Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

উত্তরে থাবা জেই-জ্বরের

কোচবিহার জেলায় লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ। নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ এখনও নেই এ রোগের। রোগ প্রতিরোধে টিকাকরণই ভরসা। লিখছেন অনির্বাণ রায়কোচবিহার জেলায় লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ। নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ এখনও নেই এ রোগের। রোগ প্রতিরোধে টিকাকরণই ভরসা। লিখছেন অনির্বাণ রায়

সংক্রমণ: উত্তরবঙ্গে উত্তরোত্তর বাড়ছে জাপানি এনসেফ্যালাটিসের প্রকোপ। সরকারি স্তরে জোর দেওয়া হয়েছে টিকাকরণে। ছবি: নারায়ণ দে

সংক্রমণ: উত্তরবঙ্গে উত্তরোত্তর বাড়ছে জাপানি এনসেফ্যালাটিসের প্রকোপ। সরকারি স্তরে জোর দেওয়া হয়েছে টিকাকরণে। ছবি: নারায়ণ দে

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৫৪
Share: Save:

রোগ সংক্রমণের আশঙ্কায় সব সময় মশার থেকে দূরে থাকা বেশ কঠিনই। কিন্তু জরুরি সেটাই। তাই কারণে গ্রামে গ্রামে গবাদি পশুদের মশারির ভিতর রাখার ব্যবস্থা হোক, এমন মত অনেক বিশেষজ্ঞের। কোচবিহারের একটি গ্রামে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পরে বাড়ির শুয়োরকে মশারির ভিতর রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তা নিয়ে প্রথমে অনেকে হাসাহাসি করলেও এখন বহু এলাকায় গবাদি পশুদের মশারির নীচে রাখতে দেখা যাচ্ছে।

জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে এখনও পর্যন্ত কোচবিচার জেলায় সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। গত দু’বছরে মৃত্যুর সংখ্যা ১৩। বেসরকারি সূত্রে অবশ্য মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি। আক্রান্তের সংখ্যা শতাধিক। সরকারি সমীক্ষাতেই দেখা গিয়েছে, যাঁরা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের অনেকেই টিকা নেননি। গত বছর থেকে টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। কোচবিহারে সেই কর্মসূচি কতটা সুসংহত ভাবে হয়েছে, সে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে এ বছরের রোগ সংক্রমণ। দিনকয়েক আগে জলপাইগুড়িতেও ‘জেই’ তথা জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে মৃত্যুর খবর মিলেছে। সদর হাসপাতালের পিছনে আবাসনে থাকতেন এক যুবক। জ্বর নিয়ে শিলিগুড়ির নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। কয়েকদিন থাকার পরে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। সরকারি ভাবে অবশ্য মৃত্যুর কারণ ‘জেই’ বলে জানানো হয়নি। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যুবকের মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের দাবি, যুবকের ‘জেই’ রোগই হয়েছিল। বাইরের পরীক্ষার রিপোর্টে জানা গিয়েছে।

এই রোগের আঁতুড় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। তথ্য বলছে, প্রতি বছর এশিয়া মহাদেশে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ এ রোগের শিকার হয়ে থাকেন। রোগে মৃত্যুও প্রতি বছরের নিয়তি। উত্তরবঙ্গেও এই রোগ নতুন কোনও ঘটনা নয়। অনেকে বলেন, অসম থেকে এই রোগ নাকি উত্তরবঙ্গে এসেছে। বিষেশজ্ঞদের অন্য অংশের বক্তব্য, রোগ সংক্রমণ এসেছে উত্তর বিহার থেকে। যেখান থেকেই রোগ ঢুকে থাকুক না কেন, দেশে তথা দেশের উত্তর-পূর্বাংশের এই তিন রাজ্যেই ‘জেই’র প্রকোপে সব চেয়ে বেশি। যেখানে যেখানে ধান খেত রয়েছে, সেই সব এলাকায় এই রোগের প্রকোপ বেশি হয়। বর্ষাকালে ধানখেতে মশা ডিম পারে, বংশবিস্তার করে। সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে রোগও ছড়ায়। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক-চিকিৎসক সন্দীপ সাহা বলেন, “এ রোগের নির্দিষ্ট ওষুধ বা চিকিৎসা নেই। প্রতিরোধই বাঁচার একমাত্র উপায় বলা যেতে পারে।”

মূলত কিউলেক্স মশার কামড় থেকে এ রোগের সংক্রমণ বয়। এই মশা ২-৫ কিমি দূরে উড়ে যেতে পারে। মাঠঘাট, জলার কাছেও থাকে। ঘোর বর্ষাতেও এখন চড়া তাপমাত্রা থাকছে উত্তরে। কখনও আবার বৃষ্টি হচ্ছে। সব মিলিয়ে চিকিৎসকদের টিকাকরণ শুরু হওয়ার পরে প্রকোপ অনেকটাই কমেছে। সরকারি স্তরে বিনা খরচে চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE