Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Diarrhoea

শিশুদের ডায়রিয়ার কবল থেকে সুরক্ষিত রাখুন

নাগাড়ে অঝোরে বৃষ্টি সব মলিনতা আর ক্লেদ ধুয়ে মছে সাফ করে দিচ্ছে। কিন্তু সঠিক পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থার অপ্রতুলতা পানীয় জল দূষিত করছে। এর ফলে বানভাসি এলাকায় তো বটেই শহর মফস্বলেও বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রবণতা। অপেক্ষাকৃত দূর্বল শিশুদের জন্যে ডায়রিয়া মারাত্মক হতে পারে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা পল্লব চট্টোপাধ্যায় বাচ্চাদের ডায়রিয়ার মোকাবিলা করার পরামর্শ দিলেন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুয়ায়ী প্রত্যেকদিন ভারতবর্ষের ৩২১ জন পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। অথচ একটু সতর্ক থাকলে এই ভয়ঙ্কর ঘটনার এড়ানো যায়।

প্রত্যেকদিন ভারতবর্ষের ৩২১ জন পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়

প্রত্যেকদিন ভারতবর্ষের ৩২১ জন পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৭ ১৫:৪৯
Share: Save:

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুয়ায়ী প্রত্যেকদিন ভারতবর্ষের ৩২১ জন পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। অথচ একটু সতর্ক থাকলে এই ভয়ঙ্কর ঘটনার এড়ানো যায়।

প্রশ্ন: বাচ্চাদের ডায়রিয়া কখন মারাত্মক হয়?

উত্তর: পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে যাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য খারাপ তাঁদের ডায়রিয়া সহ যে কোনও সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেক বেশি। এ ছাড়া এদের বারে বারে সংক্রমণ হয় বলে পুষ্টির একটা ঘাটতি থেকে যায়। তাই যে কোনও ইনফেকশনই এদের জন্য মারাত্মক হতে পারে। বিশেষ করে যাদের ওজন স্বভাবিকের তুলনায় কম, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বড় হয়, মায়ের স্বাস্থ্য ভাল নয়, তাদেরই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গি জ্বরে অ্যাসপিরিন খেলে বিপদ বাড়বে

প্রশ্ন: আমাদের দেশে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের থেকেও বেশি শিশুর মৃত্যু হয় ডায়রিয়াতে। এর কারণ কী?

উত্তর: অপুষ্টি ও সচেতনতার অভাব শিশুদের রুগ্ন ও দুর্বল থাকার একটা বড় কারণ। আর দুর্বল শিশুদের পেটের ইনফেকশন মারাত্মক হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। ডায়রিয়ার সঙ্গে হাম থাকলে অথবা শ্বাসনালীর সংক্রমণ থাকলে এবং ঠিক সময়ে সুচিকিতসা না হলে বাচ্চার অসুখ মারাত্মক আকার ধারণ করে। এ ছাড়া রোটা ভাইরাস নামক এক ভাইরাল ডায়রিয়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশুমৃত্যুর এক অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সমাজের দুর্বল শ্রেণীর অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের জন্য তো বটেই, মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত পরিবারের শিশুরাও এই ভাইরাল ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু না করলে মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছে যেতে পারে।

প্রশ্ন: বর্ষাকালে কি ভাইরাল ডায়রিয়ার সংক্রমণ বেশি হয়?

উত্তর: এই সময় জলবাহিত ডায়রিয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। রোটা ভাইরাস বা সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ যে কোনও সময়ই হতে পারে। আর এই দু’ ধরনের সংক্রমণ বাচ্চাদের বেশি অসুস্থ করে তোলে। বর্ষাকালে জিয়ার্ডিয়াসিস, অ্যামোবাইসিস, কৃমি ইত্যাদির কারণে পেট খারাপ বেশি হয়। জল ও সামগ্রিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে সমস্যার মোকাবিলা অনেকটাই সহজ হয়। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হলে মারাত্মক ডায়রিয়ায় শিশু মৃত্যুর হার অনেকটাই কমানো যাবে বলে আশা করা যায়। আর অনবরত মলত্যাগের কারণে বাচ্চাদের দ্রুত ডিহাইড্রেশন হয়ে যায়। শরীরে জলের অভাব হলেই বাচ্চা ক্রমশ নেতিয়ে পড়ে। তাই ডায়রিয়া শুরু হলেই বারে বারে ওআরএস খাওয়ানো বাধ্যতামূলক। এই ব্যাপারটা অনেকেরই জানা, তবু জল বা ওআরএস খাওয়ানোর ব্যাপারে অনেক মা বাবাই গড়িমসি করেন, আর তাতেই বাচ্চার অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে থাকে।

প্রশ্ন: ওআরএস খেলেও অনেক সময় বাচ্চা বারে বারে বমি করে। এ ক্ষেত্রে জল খাওয়ানোই তো মুশকিল হয়ে যায়। এই সময় কী করা যেতে পারে?

উত্তর: বমির ওষুধ দিয়ে বমি বন্ধ করার চেষ্টা করতে হবে। সঙ্গে কাছাকাছি কোনও চিকিতসকের কাছে নিয়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় ট্রিটমেন্ট শুরু করা দরকার। হাসপাতালে ভর্তিও করতে হতে পারে।

আরও পড়ুন: সাবধান থাকুন, মারাত্মক হতে পারে ডেঙ্গি হেমারেজিক ফিভার

প্রশ্ন: ওষুধ দিয়ে ডায়রিয়া সারানো যায় না?

উত্তর: ডায়রিয়ার জন্যে ইদানীং জিঙ্ক ট্যাবলেট দেওয়া হয়। এতে ব্যাপারটা চট করে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে এমন কখনওই করা উচিত নয় যে ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ কিনে বাচ্চাকে ইচ্ছা মত খাওয়াবেন। ওআরএস দিয়ে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন। জিঙ্ক ট্যাবলেট খেলে বারে বারে মলত্যাগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে সঠিক মাত্রায় ওষুধ দিতে হবে।

প্রশ্ন: ডায়রিয়ার হাত এড়ানোর জন্য কী কী টিকা দেওয়া জরুরী?

উত্তর: পোলিও আর ডিপিটির সঙ্গে হামের টিকা অবশ্যই দেওয়া দরকার। হাম আর ডায়রিয়া এক সঙ্গে হলে বাচ্চার অবস্থা জটিল হয়ে ওঠে। এ ছাড়া রোটাভাইরাসের টিকা দিয়ে নিলে ভাল হয়। এই টিকা নেওয়া থাকলে রোটা ভাইরাস ডায়রিয়ার কারণে ৮০ শতাংশ মৃত্যু আটকানো সম্ভব। আমাদের দেশের ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন প্রোগ্রামে এই টিকা অন্তর্ভুক্তি করার কথা ভাবা হচ্ছে। পোলিওর টিকার মতো বাধ্যতামূলক করা হলে ডায়রিয়ার কারণে শিশুমৃত্যুর হার অনেকটাই কমানো যাবে।

প্রশ্ন: ডায়রিয়া হলে কী খাবে?

উত্তর: দুগ্ধপোষ্য হলে অবশ্যই মায়ের দুধ খাবে। আর বাচ্চাকে তাঁর স্বভাবিক খাবার দেওয়াই যায়। ভাত, ডাল, ঝোল, মাছ, কলা সব স্বাভাবিক খাবার দিতে পারেন। এই সময় বাইরের দুধ, গমজাত খাবার যেমন রুটি বা বিস্কিট না দিলেই ভাল। ডায়রিয়া হলে বাচ্চা খেতে চায় না বলে অনেক মা খাওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দেন না। কিন্তু না খাওয়ালে শিশু আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন: বিশ্ব স্তন্যদান সপ্তাহ: সদ্যোজাতর একমাত্র পুষ্টিকর খাবার মায়ের দুধ

প্রশ্ন: টিকা ছাড়া ডায়রিয়া প্রতিরোধের উপায় কী কী?

উত্তর: পরিচ্ছন্নতা ও ভাল অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে ডায়রিয়া সহ অনেক ইনফেকশন থেকেই রেহাই পাওয়া যায়। ছয় মাস বয়স পর্যন্ত বাচ্চাকে মায়ের দুধ খাওয়ালে ভাল হয়। জল ফুটিয়ে খাওয়ানো উচিত। বাইরের খাবার একেবারেই দেবেন না। মাছি মশার উপদ্রব থাকলে সমস্যা বাড়ে। একদম ছোট্ট থেকেই শিশুকে শেখাতে হবে মুখে হাত না দেওয়া আর যে কোনও জিনিস মুখে না দেওয়া। খাবার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। তা হলে আর ডায়রিয়ার সমস্যায় ভুগতে হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE