে। শনিবার অবস্থার অবনতি হলে সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রাতে সেখান থেকে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে রৌনক মারা যান।

রৌনকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তে শিরিষতলা সহ শহরের বিভিন্ন মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়েন রৌনকের বাবা করলাভ্যালি চা বাগান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন হালদার এবং মা অঞ্জনা দেবী। তপনবাবু বলেন, “অত্যাধুনিক চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা শহরে নেই। ছেলেকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার মতো সময় পেলাম না। হাসপাতালের চিকিৎসকরা অনেক করেছেন। কিন্তু আরও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজন আছে।” যদিও তপনবাবুর প্রতিবেশীরা সদর হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা বলেন, “আশঙ্কাজনক অবস্থায় ছাত্রটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। যে কারণে চিকিৎসার সুযোগ মেলেনি।” রৌনকের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বুধবার তিনি ফোনে বাবাকে জানান তাঁর জ্বর হয়েছে। তাঁকে বাড়িতে ফিরে আসতে বলা হয়। বৃহস্পতিবার তিনি বাড়িতে আসেন। শুক্রবার শহরের এক চিকিৎসকে দেখান হলে রক্ত নমুনার ‘এনএস-১’ পরীক্ষায় ডেঙ্গি এবং ‘ওয়াইডাল’ পরীক্ষায় জলবাহিত টাইফয়েড সংক্রমণের কথা জানা যায়।

তবে একই সঙ্গে দুটি রোগের সংক্রমণ নিয়ে রবিবারেও স্বাস্থ্যকর্তাদের ধন্দ কাটেনি। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, রক্ত নমুনার এনএস-১ পরীক্ষার ‘পজিটিভ’ ফলাফল দেখে রোগীর ডেঙ্গি হয়েছে এটা জোর দিয়ে বলা যায় না। সন্দেহ করা হয় মাত্র। ওই বিষয়ে নিশ্চিত হতে রক্ত নমুনার ‘ম্যাকএলাইজা’ পরীক্ষা করা হয়। রৌনকের ক্ষেত্রে ওই সুযোগ মেলেনি।

সদর হাসপাতালের সুপার গয়ারাম নস্কর জানান, ওই রোগীকে শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে রাত পৌনে ১১টায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। রৌনকের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিস্থিতি খারাপ দেখে তাঁকে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাত আড়াইটা নাগাদ রৌনক মারা যান। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “ছাত্রটির ডেঙ্গির সম্ভাবনা থাকতে পারে। সাধারণত ডেঙ্গি এবং টাইফয়েড একসঙ্গে হয় না। আবার হতেও পারে। রক্ত নমুনার ম্যাকএলাইজা পরীক্ষার সুযোগ পাওয়া গেলে ওই বিষয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া যেত।”

তবে স্বাস্থ্য কর্তারা যাই দাবি করুন না কেন রৌনকের প্রতিবেশীরা এদিন হাসপাতালের চিকিৎসা পরিকাঠামো নিয়ে বেশি সরব ছিলেন। যেমন, উত্তম মণ্ডল বলেন, “হাসপাতালে ডেঙ্গির পৃথক ইউনিট নেই। চিকিৎসকদের প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায় না। এটা কেন হবে।” একই অভিযোগ অনিরুদ্ধ সাহার। যদিও স্বাস্থ্যকর্তারা চিকিৎসার পরিকাঠামো সংক্রান্ত অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি ডেঙ্গি উপসর্গ নিয়ে এই প্রথম কোনও রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, এমন নয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার জন রোগীর চিকিৎসা হয়েছে। তাঁদের দুজন কোচবিহার জেলার এবং বাকিরা ডুয়ার্সের বাসিন্দা ছিলেন। প্রত্যেকে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন।

হাসপাতাল সুপার বলেন, “এখানে চিকিৎসার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কিন্তু রোগীকে খারাপ অবস্থায় আনা হলে কিছু করার থাকে না।” এ দিন সকালেই রৌনকের দেহ মাসকলাইবাড়ি শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়।

rounak halder jalpaiguri student jalpaiguri student died dengue suspected dengue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy